—ফাইল চিত্র।
করোনার প্রকোপে তখনও বাতিল হয়নি পরীক্ষা। তাই প্রস্তুতি চলছিল পুরোদমে। কিন্তু সেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশেও দাঁড়িয়েছিল ওরা। কোথায় পাওয়া যাচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, কোন হাসপাতালে কত শয্যা ফাঁকা রয়েছে, কোথায় গেলে কোন ওষুধ মিলবে— করোনা রোগী ও তাঁদের পরিজনদের সমস্ত খবরই পৌঁছে দিচ্ছিল তারা।
শ্রীশিক্ষায়তনের সেই তিন ছাত্রী, শ্রমণা দাস দত্ত, রঞ্জিনী মজুমদার ও শরণ্যা দাস ঘোষ শনিবার জানিয়েছে, তাদের সিবিএসই দ্বাদশের ফল খুব ভাল হয়েছে। শ্রমণা পেয়েছে ৯৪.৪ শতাংশ, রঞ্জিনী পেয়েছে ৯৫.৭৫ শতাংশ এবং শরণ্যা পেয়েছে ৯৫ শতাংশ। ওই স্কুলের মহাসচিব ব্রততী ভট্টাচার্য বললেন, “শুধু ভাল ফল করাই তো নয়, ওরা যে ভাবে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে আমরা খুবই গর্বিত। পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি সমাজের প্রতি কর্তব্য করতেও ভোলেনি ওরা।”
ওই ছাত্রীরা জানাল, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ যখন বাড়ছে, তখন চার দিকে অক্সিজেনের অভাবে, হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে অথবা ওষুধ জোগাড় করতে না-পেরে অসংখ্য মানুষ যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিলেন, তা দেখেই তাদের মনে হয়েছিল, মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। তিন বন্ধু মিলে তৈরি করেছিল একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ, যার মাধ্যমে তারা মানুষকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
তিন বন্ধুর অনুরোধে তাদের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দিতে শুরু করেন বিভিন্ন পেশার পরিচিত লোকজন। যাঁদের মধ্যে চিকিৎসকেরাও রয়েছেন। শরণ্যার কথায়, “ইউথ ফাইটস কোভিড নামে আমাদের ওই গ্রুপের সদস্য-সংখ্যা কয়েক দিনের মধ্যেই একশো ছাড়িয়ে গেল। এর পরে ২৫০ পেরিয়ে যাওয়ায় আর একটি গ্রুপ বানাতে হল।” রঞ্জিনী বলল, “আমাদের গ্রুপের সদস্যেরা শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের সকলের কাছেই নিজের নিজের এলাকার হাসপাতাল, অক্সিজেন ও ওষুধপত্রের খুঁটিনাটি সব তথ্য মজুত থাকত। কোথায় কী পাওয়া যাচ্ছে বা যাচ্ছে না, সবই জানতেন তাঁরা। সদস্যদের পরিচিত কেউ কোভিডে আক্রান্ত হলেই গ্রুপের কারও না কারও কাছ থেকে তিনি সমস্ত জরুরি তথ্য পেয়ে যেতেন।” শ্রমণা বলল, “করোনা যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তখন রাতবিরেতে বহু মানুষ আমাদের কাছে হাসপাতালের শয্যা বা অক্সিজেন সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। আমরা কাউকেই ফেরাইনি। শুধু তথ্য দিয়েই ক্ষান্ত হতাম না। যাঁর যা দরকার, সেটা তিনি পেলেন কি না, সেই খোঁজও নেওয়া হত।”
শরণ্যাদের বক্তব্য, পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি এই কাজ করতে তাদের একটুও অসুবিধা হয়নি। তারা সকলেই সাহায্য পেয়েছে নিজেদের পরিবারের। শ্রমণার কথায়, “করোনার প্রকোপ যখন চরমে, তখন এমনও হয়েছে, এক দিনে ১০-১২ জনকে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে হয়েছে। তাতে লেগে গিয়েছে গোটা একটা দিন। সারা দিনে পড়াশোনা হয়তো হয়নি। রাতে বই নিয়ে বসেছি। অফলাইনে পরীক্ষা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চতাও ছিল। কিন্তু প্রস্তুতি তো থামিয়ে রাখা যায় না।”
তিন কন্যা জানাল, এখানেই শেষ নয়, তৃতীয় ঢেউ এলে একই ভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy