Advertisement
E-Paper

অভিনয় শেখানোর নামে ‘ধর্ষণ’, পরিচালকের বিরুদ্ধে তরুণীর অভিযোগ ভাইরাল ফেসবুকে

তরুণীর অভিযোগ, অভিনয় শেখানোর নামে প্রথমে তাঁর শ্লীলতাহানি এবং পরে ধর্ষণ করেন সুদীপ্ত। এবং সেই অবস্থায় তাঁকে জোরে, আরও জোরে সংলাপ বলতে বলেন সুদীপ্ত। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ওই মঞ্চাভিনেত্রী। যদিও ওই পোস্ট সর্বৈব তথ্যবিকৃতি বলে দাবি সুদীপ্তর।

অর্পিতা রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:২৩
এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে। অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস

অভিনয়ের ভুল সংশোধনের নামে তাঁকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে। নাট্যব্যক্তিত্ব তথা প্রাক্তন অধ্যাপক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এই গুরুতর অভিযোগ আনলেন তাঁরই এক ছাত্রী। সুদীপ্তর নাটকের দল ‘স্পেক্ট্যাক্টরস’-এ নিয়মিত অভিনয় করতেন ওই তরুণী। বুধবার রাতে ‘গোটা ঘটনা’র সবিস্তার বিবরণ ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ওই তরুণী। ইতিমধ্যেই হাজারেরও বেশি বার শেয়ার হয়েছে তাঁর পোস্ট। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘মিডিয়া সায়েন্স’-এর ‘পারফরম্যান্স অ্যান্ড মিডিয়া’ বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন সুদীপ্ত। তাঁর বাড়িতেই হত দলের যাবতীয় রিহার্সাল। তরুণীর অভিযোগ, তাঁকে সুদীপ্ত ডেকেছিলেন মহড়ার নামেই। কিন্তু সে সময় দলের অন্য কোনও সদস্য সেখানে ছিলেন না। এমনকি, বাড়িতে ছিলেন না সুদীপ্তর স্ত্রী-ও। তরুণী বাড়িতে পৌঁছনোর পরে কোনও কাজে তিনি বেরিয়ে যান। বাড়িতে ছিলেন সুদীপ্ত এবং পরিচারক। সে রকম একটি পরিস্থিতিতেই সুদীপ্ত শুরু করেন ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’। তরুণীর অভিযোগ, অভিনয় শেখানোর নামে প্রথমে তাঁর শ্লীলতাহানি এবং পরে ধর্ষণ করেন সুদীপ্ত। এবং সেই অবস্থায় তাঁকে জোরে, আরও জোরে সংলাপ বলতে বলেন সুদীপ্ত। ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ওই মঞ্চাভিনেত্রী।

যদিও ওই পোস্ট সর্বৈব তথ্যবিকৃতি বলে দাবি সুদীপ্তর। এই নাট্যব্যক্তিত্বের বক্তব্য, স্টেজ শো হওয়ার পরে তাঁর মনে হয়, নামভূমিকায় অভিনয়কারী ওই তরুণীর অভিনয়ে খামতি ছিল। তাই ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ প্রয়োজন অভিনয় তথা থিয়েটারের স্বার্থেই। এবং তিনি নন, ওই তরুণীই তাঁর কাছে অনুরোধ করেছিলেন ত্রুটি সংশোধনের, দাবি সুদীপ্তর। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ওই ছাত্রীকে তিনি ধর্ষণ করেননি। বরং, ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ বা ডায়াফ্রাম ব্রিদিং এক্সারসাইজ-এর অনুশীলনীর অংশ হিসেবে যেটুকু আংশিক নগ্নতা বা পার্শিয়াল নুডিটি এসেছে, শরীরী স্পর্শ হয়েছে, তা সম্পূর্ণটাই ঘটেছে তরুণীর সম্মতিক্রমে। সেখানে সুদীপ্তর তরফে যৌনতা বা অশালীনতার কোনও চিহ্নই ছিল না। তিনি ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক করাবেন, এটা জেনেই তরুণী তাঁর বাড়িতে সে দিন এসেছিলেন, দাবি সুদীপ্তর। এমনকি, ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’ কী, সে বিষয়েও তিনি তরুণীকে আগেই বিশদে জানিয়েওছিলেন।

অভিযোগকারিণীর সেই ফেসবুক পোস্ট।

সুদীপ্তবাবুর অভিমত, অভিনয় প্রশিক্ষণের অন্যতম অঙ্গ ‘ডায়াফ্রাম ব্রিদিং টেকনিক’। তিনি নিজেও এ ভাবে অভিনয় শিখেছেন। তাঁর সমসাময়িক আর কেউ এই পদ্ধতি অনুসরণ করেন কি না, তিনি জানেন না। কিন্তু তিনি মনে করেন এই পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর। কারণ, এর ফলে স্বরক্ষেপণ নিখুঁত হয়। বিদেশে থাকাকালীন তিনি এই পদ্ধতি বহু ক্ষেত্রেই প্রয়োগ হতে দেখেছেন। সেখানে ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় বলে তাঁর দাবি। তিনি নিজেও ছাত্র এবং ছাত্রী, উভয় ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন বলে জানান। তাঁর দাবি, প্রতি ক্ষেত্রেই তিনি সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীর অনুমতি নিয়েই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। তাঁরা যত দূর পর্যন্ত সহজ ভাবে নিতে পেরেছেন তত দূরই পদ্ধতি চলেছে, তারপর তা বন্ধ করা হয়েছে। অভিযোগকারিণীর ক্ষেত্রেও এই রীতি এক চুলও এ দিক-ও দিক হয়নি বলে তাঁর দাবি। সুদীপ্তর কথায়: ‘‘আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় আমি হতবাক। কারণ, অনেক দিন ধরে প্রয়োজনে এই পদ্ধতি অনুসরণ করলেও এই প্রথম আমার বিরুদ্ধে কেউ এ ধরনের বিকৃত ও মিথ্যা অভিযোগ আনলেন।’’

