“প্রথমে নিমতলা মহাশ্মশানে রবীন্দ্রনাথের সমাধিক্ষেত্রের মতো জায়গা বানিয়ে সেখানে প্রতিমা বসানোর কথা হচ্ছিল। কিন্তু শ্মশানের মধ্যে লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ ভাল দেখাবে? এই ভেবে ঠিক হল, শান্তিনিকেতনের প্রার্থনাগৃহের আদলে কিছু করা হবে। তখনও কি জানতাম, দিন কয়েকের মধ্যেই আমার জীবনেও শ্মশানের স্তব্ধতা নেমে আসবে?”মধ্য কলকাতার সারপেন্টাইন লেনের বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা
সুমন পণ্ডিতের স্ত্রী মৌমিতা। সদ্য স্বামীহারা মৌমিতাই স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করতে সেখানকার এ বারের থিম ‘২২ শ্রাবণ’ ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। ঘটনাচক্রে, গত ২২ জুলাই করোনায় মৃত্যু হয়েছে বছর ৩৯-এর সুমনবাবুর।সারপেন্টাইন লেনই শহরের একমাত্র জায়গা যেখানে প্রতি বছর বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজোতেও থিমের মণ্ডপ হয়। ২০১৮ সালে ১৯তম বছরে তাঁরা করেছিলেন ‘উনিশে উৎসব’। রাজ্যের নানা প্রান্তের উৎসব তুলে ধরা হয়েছিল। ২০তম বছরে ছিল, ‘বিশে বিশ্ববাংলা’। ২১তম বছরে করা হয়, ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহিদের থিম। ২২তম বছরে এ বার ‘২২ শ্রাবণ’। উদ্যোক্তারা জানালেন, গত এপ্রিলে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে যায়। এর মধ্যেই গত জুলাইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুমনবাবু। জ্বরের পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২২ জুলাই মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর পরে জানা যায়, সুমনবাবু করোনা পজ়িটিভ ছিলেন। তাঁর স্ত্রী মৌমিতাও করোনা পজ়িটিভ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
মৌমিতার কথায়, “ফিরে আসার মাসখানেক পরেও কী করা হবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমাদের কোনও সন্তান নেই, একান্নবর্তী পরিবারের বাকিরা এবং পাড়ার লোকজনের ইচ্ছে ছিল, থিম যখন সুমন ভেবেই রেখে গিয়েছে, সেই থিমের উপরেই এ বারের পুজোটা হোক।”
সারপেন্টাইন লেনে প্রবেশের মুখে গেট বসানো হয়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির গেটের আদলে। পাড়ার দু’দিকের দেওয়াল জুড়ে লাগানো হয়েছে নানা গদ্য, কবিতার ফ্লেক্স। কিছু বাড়ির রকে বাদ্যযন্ত্র, পড়ার টেবিল-চেয়ার পেতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বৈঠকখানার দৃশ্য। একটি রকে রাখা রবীন্দ্রনাথের হাতে আঁকা ছবির ক্যানভাস। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, রবীন্দ্রনাথের তরুণ বয়সের বেশ কিছু ছবি লাগানোর পাশাপাশি লিখতে লিখতে রবীন্দ্রনাথের ছবি আঁকার প্রবণতার দিকটিও তুলে ধরা হয়েছে।
কিন্তু যে করোনার জন্য স্বামীকে হারিয়েছেন, সেই করোনা-কালে থিমের পুজো করায় ভিড়ের বিপদের একটা ঝুঁকি তৈরি হতে পারে মনে হয়নি? মহিলা বললেন, “বাইরের কাউকে মণ্ডপে ঢুকতে দিচ্ছি না। পাড়ার লোকেরও যে মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ, তা-ও লিখে দেওয়া হয়েছে। সব বন্ধ করে দেওয়াই যেত, কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম সচেতন পদক্ষেপেই সুমনের ইচ্ছে পূর্ণ হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy