Advertisement
E-Paper

পাটাতনে ভেসে আনাজ বাছা যায় নাকি!

নৌকায় আনাজের পসরা সাজিয়ে খদ্দেরের আশায় বসে ছিলেন লক্ষ্মী রায়, সুস্মিতা নস্করেরা। তাঁদের বক্তব্য, বাজার যখন ডাঙায় ছিল, তখন দিনে এক-এক জনের কয়েক হাজার টাকার বিক্রি হত। সেই চালু ব্যবসা জলে এসে ডুবতে বসেছে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৮
আলোকিত বাজার ঘুরে দেখতে এলেও কেনাকাটার দিকে ঝোঁক নেই মানুষের। পাটুলির ভাসমান বাজারে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আলোকিত বাজার ঘুরে দেখতে এলেও কেনাকাটার দিকে ঝোঁক নেই মানুষের। পাটুলির ভাসমান বাজারে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

জলের উপরে ভেসে আছে নৌকা। তাতে ফলের ঝুড়ি, আনাজের ডালা। নৌকার সামনে কাঠের পাটাতনে নানা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে জনা চার তরুণ-তরুণী। নিজস্বী তুলতে মগ্ন। কিন্তু ত্রিসীমানায় কোনও খদ্দেরের দেখা নেই। ঢাকঢোল পিটিয়ে চালুর পরে এমনই হাল পাটুলির ভাসমান বাজারের। খদ্দেরের অভাবে বিক্রিবাটা শিকেয়। ছুটির দিনে ভিড় হচ্ছে। তবে তাঁদের অধিকাংশই নিছক দর্শক।

নৌকায় আনাজের পসরা সাজিয়ে খদ্দেরের আশায় বসে ছিলেন লক্ষ্মী রায়, সুস্মিতা নস্করেরা। তাঁদের বক্তব্য, বাজার যখন ডাঙায় ছিল, তখন দিনে এক-এক জনের কয়েক হাজার টাকার বিক্রি হত। সেই চালু ব্যবসা জলে এসে ডুবতে বসেছে। দোকানিদের বক্তব্য, লোকজন বেড়াতে, ছবি তুলতেই আসছেন। কিনছেন হাতে গোনা কয়েক জন। তা ছাড়া, যে জলাশয়ে ওই বাজার বসছে, সেই জলও এখন পরিষ্কার নেই। ভাসছে প্লাস্টিক, সিগারেটের টুকরো, নানা আবর্জনা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মশার উপদ্রব।

পাটুলির ওই জলাশয়ের কাছে রাস্তার উপরেই মাছ-মাংস আর আনাজের বাজার ছিল দীর্ঘকাল ধরে। জলাশয়টিকে কাজে লাগিয়ে শহরের সৌন্দর্যায়ন করতে বিদেশের মতো এখানেও ভাসমান বাজার তৈরির পরিকল্পনা হয়। রাস্তার আনাজ বাজারকে তুলে এনে পাটুলির ওই জলাশয়ে বসিয়ে দেয় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। ২৪ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে যার সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজার সূত্রের খবর, ১১৪টি নৌকায় ২২৮ জন ব্যবসায়ী তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসছেন প্রতিদিন। তবে বিক্রির আর বিশেষ আশা দেখছেন না দোকানিরা। আনাজ বিক্রেতা লক্ষ্মীদেবীর যেমন বক্তব্য, ‘‘মাথার উপরে ছাউনি নেই। কড়া রোদে আনাজ শুকিয়ে যাচ্ছে। সকালের আনাজ দুপুরের পরে আর কেউ হাতে নিতেই চাইছেন না।’’ এ ভাবে আর কত দিন চালাতে পারবেন, বুঝতে পারছেন না ওঁরা।

কিন্তু কেন কেনার লোক নেই? বাজারের চার দিকেই তো আবাসন, বসতি। রাস্তার উপরে যাঁরা বাজার করতেন, তাঁরা এখানে আসছেন না কেন? এলাকার বাসিন্দা তনিমা রায়ের কথায়, ‘‘আমাদের অভ্যাস আনাজ বেছে নেওয়া। এখানে পাটাতনে দাঁড়িয়ে বাছাবাছি করা যাচ্ছে না।’’ দ্বিতীয়ত, আগের বাজার ছিল ১০০ মিটার এলাকার মধ্যে। ক্রেতা কাছাকাছিই সব পেয়ে যেতেন। এই বাজার ৩৫০ মিটার জুড়ে। এক জায়গায় মাছ তো আর এক জায়গায় আনাজ। কেউ অত ঘুরতে চাইছেন না।

সমস্যা বাড়ছে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও। উদ্বোধনের সময়ে বলা হয়েছিল, জলাশয়ের জল পরিষ্কার রাখা হবে। নিয়মিত শোধন করার জন্য তিনটি পাম্প আছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষেধ। ভিতরে ছ’বছরের নীচে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেই সব নিয়ম বাস্তবে কতটা মানা হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। অভিযোগ, যে দু’-এক জন আনাজ বা ফল কিনছেন, দোকান থেকেই তাঁদের দেওয়া হচ্ছে প্লাস্টিকের প্যাকেট। এমনও দেখা গেল, লোকজন জামরুল, কুল, আঙুর খেয়ে প্যাকেট ও ফলের বীজ ফেলছেন পাশের পার্কে, যা একটু পরেই উড়ে পড়ছে জলে।

কেএমডিএ-র এক কর্তব্যরত ইঞ্জিনিয়ার স্বীকার করলেন পলিব্যাগের কথা। তিনি বলেন, ‘‘অনেক বলেও প্লাস্টিক বন্ধ করা যাচ্ছে না।’’ তিনি জানালেন, দিন কয়েক আগে সেখানে মাগুর ও তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছে কেএমডিএ। তারাই জল পরিষ্কার রাখবে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।

floating market Patuli
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy