Advertisement
E-Paper

পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, বিক্ষোভ স্কুলে

বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকে আড্ডা দেওয়ার সময়ে সে বলেছিল ‘গুডবাই।’ এর পরে অবশ্য ফেসবুকের ‘নৈশ আড্ডা’য় তাকে আর পায়নি বন্ধুরা। সকালে জানা যায়, রাতের আড্ডায় বন্ধুর ‘গুডবাই’ কোনও রসিকতা ছিল না। সত্যিই সে আর নেই। বন্ধুদের অভিযোগ, পড়াশোনা সংক্রান্ত টানাপড়েনের জেরেই অকালে চলে যেতে হল ওই পড়ুয়াকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬
সম্প্রীত বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্প্রীত বন্দ্যোপাধ্যায়

বুধবার রাত এগারোটা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে ফেসবুকে আড্ডা দেওয়ার সময়ে সে বলেছিল ‘গুডবাই।’ এর পরে অবশ্য ফেসবুকের ‘নৈশ আড্ডা’য় তাকে আর পায়নি বন্ধুরা। সকালে জানা যায়, রাতের আড্ডায় বন্ধুর ‘গুডবাই’ কোনও রসিকতা ছিল না। সত্যিই সে আর নেই। বন্ধুদের অভিযোগ, পড়াশোনা সংক্রান্ত টানাপড়েনের জেরেই অকালে চলে যেতে হল ওই পড়ুয়াকে।

বৃহস্পতিবার সকালে একাদশ শ্রেণির ওই পড়ুয়া ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় তার নিজের ঘর থেকেই। ঘটনাটি ঘটে পশ্চিম পুটিয়ারির ব্যানার্জি পাড়ার চ্যাটার্জি বাগানে। মৃত পড়ুয়ার নাম সম্প্রীত বন্দ্যোপাধ্যায় (১৬)। সে টালিগঞ্জের চণ্ডীতলায় এক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে কমার্স বিভাগের ছাত্র। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পড়াশোনা নিয়ে কোনও সমস্যার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছে সম্প্রীত। তার সহপাঠীরা জানিয়েছে, স্কুলের এক শিক্ষকের ব্যবহার নিয়ে সম্প্রীতের খুব সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু তার জন্য নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ যে করতে পারে সে, এটা তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সম্প্রীত। চ্যাটার্জি বাগানের ঘিঞ্জি গলির মধ্যে তিনতলা বাড়িতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকত ওই পড়ুয়া। সম্প্রীতের পড়া এবং থাকার ঘর দোতলায়। মা-বাবা থাকেন তিনতলার একটি ঘরে। তার বাবা সুব্রত এবং মা অর্পণা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রতি দিনের মতো বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ খাওয়া সেরে তাঁরা ছেলের ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা দিয়ে শুতে চলে যান। রাতে কোনও দরকার হলে ছেলে তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করত। এ দিন দরজা বন্ধ করার পরে ছেলে আর কোনও যোগাযোগ করেনি। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, ‘‘রোজের মতো বৃহস্পতিবারও সকাল সাতটা নাগাদ ছেলের ঘরের তালা খুলি। দেখি, ও ফ্যানের সঙ্গে গলায় চাদর পেঁচিয়ে ঝুলছে।’’ এর পরে পরিজনেরাই ঘটনার কথা জানান পুলিশকে। এ দিনই সম্প্রীতের দেহ ময়না-তদন্ত করে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ের সঙ্গেই সখ্য বেশি ছিল সম্প্রীতের। তবে ছেলের মধ্যে এমন আত্মহননের মানসিকতা লুকিয়ে রয়েছে, তা কোনওদিনই টের পাননি অর্পণাদেবী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক জন শিক্ষকের ব্যবহার নিয়ে দু’-এক বার বললেও কোনও দিন কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি ও।’’ এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য সম্প্রীতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়নি।

স্কুল সূত্রে খবর, খুব মিশুকে ছিল সম্প্রীত। সম্প্রতি স্কুলের পরীক্ষায় একটি বিষয়ে সে কিছুটা কম নম্বর পায় সে। তা নিয়েও কিছুটা চিন্তায় ছিল ওই ছাত্র। মৃত ছাত্রের অভিভাবক এবং স্কুলের পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, স্কুলেরই এক শিক্ষকের তরফে
প্রাইভেট টিউশন নেওয়ার চাপ ছিল সম্প্রীতের উপরে।

সম্প্রীতের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্কুল বন্ধ রাখার দাবি জানিয়ে এ দিন বেলা এগারোটা নাগাদ স্কুলের গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়াদের একাংশ। সেই সময়ে স্কুল গেটের সামনে উত্তেজিত পড়ুয়াদের সামাল দেয় পুলিশ। সম্প্রীতের বাবা সুব্রতবাবুও এই ঘটনার খবর পেয়ে পড়ুয়াদের স্কুলের সামনে থেকে সরে যাওয়ার আর্জি জানান। পরে অবশ্য স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ঈশিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের এক জন পড়ুয়া আত্মঘাতী হয়েছে, তা খুবই দুঃখের। কিন্তু অধিকাংশ পড়ুয়া যখন চলে এসেছে, তখন হঠাৎ করে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া যায় না।’’ সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, কোনও শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ ওঠে, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তও করা হবে।

Hanging Body Student School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy