Advertisement
E-Paper

WBCHSE Result 2022: পঞ্চকন্যার ফলাফলে আপ্লুত কুড়ি কন্যার জননী

সে দিনের ভবঘুরে বাচ্চারাই আজকের পায়েল রায়, গীতা রায়, রিনা দাস, প্রিয়া কুমারী এবং প্রিয়াঙ্কা সরকার।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৭:১৩
লড়াকু: কান্তা চক্রবর্তীর (মাঝে) সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) প্রিয়াঙ্কা, পায়েল, গীতা, রিনা ও প্রিয়া।

লড়াকু: কান্তা চক্রবর্তীর (মাঝে) সঙ্গে (বাঁ দিক থেকে) প্রিয়াঙ্কা, পায়েল, গীতা, রিনা ও প্রিয়া। শুক্রবার, দমদম স্টেশনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কুড়ি কন্যার জননী কান্তা দিদিমণি। তাদেরই মধ্যে পঞ্চকন্যার সাফল্যে আরও এক বার খুশি হওয়ার সুযোগ পেলেন তিনি। তারা এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে লেটার-সহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হল। খুশি মেয়েরাও। রাজ্য জুড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফলের মধ্যে অন্যদের কাছে হয়তো আহামরি নয়, কিন্তু এই সাফল্য অন্য মাত্রা যোগ করে ওদের জীবনে। কারণ, অন্ধকারে হারিয়ে যেতে যেতে আলোয় ফেরার গল্পকে সত্যি করছে ওরা। আর সেই লড়াইয়ে পাশে রয়েছেন কান্তা চক্রবর্তী। দমদম স্টেশন চত্বরে ঘুরে বেড়ানো ভবঘুরে মেয়েদের পনেরো বছর ধরে আগলে তাঁর পাঠশালায় বড় করছেন ওই স্কুলশিক্ষিকা।

সে দিনের ভবঘুরে বাচ্চারাই আজকের পায়েল রায়, গীতা রায়, রিনা দাস, প্রিয়া কুমারী এবং প্রিয়াঙ্কা সরকার। পায়েল এবং প্রিয়া বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। অন্য তিন জন কলা বিভাগের। রিনা, প্রিয়াঙ্কা আর গীতা ডাফ হাইস্কুলের ছাত্রী। কেএলএস স্কুল থেকে প্রিয়া এবং দমদমের কুমার আশুতোষ ইনস্টিটিউশন (মেন) থেকে পায়েল এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করল। প্রতিটি বিষয়েই নব্বইয়ের ঘরে নম্বর পেয়ে প্রিয়া স্বপ্ন দেখছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার। চলতি মাসের ১৫ তারিখে রয়েছে তারই রেজিস্ট্রেশন। প্রিয়ার কাছে সেটা স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রথম ধাপ। পায়েলের স্বপ্ন, সে ব্যাঙ্কে চাকরি করবে। রিনা, গীতা আর প্রিয়াঙ্কা তিন জনেই ভূগোলে আশির উপরে নম্বর পেয়ে ঠিক করেছে, ওই বিষয়ে অনার্স নিয়ে একই কলেজে পড়বে তারা। আর ভবিষ্যতে চাকরি করতেই হবে। তার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে আজ ওদের বিরিয়ানি খাওয়ার দিন। দিদিমণির কাছে আবদার, চিকেন বিরিয়ানি চাই-ই।

ওদের কথায়, পাঁচ জনেই দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিকে পাশ করে মনমরা হয়ে দু’বছর অপেক্ষায় ছিল। দিদিমণির পরিশ্রমের মূল্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কান্তা দিদিমণি বলে ওঠেন, “আমি ওদের উপরে কোনও চাপ দিইনি। খাওয়া, পড়তে যাওয়া, ঘুম এ সব নিয়েই নজর রাখতাম। কিন্তু পড়াশোনা ওরা নিজেদের আগ্রহেই করত। আমাকে বলতেও হত না।” পাঁচ জন সমবয়সি হওয়ায় ছোট থেকেই ওদের গভীর বন্ধুত্ব। এক জন পড়া না বুঝলে অন্য জন বুঝিয়ে দেয়। এক জন পিছিয়ে গেলে অন্য জন টেনে তোলে‌।

ওদের কারও হয় বাবা-মা নেই, নতুবা পরিস্থিতির চাপে তাঁরা যোগাযোগ রাখতে পারেননি। বন্ধুরাই ওদের পরিবার। দিদিমণিই ওদের মা, শিক্ষিকা, বন্ধু। মাতৃদিবসে প্রতি বছরের মতো এ বারও নিজেরা কিছু একটা বানিয়ে দিদিমণিকে উপহার দিয়েছে। তারজালি, কাগজের মণ্ড, আঠা দিয়ে তৈরি শিশু কোলে মায়ের সেই মূর্তি হাতে পেয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেছিলেন কান্তা।

মোবাইল বা টেলিভিশন ওদের শৈশব চুরি করেনি। লকডাউন পর্বে শুধু পড়াশোনার জন্যই ধরত মোবাইল। তার পরে নিজেরাই মোবাইল বন্ধ করে আলমারিতে তুলে রাখত। অবসর যাপনে কেউ ভালবাসে ফেলুদা, কেউ বা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবার কেউ ভালবাসে ভৌতিক উপন্যাস। কারও প্রিয় পেন্সিল স্কেচ, কেউ বা জলরঙে আঁকে পাহাড়-নদী। ইচ্ছে না হলেও ক্যারাটে শিখতেই হবে আত্মরক্ষার্থে— এটা দিদিমণির কড়া অনুশাসন। “আমি কি সব সময়ে আগলে রাখতে পারব? নিজেকে শক্ত হাতে রক্ষা করতে হবে তো!”— বলে ওঠেন কান্তা।

এদের সাফল্যের অংশীদার দমদম স্টেশনের হকারকাকু, জিআরপি এবং আরপিএফের কাকু, মেট্রো-কাকু, সিঁথি থানার পুলিশকাকুরাও। বিপদে ত্রাতা হয়ে পাশে দাঁড়ান ওঁরাই। তাঁদের সকলের স্নেহেই রিনারা ইচ্ছে মতো রং-তুলিতে সাজিয়ে তুলছে নিজেদের জীবন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

WBCHSE RESULT Dumdum Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy