বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ছাড়া পেলেন না বাঘা যতীনের সেই তরুণী।
বেশ কয়েক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে ছাড়া পেলেন না বাঘা যতীনের সেই তরুণী। অপছন্দের পাত্রের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে মানসিক রোগীর তকমা দিয়ে ওই তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে। সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনা শুরু হয়। কেউ সত্যিই মানসিক সমস্যায় ভুগলে তাঁকে হাসপাতালের বদলে নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাখা কতটা যুক্তিযুক্ত, সেই প্রশ্নও ওঠে। পুলিশ-প্রশাসন কেন তৎপর হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এখনও পর্যন্ত খবর, এ নিয়ে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৎপর হলেও তারা বছর ২৯-এর ওই তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। ওই তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে বাইরে আনতে তাই এ বার আইনি পথে হাঁটার কথা ভাবছেন তাঁর প্রেমিক রঞ্জন নাথ।
রঞ্জনের দাবি, বহু দিন থেকেই মা-মেয়ের বনিবনা ছিল না। তাই ওই তরুণী কিছু দিন তাঁর সঙ্গে থাকছিলেন। পুজোর আগে, গত ৭ অক্টোবর দিনকয়েকের জন্য বাড়ি গেলে ৯ অক্টোবর রাত থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তরুণী। পুলিশের কাছে গেলে রঞ্জন জানতে পারেন, নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে ওই তরুণীকে। রঞ্জনের দাবি, তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনে অভিযোগ জানিয়েছেন। তরুণীর মায়ের আইনজীবীর অবশ্য দাবি, কিছু দিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তরুণী। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু ওষুধ খেতে চাইছিলেন না বলে তাঁকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।
কিন্তু এর আগেও একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় এমন নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাফিলতির অভিযোগ বার বার সামনে এসেছে। জোর করে আটকে রেখে মারধর করা, খেতে না দেওয়া, যাঁকে ভর্তি করানো হল তাঁর সম্পর্কে পরিবারকে কোনও তথ্য না জানানো, এমনকি খুনের অভিযোগও উঠেছে। তদন্তে জানা যায়, শহর ও শহরতলিতে এমন বহু নেশামুক্তি কেন্দ্র ও বৃদ্ধাবাস লাইসেন্স ছাড়াই গজিয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ‘সোসাইটি অ্যাক্ট, ১৯৬১’-র জোরেই ব্যবসা চলছে তাদের।
সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, নেশামুক্তি কেন্দ্রের অনুমতি দেন না তাঁরা। ‘সোসাইটি অ্যাক্ট, ১৯৬১’-র ভিত্তিতে এমন কেন্দ্র চালানোও যায় না। মানসিক সমস্যায় ভোগা রোগীদের রাখতে হলে প্রয়োজন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মেন্টাল হেলথ লাইসেন্স। সে ক্ষেত্রেও নেশাগ্রস্তদের আলাদা রাখা বাধ্যতামূলক। ১৪ ফুট বাই ১২ ফুটের ঘরে সর্বাধিক তিন জনকে রাখার নিয়ম। ভবনের জন্য দমকলের ছাড়পত্র এবং ফুড লাইসেন্স থাকা আবশ্যিক। সর্বক্ষণের জন্য এক জন চিকিৎসক ও দু’জন নার্স রাখাও বাধ্যতামূলক। থাকতে হবে সিসি ক্যামেরার নজরদারিও।
যদিও খোঁজ করে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীকে নরেন্দ্রপুরের যে নেশামুক্তি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, সেখানে বহু নিয়মই মানা হয় না। ওই কেন্দ্রের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর সিমন বেদই বলেন, ‘‘সে ভাবে লিখিত নিয়মের কথা জানি না। তা ছাড়া, ওই তরুণী স্বল্প মাত্রায় মানসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে আমরা ওঁকে রেখেছি। নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়াও কিন্তু এক ধরনের স্বল্প মাত্রার মানসিক সমস্যা। ফলে যে কোনও নেশামুক্তি কেন্দ্রই এমন রোগীকে রাখতে পারে।’’ কিন্তু তরুণীর মা নিজেই যে জানিয়েছেন, মেয়ে নেশা করতেন না? কেন্দ্রের তরফে উত্তর মেলেনি। রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য স্পষ্ট জানান, এমন কাজ পুরোপুরি বেআইনি। দ্রুত ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের নথিপত্র পরীক্ষা করতে লোক পাঠানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy