Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Health

পা-কিডনি কেড়েছে ক্যানসার, তবুও ওরা জয়ী

শনিবার সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আয়োজিত ‘লাইফ বিয়ন্ড ক্যানসার’ অনুষ্ঠানে বড়দের কাছে ওই খুদেদের বলার ছিল, ‘আমরাও পারি’।

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রীতি কুইরা। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠানে অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায় এবং প্রীতি কুইরা। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share: Save:

জটিল রোগ একরত্তি মেয়ের ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে পারেনি। পুরুলিয়ার পুকুরগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রীতি কুইরার একটি পা ক্যানসার কেড়ে নিয়েছে ঠিকই। তবে অন্য পায়ের জাদুতে কী ভাবে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতে হয় তাও সে সকলকে শিখিয়েছে।

শ্রীরামপুরের খুদে অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায়ের যখন রক্তের ক্যানসার ধরা পড়ে তখন তার চার বছর বয়স। প্রতি বছর ক্যানসার মুক্ত শিশুদের নিয়ে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়। পনেরোটিরও বেশি দেশ তাতে যোগ দেয়। এ বছর রাশিয়ার মস্কোয় সেই প্রতিযোগিতায় টেবিল টেনিসে সোনা জিতেছে অরণ্যতেশ। রাইফেল শুটিং এবং দাবায় চতুর্থ হয়েছিল সে। শিশুযোদ্ধার কথায়, ‘‘ক্যানসার ইজ নট এ বেরিয়ার। ইট মেকস ওয়ান অ্যা ওয়ারিয়র!’’

এ রাজ্যে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের প্রতিনিধি প্রীতি, অরণ্যতেশরা। শনিবার সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আয়োজিত ‘লাইফ বিয়ন্ড ক্যানসার’ অনুষ্ঠানে বড়দের কাছে ওই খুদেদের বলার ছিল, ‘আমরাও পারি’।

প্রীতির মা শান্তময়ী কুইরা জানান, দু’বছর আগে মেয়ের বাঁ পায়ের ভুল চিকিৎসা হয়। এর পরেই ধরা পড়ে ক্যানসার। কলকাতার ঠাকুরপুকুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকেরা জানান, পা কেটে বাদ দিতে হবে। মায়ের কথায়, ‘‘অসুস্থতার সময়ে ইউ টিউবে নাচ দেখে এক পায়েই অভ্যাস করত। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে প্রথম জন্মদিনে বলল, মা আগে নাচ করব। তার পরে কেক কাটব।’’

আরও পড়ুন: ‘শিল্পী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপকরা মুখ ফেরাচ্ছেন বিজেপি থেকে’, আড্ডায় একমত তিন নন্দী

ঘরের আঙিনা ছেড়ে সেই মেয়েই রোটারি সদনের অনুষ্ঠান মঞ্চে সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখল। নাচের তালের প্রতি মুহূর্তে করতালি দিয়ে প্রীতির প্রতিভাকে স্বাগত জানিয়েছে সভাগৃহ। অরণ্যতেশের মুখে ক্যানসারের বিরুদ্ধে স্লোগান শুনে উচ্ছ্বসিত দর্শকাসনে বসা আট থেকে আশি। শিশুশিল্পী প্রিয়ম গাইনের বেলুন ওড়ানো হৃদয় স্পর্শ করল সকলের। কল্যাণীর বাসিন্দা দু’বছরের শিশুটির ক্যানসারে একটি কিডনি বাদ দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন: খাস ধর্মতলায় ২০০ বছর ধরে রহস্য আর যন্ত্রণা বুকে নিয়ে রয়ে গিয়েছে এই ‘গুমঘর লেন’

রাজারহাটের টাটা ক্যানসার হাসপাতালে এখন কর্মরত তিথি আইচ এবং পরাগ দাসের এক সময়ে পরিচয় ছিল, ক্যানসার আক্রান্ত হিসেবে। অনুষ্ঠানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্রে তিথি জানান, রোগ সারার পরেও অনেকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘কেউ দয়ার দৃষ্টিতে দেখুন এমন চাইনি। যা অর্জন করেছি নিজেদের যোগ্যতায়। মানুষ কবে সচেতন হবেন?’’ এই রোগ সম্পর্কে গ্রামে কী ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে তা তুলে ধরেন তথ্যচিত্রের বাকি চরিত্রেরা।

রোটারির ক্যানসার প্রিভেনশন কমিটির চেয়ারম্যান পার্থসারথি সরকার জানান, গ্রামে ক্যানসার সম্পর্কে অহেতুক ভীতি রয়েছে। ঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে ক্যানসার যে নিরাময়যোগ্য অনেকের সেই ধারণা নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘৭০ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খায় ৩-৪ শতাংশ। অধিকাংশ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পরে তাদের পরিবার আর হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না।’’ এ জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি প্রয়োজন মনে করেন তিনি।

সচেতনতার উপরে জোর দিয়ে এনআরএসের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের প্রধান শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘শুধু শিশুরা নয়, বড়রাও অনেকেই ভাল হয়ে গেলে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে অনিচ্ছুক হয়ে যান। সরকারি পরিকাঠামোয় প্রচার হলে

সচেতনতা বাড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE