Advertisement
E-Paper

মৃত্যু হল বিস্ফোরণে দগ্ধ দুই কারিগরের

উৎসবের মরসুম নয়। তবু বসতির থেকে কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নীচে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ছ’টি ড্রাম বোঝাই রাসায়নিক নিয়ে কী বাজি তৈরি করছিলেন তিন কারিগর, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০০:১৬
তদন্ত: বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং দমকলকর্মীরা। সোমবার, মহেশতলায়। ছবি: অরুণ লোধ

তদন্ত: বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এবং দমকলকর্মীরা। সোমবার, মহেশতলায়। ছবি: অরুণ লোধ

উৎসবের মরসুম নয়। তবু বসতির থেকে কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নীচে ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ছ’টি ড্রাম বোঝাই রাসায়নিক নিয়ে কী বাজি তৈরি করছিলেন তিন কারিগর, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রবিবার দুপুরে মহেশতলা থানার বলরামপুরের পুঁটখালির নস্করপাড়ায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় ইতিমধ্যেই জখম দুই কারিগরের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এম আর বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আর এক জন। রবিবার বিস্ফোরণের পরে ওই এলাকায় অবৈধ ভাবে বাজি তৈরির অভিযোগে রমেন সাউ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, রমেন ওই এলাকার বাসিন্দা পালান নস্করের জামাই। আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা রমেন এলাকায় বাজি ব্যবসায়ী বলেই পরিচিত। বিয়ের পর থেকেই রমেন পুঁটখালির নস্করপাড়ার শ্বশুরবাড়িতেই থাকত। ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়ির পিছনেই ছোট ছোট বাজি কারখানা রয়েছে। কিন্তু পুলিশের ধারণা, কোনও কিছু আড়াল করতেই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খোলা আকাশের নীচে গিয়ে বাজি তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রমেন। ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই এলাকায় বাজি তৈরির বহু কারিগর রয়েছে। কিন্তু রমেন পশ্চিম মেদিনীপুরের নায়ারণগড় থেকে কারিগরদের নিয়ে এসেছিল।’’ রবিবার দুপুরে মশলা মেশানোর সময়েই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে দাবি পুলিশকর্তাদের।

এক তদন্তকারীর বক্তব্য, বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তার পরে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকা সাদা ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। রসায়নবিদদের কথায়, বিস্ফোরণের পরে পটাসিয়াম ক্লোরেট জাতীয় কোনও জিনিস বাতাসে মিশে গিয়ে সাধারণত সাদা ধোঁয়ায় পরিণত হয়। রমেনের কারিগরেরা বাজির মশলা হিসেবে পটাসিয়াম ক্লোরেট জাতীয় কিছু ব্যবহার করছিল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। এক তদন্তকারীদের বক্তব্য, ওই ধরনের রাসায়নিক সাধারণত উৎসবের মরসুমে ‘শেল’ জাতীয় আতসবাজি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখন উৎসবের মরসুম নয়। ওই ধরনের বাজি তৈরি হওয়ারও কথা নয়। ফলে কী তৈরি হচ্ছিল ঝোপের আড়ালে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ঘটনার পরে পশ্চিম-মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের বাসিন্দা অনুপ দলুই (৩৩), খোকন বর্মণ (৩৮) ও নিমাই বর্মণ (৩৪) নামে তিন কারিগরকে গুরুতর জখম অবস্থায় এম আর বাঙুর হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রবিবার গভীর রাতে অনুপ ও খোকনের মৃত্যু হয়। খোকনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পরে তিন ড্রাম ভর্তি সাদা ও লাল রঙের রাসায়নিকের গুঁড়ো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওখানে ছ’টি ড্রাম ভর্তি রাসায়নিক মজুত করা হয়েছিল। তিনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে। বাকি তিনটিতে আগুনের আঁচ পৌঁছয়নি বলেই জানিয়েছেন তদন্তকরীরা। ওই রাসায়নিকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। ওই ড্রাম ভর্তি রাসায়নিকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। ওই পরিমাণ বিস্ফোরক থেকে প্রায় কয়েক হাজার হাতবোমা (পেটো) তৈরি করা যায় বলে দাবি পুলিশের। সাধারণত ১০-২০ গ্রাম মশলা লাগে এক-একটি হাতবোমা তৈরিতে। পুলিশের অনুমান, ওই এলাকায় নির্বাচনের আগে দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে বরাত পাওয়া হাতবোমা তৈরি করা হচ্ছিল।

সোমবার সকালে বলরামপুর এলাকার বাসিন্দা তরুণ দাস নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়ছেন তদন্তকারীরা। তরুণই রমেশকে ওই রাসায়নিক সরবরাহ করেছিল বলে দাবি করছেন ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশের কর্তারা। ধৃতদের জেরা করা হচ্ছে বলে মহেশতলা থানা সূত্রে খবর। পুলিশের দাবি, কলকাতার বড়বাজার থেকে ওই রাসায়নিক কেনা হয়েছিল বলে জেরায় কবুল করেছে তরুণ।

Crime Explosion Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy