Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Pakistan War 1971

পাকিস্তানের অস্ত্র আসছে কলকাতায়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বাজেয়াপ্ত রাইফেল রাখা হবে রাজ্যের দফতরে

কলকাতার ঐতিহাসিক সম্ভারে নতুন সম্পদ যুক্ত হতে চলেছে। দীর্ঘ দিন সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর হেফাজতে থাকা পাকিস্তানি সেনার অস্ত্রশস্ত্র আসছে কলকাতায়। পুজো মিটলেই হবে প্রদর্শনী।

১৯৭১। আত্মসমর্পণ পাকিস্তানের।

১৯৭১। আত্মসমর্পণ পাকিস্তানের। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:৫৮
Share: Save:

১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কয়েকটি অস্ত্র আসছে কলকাতায়। তা দেখতে পাবেন সাধারণ মানুষ। চলতি সপ্তাহেই অস্ত্রগুলি মধ্যপ্রদেশের টেকানপুর থেকে কলকাতায় এসে যাবে। ইতিমধ্যেই তা রওনা দিয়ে দিয়েছে। আপাতত সেগুলি কলকাতায় নব মহাকরণের এক তলার একটি ঘরে প্রদর্শিত হলেও পরে রাজ্য সরকারের তৈরি নতুন সংগ্রহশালায় নিয়ে যাওয়ার কথা।

ঐতিহাসিক এই অস্ত্রশস্ত্র কলকাতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেন পশ্চিমবঙ্গের মহাপরিপালক ও ন্যাশপাল (অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিশিয়াল ট্রাস্টি) বিপ্লব রায়। প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময়ে হার হয় পাকিস্তানের। সেই সময়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই সব অস্ত্র রাখা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হেফাজতে থাকা সেই সব অস্ত্র এত দিন পর্যন্ত বাংলায় কখনও আসেনি। দীর্ঘ চেষ্টার পরে তা আসতে চলেছে।

এক বছর আগেই অস্ত্রগুলি আনতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন করেছিলেন বিচারক তথা রাজ্যের সরকারি ট্রাস্টি বিপ্লব। গত ১১ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। বিপ্লব টেকানপুর গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে অস্ত্রগুলি নেন গত মঙ্গলবার। এ বার তা কলকাতায় আসছে।

বিপ্লব জানিয়েছেন, মোট ছ’টি অস্ত্র আসবে কলকাতায়। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি সেনার ব্যবহার করা রাইফেল রেমিংটন, রাইফেল মাস্কেট, লঞ্চার রাইফেল। বিপ্লব বলেন, ‘‘আমাদের দফতরের উদ্যোগে অনেক প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী সংরক্ষিত রয়েছে। তার মধ্যে প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধসামগ্রীও। এ বার ১৯৭১ সালের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র এসে যাওয়ায় আমাদের সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ হল।’’

এখন ১ নম্বর কিরণশঙ্কর রায় রোডে নব মহাকরণের ১১ তলায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মহাপরিপালক ও ন্যাশপাল দফতর। ব্রিটিশ আমলে এই দফতরের সূচনা। কোনও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী না থাকলে তার দেখাশোনা করাই এই দফতরের কাজ। সেই সব সম্পদ বাবদ কোনও আয় হলে তার অংশও পায় রাজ্য সরকার। নব মহাকরণের এক তলাতেও দফতরের কয়েকটি ঘর রয়েছে। আপাতত পাকিস্তানি সেনার অস্ত্রগুলি সেই ঘরেই সাজিয়ে রাখা হবে। সেই সঙ্গে থাকবে ব্রিটিশ আমলের অনেক অস্ত্রশস্ত্র।

অস্ত্র হস্তান্তরের সময় রাজ্যের সরকারি ট্রাস্টি বিপ্লব রায়।

অস্ত্র হস্তান্তরের সময় রাজ্যের সরকারি ট্রাস্টি বিপ্লব রায়।

বিপ্লব জানিয়েছেন, পুজোর পর থেকে সাধারণ মানুষ বা গবেষকেরা ওই সংগ্রহশালায় যেতে পারবেন। আগামী দিনে কলকাতার অন্য কোথাও আলাদা করে সংগ্রশালা গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে তাঁর। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই তিনি রাজ্য সরকার এবং কলকাতা পুরসভার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিপ্লব বলেন, ‘‘আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, তাতে আগামী প্রজন্মের গবেষণার কাজে অনেক সুবিধা হবে। বাংলার বাইরেও রাজ্যের যে সব সম্পত্তি উত্তরাধিকার না থাকায় বেহাত হয়ে রয়েছে, তা সংগ্রহের কাজ চলছে।’’ বিপ্লব জানিয়েছেন, চলতি বছরেই তিনি উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় গিয়ে প্রচুর প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধার করেন। ক্রেতা সেজে গিয়ে চন্দ্রকেতুগড় সংলগ্ন হামিদপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে ১৫ হাজারের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী উদ্ধার করেন। যার মূল্য নাকি ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

শুধু অন্য জায়গা থেকে উদ্ধার করাই নয়, বিপ্লবের নিজের দফতর থেকেও উদ্ধার হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক সামগ্রী। ওই দফতরের একটি ঘরেই দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি ছিল অনেক বাক্স। সেগুলি খুলতেই উদ্ধার হয় প্রচুর দুর্লভ ছবি। উদ্ধার হয় পুরনো কলকাতার ফোটোগ্রাফ এবং তার গ্লাস প্লেট নেগেটিভ। দফতরের অধীনস্থ এই সব সামগ্রীর সঙ্গেই এ বার যুক্ত হতে চলেছে পাকিস্তানি সেনার অস্ত্রও। আগামী দিনে এ সবের ‘ডিজিটাল সংগ্রহশালা’ তৈরির পরিকল্পনাও করেছেন বিপ্লব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pakistan War Arms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE