অসহায়: দক্ষিণ দিল্লির শাহপুরে আটকে পড়া জরিশিল্পীরা। নিজস্ব চিত্র
পেট ভরাতে কারও ভরসা জল-মুড়ি। কারও আবার হাতে থাকা টাকা প্রায় শেষ। বাকি টাকাটুকু শেষ হয়ে গেলে কী ভাবে দিন চলবে, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে দেশজোড়া লকডাউনের জেরে এ ভাবেই বিপদে পড়েছেন দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া, হাওড়ার বহু জরিশিল্পী। দিল্লির চাঁদনি চক, করোলবাগের একাধিক জরি কারখানায় কাজ করতেন এঁরা। কিন্তু লকডাউনের কারণে সেই সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিন্ রাজ্যে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওই সব জরিশিল্পীরা।
লকডাউনের কারণে দিল্লির হাউস রানি, শাহপুর জাটের ঘুপচি ঘরে এখন রীতিমতো বন্দিদশা হাওড়ার উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, উদয়নারায়ণপুর এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার জরিশিল্পীর। উলুবেড়িয়ার মেজুটি গ্রামের বাসিন্দা শেখ সুবিদ আলি দিল্লি থেকে বলছেন, ‘‘লকডাউনের পর থেকেই এখানে সমস্ত কারখানা বন্ধ। মালিক প্রতি মাসে কর্মীদের খরচ বাবদ পাঁচশো টাকা দিতেন। মাসে বেতন ৮-১০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন কারখানার মালিক বেপাত্তা। হাতের টাকাও শেষ হতে বসেছে। কী ভাবে চলবে জানি না।’’
কী করে দিন চলছে ওই শিল্পীদের? উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা, জরিশিল্পী কিবরিয়া শেখ বললেন, ‘‘এ ভাবে কত দিন কাটাতে হবে জানি না। যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা মুখে তোলা যাচ্ছে না। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ উলুবেড়িয়ার বাঁশদেবপুরের বাসিন্দা শেখ মিজারুল আটকে রয়েছেন শাহপুর জাট এলাকায়। বলছেন, ‘‘প্রথম এক সপ্তাহ মুড়ি ভিজিয়ে খেয়েই কেটেছিল আমাদের। এখানে যে খাবার পাচ্ছি তা খাওয়ার যোগ্য নয়। এখন টাকাও শেষ। দ্রুত বাড়ি ফিরে যেতে চাই।’’ তিন সন্তান নিয়ে মিজারুলের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি রয়েছেন গ্রামের বাড়িতে। ‘‘মাস চারেক আগে স্বামী দিল্লি গিয়েছিলেন। উনিই সংসারের একমাত্র রোজগেরে। কী ভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।’’— ফোনে বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন মানোয়ারা।
একই দুর্ভোগের শিকার পাঁচলার শেখ সাজ্জাদ, শেখ আসিফ, শেখ আনিসুর, নাসির শেখরা। সাজ্জাদের কথায়, ‘‘সম্প্রতি দিল্লিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এখন এই লকডাউন। বাসা থেকে বেরোতেও পারছি না।’’ সাজ্জাদের অভিযোগ, ‘‘দু’বেলা খিচুড়ি দিলেও তা কম। টাকাও নেই। সকালে, বিকেলে খিদে পেলেও খেতে পারি না।’’
কী ভাবছে প্রশাসন? পাঁচলার বিধায়ক গুলশন মল্লিক বলছেন, ‘‘জরিশিল্পীদের ফেরানোর ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদ সাজদা আহমেদকে বলেছি। তিনি বিষয়টি দেখছেন।’’ উলুবেড়িয়ার সাংসদ সাজদা বলেন, ‘‘জরিশিল্পীদের আটকে পড়ার খবর পেয়ে দিল্লিতে আমার প্রতিনিধিরা ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লকডাউন চলছে। এখন ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে ওখানে ভাল ভাবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা যায়, তা নিয়ে কথা বলব।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy