Advertisement
E-Paper

কাশ্মীরের বুকিং বাতিল করে হিমাচলের ব্যবস্থা করে দিন! আসছে পর পর ফোন, ক্ষতির শঙ্কায় কলকাতার পর্যটন ব্যবসা

মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছে। বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। এর পর চিন্তায় কলকাতার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা।

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:৩০
Share
Save

পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার বড়সড় প্রভাব পড়তে চলেছে পর্যটনশিল্পে। সেই আশঙ্কাই করছেন কলকাতার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে ভ্রমণ সংস্থাগুলির কাছে ফোন আসতে শুরু করেছে। কেউ কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির খোঁজ নিচ্ছেন, কেউ সরাসরি ভ্রমণের পরিকল্পনাই বাতিল করে দিতে চাইছেন। অনেকে আবার কাশ্মীর বাতিল করে হিমাচল প্রদেশে বুকিং পরিবর্তনের অনুরোধ করছেন। ফলে ভ্রমণ সংস্থাগুলির আশঙ্কা, সারা বছর ধরে কাশ্মীর থেকে তাঁদের যে পরিমাণ ব্যবসা হত, তাতে এ বার মন্দা আসবে। ক্ষতির মুখোমুখি হতে চলেছে কাশ্মীরের পর্যটন, যা নিয়ে চিন্তায় কলকাতার সংস্থাগুলিও।

মঙ্গলবার কাশ্মীরের অনন্তনাগের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা চলে। বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় একাধিক জঙ্গি। অভিযোগ, ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ ছাড়া বাকিদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত পহেলগাঁও হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তিন জন, যাঁদের দু’জনই কলকাতার বাসিন্দা। মঙ্গলবারের ঘটনার পর পহেলগাঁও তথা কাশ্মীর নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যাঁদের আগামী কয়েক দিনের মধ্যে উপত্যকায় ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে, তাঁরা চিন্তায় পড়েছেন। এই মুহূর্তে সেখানে যাওয়া কতটা নিরাপদ, ভবিষ্যতেই বা পর্যটকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কতটা, প্রশ্ন উঠেছে। ভ্রমণ সংস্থাগুলিকে ফোন করে করে আপাতত সেই সম্বন্ধে খোঁজখবর নিচ্ছেন পর্যটকেরা।

জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অশান্তি, জঙ্গি হামলা এবং সীমান্তে বিক্ষিপ্ত গোলমালের খবর প্রায়ই আসে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কাশ্মীর বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে। প্রতি বছর বহু মানুষ দেশের নানা প্রান্ত থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও ভূস্বর্গ ভ্রমণে যান। তবে মঙ্গলবারের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে। পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, আগামী দিনে কাশ্মীরের পর্যটন একেবারে বন্ধ না-হলেও তার ধরনে কিছু পরিবর্তন আসবে। অনেকেই একা বা শুধু পরিবারের সঙ্গে সেখানে যাওয়ার আর সাহস পাবেন না। কাশ্মীরে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়ার ঝোঁক বাড়বে।

শহরের প্রথম সারির এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা রক্তিম রায়। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে তাঁদের সংস্থার ৩৮ জন ছিলেন। তবে বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। রক্তিম বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল। সকলে এখন আতঙ্কিত। কাশ্মীরে ট্যুর করা তাই এখন একটু সমস্যার। যা ঘটেছে, তা খুব খারাপ। এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এর ফলে আমাদের পর্যটনশিল্পের বাজার ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’ পহেলগাঁওয়ের পর্যটকদের বুধবারই কলকাতার উদ্দেশে রওনার হওয়ার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন রক্তিমরা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটনার সময়ে আমাদের ৩৮ জন পর্যটক পহেলগাঁওয়ে ছিলেন। তবে দুপুরে মধ্যাহ্নভোজনের সময় হওয়ায় তাঁরা মূলত হোটেলের ভিতরে ছিলেন। আজ ওঁরা বেরিয়ে এসেছেন। জম্মুর রাস্তা এখন বন্ধ। মুঘল রোড দিয়ে ওঁদের নামিয়ে আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘মে মাসে কাশ্মীরের অনেক বুকিং আছে। ইতিমধ্যে বিমান সংস্থা ঘোষণা করেছে, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বুকিং বাতিলের জন্য বাড়তি কোনও টাকা লাগবে না। ফলে অনেকেই কাশ্মীরে না যাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর কিছু দিনের মধ্যেই বুকিং বাতিলের ফোন আসতে শুরু করবে। নিশ্চিত ভাবেই অনেকে কাশ্মীরের ভ্রমণ এখন বাতিল করবেন। অনেকে আবার শিমলা, কুলু-মানালির দিকে যেতে চাইছেন। যাঁরা একা যাচ্ছেন, তাঁরা এখন সাহস পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে তেমন দু’টি পরিবারের ফোন এসেছে।’’

আর এক ভ্রমণ সংস্থার কর্তা বাচ্চু চৌধুরী বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ৯৫ শতাংশ বাঙালি যান না। তবে নামটা যেহেতু পহেলগাঁও, অনেকেই ও দিকে যেতে এখন ভয় পাচ্ছেন। মঙ্গলবারের ঘটনার পর ওখানে অনেক কিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন এবং সরকারের তরফে অভিযান চালানো হচ্ছে। সেনা নেমেছে। কপ্টার ঘুরছে। ফলে কাশ্মীরে এখন ভয়ের আবহ রয়েছে। ওখানকার পরিবেশ এখন পর্যটন-সহায়ক নয়। অনেকেই পরিস্থিতি জানতে চেয়ে আমাদের ফোন করছেন, নানা রকম প্রশ্ন করছেন।’’

তবে পহেলগাঁওয়ের ঘটনার কিছু ইতিবাচক দিকও দেখতে পাচ্ছেন বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত, মার্চ ১৫ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কাশ্মীর এবং পহেলগাঁওয়ে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। বরফের পাশাপাশি থাকে টিউলিপ। সেই সময়টা কেটে গিয়েছে। ওই সময়ে এমন হামলা হলে মানুষ আরও ভয় পেয়ে যেতেন। আমাদের কাছে কাশ্মীরের বুকিং এখনও কেউ বাতিল করেননি। তবে করতে পারেন।’’ পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। রাতে মোমবাতি মিছিল করেছেন কাশ্মীরিরা। পর্যটকদের উপর হামলার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। একেও ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন কলকাতার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বাচ্চুর কথায়, ‘‘ওখানে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করছেন। এটা ইতিবাচক দিক। স্থানীয়েরা যে পাশে আছেন, সেই বার্তা মিলছে। ফলে পর্যটকেরা কিছুটা হলেও সাহস পাবেন। যদিও আমার মনে হয়, এখন থেকে কাশ্মীরে একসঙ্গে অনেকে মিলে যাওয়া বা গ্রুপ ট্যুর বেশি হবে। একা যাওয়ার সাহস অনেকেই এখন কিছু দিন আর পাবেন না।’’

Pahelgam Terror Attack Jammu and Kashmir Kashmir Terror Attack

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}