কেন এই বিশেষ অনুশীলন প্রয়োজন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তবে, অভিযোগকারিণীর অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। তাঁর দাবি, তিনি একা নন। আরও অনেকেই সুদীপ্তর উপর এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁরা সম্মিলিত ভাবে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাবেন। কিন্তু কবে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হবেন, সে নিয়ে এই মুহূর্তে মুখ খুলতে নারাজ তিনি।

কিন্তু এত দিন কেন চুপ করে ছিলেন তিনি? তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। এক বার নয়, দু’বার। ওই তরুণীর কথায়: ‘‘প্রথম বার আমি সহ্য করেছি। দ্বিতীয় বার প্রতিরোধ করি। তার পরেও আমি ওই দলে কাজ করে গিয়েছি থিয়েটারের স্বার্থেই।’’ দলে থেকে সুদীপ্তকে এড়িয়ে গিয়ে কাজ করতে তাঁর যথেষ্ট সমস্যা হচ্ছিল বলে তাঁর দাবি। হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতে গিয়েছিলেন সুদীপ্তর সঙ্গে। কিন্তু সেখানেও তাঁকে ব্লক করে দেওয়া হয় বলে দাবি তরুণীর। দলের অন্য সদস্যদের তিনি নিজের ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুদীপ্তর প্রভাব-প্রতিপত্তির ভয়ে সবাই মুখ বন্ধ করে ছিলেন বলে দাবি অভিনেত্রীর। শেষে তিনি ওই দল ছেড়ে অন্য নাটকের দলে যোগ দেন।

আরও পড়ুন: গাড়ির মধ্যে বুলেট, তরুণের কনুই ও ঘাড়ে ফুটো, অথচ পুলিশ বলল, মৃত্যু হয়েছে গাড়ি দুর্ঘটনায়!

কিন্তু ফেসবুকে পোস্ট করতেই প্রায় এক বছর বিলম্ব কেন? তরুণীর কথায়, তিনি নিজেও সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারছিলেন না। তাঁর দাবি, সুদীপ্তর স্ত্রীও তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছিলেন। কারণ, তিনি মুখ খুললে তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ব্যাহত হত। স্বামীর এই ‘বিশেষ প্রশিক্ষণ’-এর কথা তিনি প্রথম থেকেই জানতেন বলে দাবি ওই অভিনেত্রীর। অভিযুক্ত সুদীপ্তও বলেন, তাঁর স্ত্রী এ বিষয়ে জানতেন। আনন্দবাজার ডিজিটাল-এর তরফে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চাওয়া হয়। কিন্তু সুদীপ্ত বলেন, তিনি অনুমতি না নিয়ে স্ত্রীর ফোন নম্বর দেবেন না।

আরও পড়ুন: নোবেলজয়ীর মায়ের সঙ্গে কথা মমতার

নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য যা যা করণীয় তিনি করবেন বলে জানান সুদীপ্ত। তাঁর কথায়: ‘‘পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার আগেই আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সামাজিক ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়েছে।’’ অধ্যাপনার চাকরিতেও ইস্তফা দিতে হয়েছে তাঁকে। নিজের ফেসবুক পেজে ওই তরুণী জানিয়েছেন, গত সোমবার, ১৪ অক্টোবর তিনি সুদীপ্তর কর্মস্থলে গিয়ে অভিযোগ জানান। সুদীপ্তও এ দিন বলেন, ‘‘মঙ্গলবার ওখানে আমাকে ডেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়। আমি ইস্তফা দিয়েও দিয়েছি।’’

আরও পড়ুন : টালা সেতু ভাঙলে জলেও টান পড়ার শঙ্কা

তাঁর আরও কঠোর শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন অভিযোগকারী ওই অভিনেত্রী। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, তিনি সুদীপ্তর প্রথম ‘শিকার’ নন। কিন্তু আর কেউ যাতে এই পরিস্থিতির ‘শিকার’ না হন, সে জন্য সুদীপ্তকে থামানো প্রয়োজন। এর পাল্টা কোনও পোস্ট কি দেবেন সুদীপ্ত? উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, কিছু দিন আগেই তিনি তাঁর ফেসবুক প্রোফাইল ‘ডিঅ্যাক্টিভেট’ করে দিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে তরুণীর অভিযোগের কোনও সম্পর্ক নেই বলে তাঁর দাবি।

Bengali Theatre Sudipto Chatterjee Rape Diaphragmatic Breathing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy