Advertisement
E-Paper

সিঁথি থানায় হেফাজতে মৃত্যু আগেও

সাম্প্রতিক কালের একাধিক ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের বড় অংশ থেকে প্রাক্তন পুলিশকর্তারা।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৫৫
স্বামী স্নেহময় দে-র ছবির সামনে শিপ্রা। মঙ্গলবার, দমদমে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

স্বামী স্নেহময় দে-র ছবির সামনে শিপ্রা। মঙ্গলবার, দমদমে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

পুলিশি জেরা চলাকালীন মৃত্যুর ঘটনা সিঁথি থানায় এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিও পুলিশের বিরুদ্ধে স্বামীকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুলেছিলেন এক প্রৌঢ়ের স্ত্রী। শিপ্রা দে নামে ওই মহিলা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বিচারের আশায় এবং আমার স্বামীর সঙ্গে যা হয়েছিল, তা যাতে আর কারও সঙ্গে না হয়, তার জন্যই আদালতে লড়াই চালাচ্ছি। কিন্তু পুলিশের চরিত্র যে পাল্টায়নি, ফের তা প্রমাণিত হল। পুলিশ আসলে পুলিশের জায়গাতেই রয়েছে।’’

সাম্প্রতিক কালের একাধিক ঘটনায় কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের বড় অংশ থেকে প্রাক্তন পুলিশকর্তারা। সোমবারই সিঁথি থানায় জেরা চলাকালীন রাজকুমার সাউ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, মারধরের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তার জেরেই মৃত্যু। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘খেটে তদন্ত করার বদলে সহজ পথে রহস্য সমাধান করতে গিয়েই এমন মারধরের রাস্তা নিচ্ছে পুলিশ। এটা তো হতে পারে না। মারধর করে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেন পুলিশের জন্মগত অধিকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, একই ভাবে ২০১৫ সালে বড়তলা থানায় বন্দি থাকা ভূষণ দেশমুখ নামে এক ব্যক্তিরও মৃত্যু হয়েছিল রহস্যজনক ভাবে। সেই সময়ে সোনাগাছিতে একটি গুলি চলার ঘটনায় বেশ কয়েক জনের সঙ্গে সিঁথি এলাকার এক দোকানে‌র কর্মী, আদতে মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশি হেফাজতে থাকা ভূষণকে যে তারিখে আদালতে পেশ করার কথা ছিল, তার দিন চারেক আগেই রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। বলা হয়েছিল, পেটের গোলমালের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ভূষণ। তার জেরেই মৃত্যু। কিন্তু ময়না-তদন্তে পাওয়া যায়, মৃত্যুর কারণ পুলিশি হেফাজতে ‘মারধর’। আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল বললেন, ‘‘অভিযোগ সত্যি হলে এমন তো হওয়ারই কথা নয়। সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে এ ব্যাপারে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, পুলিশও আইন মেনে কাজ করতে বাধ্য।’’

দমদমের কালীচরণ শেঠ লেনের বাসিন্দা স্নেহময় দে-র বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক মহিলা সিঁথি থানায় যৌন নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেন বলে পুলিশের দাবি। ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তকে থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ। সে দিন সন্ধ্যাতেই স্নেহময় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে তাঁর পরিবারকে জানানো হয়। তাঁর স্ত্রীর দাবি, ‘‘মৃত অবস্থাতেই থানা থেকে বার করে আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ।’’ স্নেহময়ের ভাই পিন্টু দে এ দিন দাবি করেন, ‘‘দাদাকে থানায় ঢুকিয়ে মারধর করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে দাদা হৃদ্‌রোগে ভুগছিল। সে কথা জানার পরেও মহিলা পুলিশকর্মী নানা ভাবে চাপ দিচ্ছিলেন। পুলিশের ওই অত্যাচার দাদা নিতে পারেনি।’’

শিয়ালদহ আদালতে এ নিয়ে শুনানি চললেও এর পরেই পুলিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন স্নেহময়ের স্ত্রী শিপ্রাদেবী। তাঁর পক্ষের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘বিচারক থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চেয়েছিলেন। পুলিশ তাতেও কাটছাঁট করেছে। দেখানোর চেষ্টা হয়েছে, একটি প্রশ্ন শুনেই ভদ্রলোক পড়ে গিয়ে মারা গেলেন। সেটা কতটা সত্যি, আদালত বিচার করবে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার অভাব ঢাকতেই যে

পুলিশ এই সমস্ত করছে, এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।’’

গত তিন বছরে সিঁথি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকের বদল হয়েছে। ২০১৭ সালের ওই সময়ে থানার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। ২০১৭ সালের ওই ঘটনা সম্পর্কে অবশ্য কলকাতা পুলিশের কোনও কর্তাও এ দিন কিছু বলেননি।

Sinthi Police Station Death Inmate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy