দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট এলাকা থেকে বাংলাদেশি গ্রেফতার হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। ভূয়ো আধার কার্ড তৈরি থেকে শুরু করে যে ভাবে একের পর এক জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে গত কয়েক বছর ধরে কলকাতায় বাস করছিল বাংলাদেশের বাসিন্দা আজ়াদ শেখ, তাতে ঘোর দুশ্চিন্তায় পরিবহণ দফতর। কারণ, যে কোনও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ক্ষেত্রে পরিবহণ দফতরে যে সব নথি জমা পড়ে তার সত্যতা যাচাই করার কোনও সুযোগ বা প্রযুক্তি পরিবহণ দফতরের কাছে নেই। আগামী দিনে কী ভাবে ভুয়ো নথি দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির প্রবণতা আটকানো হবে, তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
আরও পড়ুন:
এ বিষয়ে লাইসেন্স বিভাগের আধিকারিকদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে কী ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। লাইসেন্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হওয়ার। কারণ, দফতরের তরফে কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তা মন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে যে হেতু বিষয়টি দেশ তথা রাজ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সঙ্গে যুক্ত তাই পরিবহণ দফতর এই বিষয়ে কোন ঝুঁকি নিতে নারাজ।” প্রসঙ্গত, গত অগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এমতাবস্থায় ভারতের বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করা বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকেও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে বলেই মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। তা ছাড়া কোনও অনুপ্রবেশকারী সহজেই যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স না পেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় পরিবহণ দফতর।
সম্প্রতি কালীঘাট থেকে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রায় দু’বছর ধরে বৈধ পাসপোর্ট কিংবা ভিসা ছাড়াই ভারতে থাকছিলেন তিনি। একটি পথ দুর্ঘটনাই পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় ওই অনুপ্রবেশকারীকে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ১৮ মে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আজ়দ শেখ নামের ওই অনুপ্রবেশকারী কলকাতার সদানন্দ রোডে গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারে নেতাজিনগর থানার এএসআই সুষেণ দাসকে। ঘটনায় অভিযুক্ত আজ়াদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছিল, বছর একচল্লিশের ওই ব্যক্তি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাসিন্দা। কিন্তু তাঁর কিছু নথি খতিয়ে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। দেখা যায় অধিকাংশ নথিই জাল। পুলিশের কাছে দেওয়া বয়ানেও মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে যে, ওই ব্যক্তি আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। কলকাতা থেকে কী ভাবে সহজেই গাড়ি চালানোর কাজ জোগাড় করেছিল ওই অনুপ্রবেশকারী, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।