আলো-আঁধারি: রাতে এমনই অবস্থা থাকে ই এম বাইপাসে অম্বেডকর সেতুর। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
চলন্ত বাসে মহিলাকে নাগাড়ে কটূক্তি করছিলেন তিন যুবক। প্রতিবাদ করতে গেলে তাঁদের হাতে প্রহৃত হয় এক কিশোর। কিশোরকে মারতে দেখে আরও দুই যুবক এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করেন। চিৎকার করতে শুরু করেন মহিলাও। অবস্থা বেগতিক দেখে শেষে বাস থামান চালক। প্রগতি ময়দান থানা এলাকার অম্বেডকর সেতুর কাছে ই এম বাইপাসে তিন যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় মালঞ্চ-হাওড়াগামী সরকারি বাসে মিনাখাঁর পদ্মপুকুর থেকে উঠেছিলেন বছর বত্রিশের ওই মহিলা। মিনাখাঁর বাসিন্দা ওই মহিলা সায়েন্স সিটির কাছে দিদির বাড়িতে আসছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ওই মহিলা চালকের পিছনের আসনে বসেছিলেন। মহিলা বাসে ওঠার আগেই দেখেন, ইঞ্জিনের উপরে দুই যুবক বসে। ওই মহিলার পাশেই বসে থাকা আর এক যুবক ইঞ্জিনের উপরে বসে থাকা দুই যুবকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, বাসটি কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকা ছাড়াতেই তিন যুবক তাঁকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তি শুরু করতে থাকেন। ওই মহিলার কথায়, ‘‘আমি একা ছিলাম। প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, কোনও প্রতিবাদ না করেই কোনও ভাবে সায়েন্স সিটিতে বাস থেকে নেমে যাব।’’
কিন্তু পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে কিছু ক্ষণে। তাঁর অভিযোগ, বেশ কিছু ক্ষণ ধরে অশ্লীল কথাবার্তা বলার পরে মহিলার মোবাইল নম্বর চান যুবকেরা। তখন তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন। এর পরেই মহিলার পিছনের আসনে বসে থাকা এক কিশোর ঘটনাটির প্রতিবাদ করে। বাসটি তখন কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানা এলাকা ছাড়িয়ে অম্বেডকর সেতুর কাছাকাছি পৌঁছেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোর প্রতিবাদ করতেই তিন যুবক তার দিকে তেড়ে যান। চলন্ত বাসেই তাকে মারধর করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরকে প্রহৃত হতে দেখে চিৎকার শুরু করেন মহিলা। পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে আসেন বাসে বসা আরও দুই যুবক। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিতে বাসের একটি জানালার কাচ ভেঙে যায়। অম্বেডকর সেতুর কাছে তখন পুলিশ টহল দিচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই সরকারি বাসের চালক পুলিশের কাছাকাছি গিয়ে বাসটি থামিয়ে দেন। এর পরেই অভিযুক্ত তিন যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে তিন যুবককে শনিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম শেখ আফতাব, মোজাস্সির আলম এবং মহম্মদ ফারুক। তাঁদের বাড়ি তপসিয়া। ধৃতদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, মারধর ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, অম্বেডকর সেতুর কাছে যখন অভিযুক্তদের তুলে দেওয়া হয়, তখন বাজে রাত আটটা। ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বাসের সব আসন তখন ভর্তি ছিল। বেশ কিছু যাত্রী পিছনের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই যুবকদের আচরণে অসুবিধে হলেও তিনি অন্য আসনে সরে যেতে পারেননি। মিনাখাঁ থানা এলাকায় সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে কিশোরী মেয়েকে নিয়ে সংসার ওই মহিলার। স্বামী তাঁদের সঙ্গে থাকেন না। পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত সোনারপুরের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। শনিবার রাতের ঘটনায় যথেষ্ট আতঙ্কে রয়েছেন ওই মহিলা। রবিবার তিনি বললেন, ‘‘আমি প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। চলন্ত বাসের মধ্যে তিন যুবক মিলে আমাকে উত্ত্যক্ত করলেও ভয়ে কিছু বলছিলাম না। কোনও দিকে না তাকিয়ে চুপ করে বসেছিলাম। এক কিশোর এগিয়ে আসায় আমিও সাহস পাই। তত ক্ষণে আরও দুই যুবক আমার পাশে এসে দাঁড়ান।’’ কিন্তু অভিযোগকারিণী জানান, ওই কিশোর-সহ তিন জন প্রথমে প্রতিবাদ করলেও অম্বেডকর সেতুর কাছে বাসটি থামা মাত্রই ঘটনাস্থল থেকে চলে যান তাঁরা সকলে। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ওঁদের প্রতিবাদের জন্যই আমি তিন জনকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারলাম। অথচ পুলিশকে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে ওঁদের আর পাওয়া গেল না। ওঁরা পাশে থাকা জরুরি ছিল।’’ তবে শনিবার রাতের ঘটনায় সরকারি বাসের চালক, কন্ডাক্টরের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন অভিযোগকারিণী। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা পুলিশের কাছে গিয়ে বাস থামিয়ে দেওয়ায় খুব সাহায্য হল। না হলে যে কী ঘটত, কে জানে! ওরা হয়তো আমাকেও মারত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy