Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

মাস্কের জোরেই নতুন বছরে ফেরার লড়াই ওঁদেরও

অবিক্রীত সেই সব মাস্ক কোথাও ডাঁই করে পড়ে। কোথাও আবার মাস্কের বরাত দেওয়া হলেও কেউ তা নিতে আসেননি।

ব্যস্ততা: বিক্রির আশায় চলছে কাজ। মঙ্গলবার, মুরারিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

ব্যস্ততা: বিক্রির আশায় চলছে কাজ। মঙ্গলবার, মুরারিপুকুরে। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

শহরের বিভিন্ন বাজার ও হাটে বিক্রি হত যে সমস্ত জামাকাপড়, তা তৈরি হত তাঁদের বাড়ির ছোট ছোট কারখানাগুলিতেই। কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কায় আপাতত সে সব বাজারহাট বন্ধ। তাই জামার পরিবর্তে মাস্ক তৈরি শুরু করেন তাঁদের অনেকে। কিন্তু সেই মাস্কেরও বেশির ভাগ রয়ে গিয়েছে অবিক্রীত। সম্প্রতি রাজ্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে, বাড়ির বাইরে বেরোলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। এই নির্দেশের পরে পরিস্থিতি বদলাবে কি না, নতুন বছরে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন শহরের বস্ত্র তৈরির কারখানার সঙ্গে যুক্ত কুটিরশিল্পীদের একটা বড় অংশের।

অবিক্রীত সেই সব মাস্ক কোথাও ডাঁই করে পড়ে। কোথাও আবার মাস্কের বরাত দেওয়া হলেও কেউ তা নিতে আসেননি। যা থেকে প্রশ্ন উঠেছে, অসচেতনতার কারণেই কি ডাঁই হয়ে পড়ে থাকছে হাজার হাজার মাস্ক? রাস্তায় মাস্ক পরা নিয়ে কড়া সরকারি নির্দেশ এলেও গত দু’দিনে মাস্কের বিক্রি তেমন বাড়েনি। মঙ্গলবার, নববর্ষের সকালে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে তৈরি মাস্ক ব্যবহারের উপরে জোর দিলেও এ নিয়ে সচেতনতা বাড়বে কি না, সেই প্রশ্নটা তাই রয়েই যাচ্ছে। মাস্ক তৈরির সঙ্গে যুক্ত, দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট রোডের সুবল কর্মকার এ দিন বললেন, “চিকিৎসকেরা ডাবল লেয়ার্ড মাস্ক পরতে বলছেন। তাই গেঞ্জির কাপড়ের উপরে আর একটা কাপড় সেলাই করে মাস্ক বানিয়েছিলাম। কিন্তু বিক্রি হয়নি। ভেবেছিলাম, মাস্ক বিক্রি হলে অন্তত নববর্ষের পুজোটা সেরে রাখব। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। আশা করি নতুন বছরে নিশ্চয়ই বিক্রি হবে।”

একই সুর মানিকতলার বাসিন্দা রবীন সাহা, পাপ্পু সাহা, দিলীপ সরকারের গলায়। তাঁদের দাবি, প্রথম দিকে তাঁদের তৈরি মাস্ক কিছু বিক্রি হলেও গত ১০ দিনে একটিও হয়নি। রবীন বলেন, “কী করে সংসার চলবে জানি না। কারিগরদেরও টাকা দিতে পারছি না।” পাপ্পুর কথায়, “চিকিৎসকেরা বারবার বলছেন মাস্ক পরতে। পাড়ার লোকে অন্তত সেই কথা শুনে মাস্ক কিনবেন ভেবেছিলাম। কিন্তু কোথায় কী!”

আরও পড়ুন: লকডাউন সফল করতে কড়া নজর অলিগলিতে

সংক্রমণ রুখতে প্রথম থেকেই মাস্কের ব্যবহারের উপরে জোর দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ দিনও চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, “এখন মাস্ক না-পরে বাইরে ঘোরার সময় ফুরিয়েছে। যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে পাশের ব্যক্তি আক্রান্ত কি না, তা অনেক সময়েই বোঝা যাবে না। ফলে নিজের এবং সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থেই মাস্ক পরতে হবে।’’ চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বলছেন, “হাঁচি-কাশির সঙ্গে নির্গত ড্রপলেট থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। আর ছোট থেকেই তো শেখানো হয়, হাঁচি-কাশি হলে নাক-মুখ ঢেকে রাখতে। তাই মুখ ঢেকে রাখার বিষয়টা আরও আগে বাধ্যতামূলক করা হলে ভাল হত।”

আরও পড়ুন: করোনা আক্রান্ত কলকাতা পুলিশের কর্মী, ভর্তি বাঙুরে

তবে কি নতুন বছরে আরও বেশি করে মাস্কে মুখ ঢাকবে মানুষ? যাদবপুর শ্রীকলোনির স্নেহময় সাহা বললেন, “পয়লা বৈশাখ নিয়ে এ বার উৎসাহ ছিল না। কিন্তু একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ফুটপাতবাসীদের মাস্ক দেওয়ার জন্য পরশু পাঁচ হাজার মাস্ক তৈরির বরাত পেয়েছি। আমরা কিছু করে বাঁচি, মানুষগুলোও বাঁচুক।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE