কলকাতা শহরে হকার নিয়ন্ত্রণে পুরসভার উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল টাউন ভেন্ডিং কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির এক সদস্যই গোটা ফুটপাত দখল করে খাবারের হোটেল চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে!
টাউন ভেন্ডিং কমিটির মোট ১৮ জন সদস্যের মধ্যে আট জন হকারদের প্রতিনিধি। এ ছাড়া, কলকাতা পুরসভা, কলকাতা পুলিশ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। শহরে হকারদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে ওই কমিটির সদস্যদেরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু এক সদস্য গোটা ফুটপাত দখল করে খাবারের হোটেল চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওঠায় ওই কমিটির ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ ও প্রিন্সেপ স্ট্রিটের মোড়ে, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে প্রিন্সেপ স্ট্রিটের দিকে যেতেই ডান দিকে ফুটপাতের প্রায় ৩০ ফুট লম্বা অংশ জুড়ে একটি বিশাল খাবারের হোটেল চলছে। ওই হোটেলের মালিক পুরসভার টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য। তাঁর নাম ভারত সাউ। তিনি আবার মধ্য কলকাতা ইউনাইটেড হকার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। নিয়ম অনুযায়ী, হকারদের বসার কথা ফুটপাতের দুই-তৃতীয়াংশ ছেড়ে। কিন্তু অভিযোগ, ভারত পুরো ফুটপাত দখল করে হোটেল চালাচ্ছেন। যার জেরে ফুটপাতের ওই অংশে কেউ হাঁটাচলা করতে পারেন না। মূল রাস্তায় নেমে চলাফেরা করতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনায় আশঙ্কা বেড়ে যায়।
সিটু পরিচালিত কলকাতা স্ট্রিট হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গোপাল দাসের অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশাবলী অনুযায়ী টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি হলেও পুরসভা কেন্দ্রের নির্দেশ মানছে না। নিয়ম অনুযায়ী, ওই কমিটিতে সমস্ত রাজনৈতিক দলের হকার প্রতিনিধিদের থাকার কথা। কিন্তু আমাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। ফল যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্যই যদি নিয়ম না মানেন, তা হলে শহরের অন্য হকারেরা তো তাঁকেই অনুসরণ করবেন। আসলে টাউন ভেন্ডিং কমিটি পুরসভার খাতায়-কলমেই রয়েছে। বাস্তবে শহরের ফুটপাত জুড়ে হকারদের দৌরাত্ম্য দেখলেই বোঝা যায়, ফুটপাত বলে আর কিছু নেই।’’
বেআইনি ভাবে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রসঙ্গে ভারতের সাফাই, ‘‘অনেক নেতাই তো ফুটপাতে ডালা দখল করে ব্যবসা করছেন।’’ তাঁকে বলা হয়, আপনি নিজে হকার নেতা। আপনার বিরুদ্ধেও তো ফুটপাত দখল করে ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে। উত্তরে ভারত বলেন, ‘‘ওই ফুটপাতে তো আমি একা ব্যবসা চালাই না। আট জন মিলে চালাই।’’
তার মানে অন্য হকারেরা বেআইনি ভাবে ব্যবসা করলে টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্যও তা-ই করবেন? এই প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন ভারত। হকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য
শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘‘ফুটপাত পুরো দখল করে ব্যবসা করাটা আমরা কোনও ভাবেই সমর্থন করি না।’’ হকার সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দেবাশিস দাসের কথায়, ‘‘ফুটপাতের পুরোটা দখল করে ব্যবসা করাটা পুরোপুরি বেআইনি।’’
পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমারের দাবি, ‘‘ভারত সাউ তো তিরিশ বছর ধরে ওখানে ব্যবসা করছেন।’’ তার মানে ভারত ফুটপাতের পুরোটা দখল করে ব্যবসা করলেও কি পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেবে না? উত্তরে মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে টাউন ভেন্ডিং কমিটিতে আলোচনা হতেই পারে। কেউ অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা নেব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)