ভাঙচুরের পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স রুম। মঙ্গলবার। — নিজস্ব চিত্র।
রায়গঞ্জ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অধ্যক্ষকে মারধর করার ঘটনা তো ছিলই। এ বার উপাচার্যকেও হেনস্থার অভিযোগ উঠল শাসক দলেরই ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল, রাজারহাটের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানান, দুপুর দু’টো নাগাদ রাজারহাট-নিউ টাউনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উপাচার্য আবু তালেব খানের ঘরে আসেন তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের এক দল ছাত্র। কর্তৃপক্ষ জানান, সোমবার স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষের গণিতের ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষায় সকলকেই শুধু পাশ করিয়ে দেওয়াই নয়, ৬৫ শতাংশ করে নম্বর দিয়ে দেওয়ার দাবি করেন ছাত্রেরা। ছাত্রেরা এ দিন আরও দাবি জানান, আগামী ২৪ জুন গণিতের আরও একটি সাপ্লিমেন্টারি পরীক্ষা রয়েছে যাতে তাঁরা বসবেন না। কিন্তু তাঁদের ৬৫ শতাংশ করে নম্বর দিয়ে দিতে হবে। মঙ্গলবার ফের এই দাবিতেই উপাচার্যের ঘরে আসেন তাঁরা। কিন্তু দাবি মানেননি উপাচার্য। এ নিয়েই বচসা শুরু হয়।
তখন উপাচার্যের ঘরেই ছিলেন আরও কয়েক জন শিক্ষক। পুলিশকে তাঁরা জানান, আচমকাই উপাচার্যের টেবিল চাপড়াতে শুরু করেন বেশ কয়েক জন ছাত্র। পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হতে শুরু করে। এর পরেই ছাত্রেরা উপাচার্যের ঘরে ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ।
উপাচার্য আবু তালেব খান জানান, যখন সিদ্ধান্ত হয় পরীক্ষা না দিলে পাশ করানো হবে না তখন গণিত বিভাগের প্রধান মহম্মদ নঈমকে হেনস্থা করে ছাত্রদের একাংশ। পরে শিক্ষকদের ঘর, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার রুম ও কনফারেন্স রুমেও ভাঙচুর চলে।
যদিও এই সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন ওই ক্যাম্পাসের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল রউফ। তাঁর দাবি, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এই ক্যাম্পাস চালু হলেও ন্যূনতম পরিষেবাগুলিও পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ, শৌচাগার ও ক্যান্টিন পর্যাপ্ত নেই। তাই আগেই কর্তৃপক্ষকে পরিষেবা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। রউফের দাবি, উপাচার্য লিখিত ভাবে জানিয়েছিলেন ২০ জুনের মধ্যে সমস্যা মিটবে। কিন্তু সমাধান না হওয়ায় এ দিন ফের উপাচার্যকে সেই দাবিই জানানো হচ্ছিল।
রউফ বলেন, ‘‘দাবি জানানোর সময়ে কিছুটা বচসা হয়। পরে আমরা বাইরে চলে আসি। পরে টিভিতে দেখি, ল্যাবের দরজার তালা ভেঙে ভাঙচুর হয়েছে। আমরা এ সব করিনি।’’
তাঁদের অভিযোগ, পরিকল্পনা করে কর্তৃপক্ষ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রদের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের আরও অভিযোগ, পরিকাঠামো সংক্রান্ত দাবি জানাতে গিয়ে পরীক্ষা ও প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়। কিন্তু সেই বিষয়টি মিটে গিয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়টি নিয়েই ছাত্রদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে, এ দিন রউফ-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে নিউ টাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
যদিও উপাচার্য আবু তালেব খান বলেন, ‘‘পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করানো সম্ভব নয়। আজ প্রায় জনা ২০ ছাত্র মিলে যে তাণ্ডব চালাল তা লজ্জাজনক। আগে পাটনা ও গুয়াহাটির আইআইটি-তে কাজ করেছি। কিন্তু এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘এই আন্দোলন কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। শুধু আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানো হবে না। পুলিশ ও প্রশাসনকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’
পাশাপাশি উপাচার্যের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে না গিয়ে উপাচার্য মিডিয়ার কাছে কেন মুখ খুললেন? এতে সমাধান না হয়ে জটিলতা বাড়ে। ছাত্রদের নানা দাবি থাকতে পারে। কিন্তু সেই দাবি পূরণ করতে গিয়ে যে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ হল দলের সর্বস্তর থেকে তার নিন্দা করা হচ্ছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, আজকের গণিতের পরীক্ষা স্থগিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy