Advertisement
E-Paper

বাঘ-সিংহের উচ্ছিষ্টে ব্লিচিং-ফিনাইল

ভাগাড়-কাণ্ডে প্রাথমিক ভাবে নাম জড়িয়েছিল বাঘ-সিংহদেরও। অভিযোগ উঠেছিল, তাদের উচ্ছিষ্ট মাংস চলে আসছে শহরবাসীর পাতে। এ বার তাই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
খাচ্ছি সুখে: বিকেলের ভোজে মগ্ন রয়্যাল বেঙ্গল। বুধবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

খাচ্ছি সুখে: বিকেলের ভোজে মগ্ন রয়্যাল বেঙ্গল। বুধবার, আলিপুর চিড়িয়াখানায়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

বজবজের পরে দেগঙ্গা। পরপর ভাগাড়-কাণ্ডে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

ভাগাড়-কাণ্ডে প্রাথমিক ভাবে নাম জড়িয়েছিল বাঘ-সিংহদেরও। অভিযোগ উঠেছিল, তাদের উচ্ছিষ্ট মাংস চলে আসছে শহরবাসীর পাতে। এ বার তাই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ বাড়তি সতর্কতা নিয়েছেন। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, বাঘ-সিংহের উচ্ছিষ্ট মাংস যাতে কোনও ভাবেই ব্যবহার না করা যায়, তাই ফেলে দেওয়ার আগে তাতে ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকল কর্মীই যাতে এই নিয়ম মেনে চলেন, সেই ব্যাপারে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মে মাসে চিড়িয়াখানার বাসিন্দা বাঘ, সিংহ-সহ মাংসাশী প্রাণীদের না খাওয়া মাংস শহরের বিভিন্ন হোটেলে পৌঁছে যাচ্ছে, এমনই অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল চতুর্দিক। কলকাতা পুরসভাও বিশেষ দল পাঠিয়েছিল অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে। সেই অভিযোগ ধোপে টেকেনি। তবে বিতর্কের পরে সতর্ক হয়েছেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বাঘ-সিংহদের যে মাংস প্রতিদিন দেওয়া হয়, সেটা তারা সব সময়ে শেষ করে উঠতে পারে না। বাকিটা ফেলে দেওয়া হয়। সেই মাংস নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট লোকও রয়েছেন। কিন্তু আমরা এখন উচ্ছিষ্ট মাংসের সঙ্গে ফিনাইল বা ব্লিচিং মিশিয়ে দিচ্ছি, যাতে কোনও ভাবেই তা আর ব্যবহার না করা যায়!’’

চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, মাংসাশী প্রাণীদের জন্য হাড়যুক্ত ও হাড়ছাড়া দু’রকমের মাংসই নেওয়া হয়। তবে তা নেওয়ার জন্যও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। চিড়িয়াখানা আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, চিড়িয়াখানার যে মাংস ওজনের যন্ত্র রয়েছে, সেখানে প্রথমে প্রতিদিনের বরাদ্দ মাংস ওজন করা হয়। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন চিড়িয়াখানায় ১১৭ কেজি ৫০০ গ্রাম মাংস লাগে। তার মধ্যে মোষের হাড়হীন টাটকা মাংস লাগে ৬৫ কেজি, হাড়-সহ মাংস লাগে ৩২ কেজি, গরুর লিভার লাগে ১০ কেজি, বিভিন্ন ধরনের মাংসের কিমা লাগে ১০ কেজি ও খাসির মাংস লাগে আধ কেজি। ওই মাংস ওজনের যন্ত্রে মাপার সময়ে সেখানে প্রাণীবিজ্ঞানী, পশু চিকিৎসকেরা উপস্থিত থাকেন। তাঁরা আগে মাংস পরীক্ষা করে দেখেন। পরীক্ষায় গুণমান সঠিক হলে তার পরেই প্রতিদিনের বরাদ্দ মাংস নেওয়া হয়। চিড়িয়াখানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘পরীক্ষায় পাশ করাটা বাধ্যতামূলক। তার আগে পর্যন্ত মাংস কাটাই হয় না!’’

সেখানেই শেষ নয়। ওজন করে মোট মাংস নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ধাপের শুরু বলে জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানার আধিকারিকেরা। সেই মাংস বাঘ-সিংহের বরাদ্দ অনুযায়ী তাদের খাঁচায় চলে যায়। সেখানেও আরেক দফা মাংসের ওজন করা হয়। যদি দেখা যায়, বাঘের বরাদ্দ বা সিংহের বরাদ্দ মাংস কোনও ভাবে কম পড়েছে, তা হলে কতটা কম পড়ল, কতটা পাঠানো হয়েছিল, তা সংশ্লিষ্ট ‘কিপার’ রিপোর্ট আকারে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠান। চিড়িয়াখানার অধিকর্তার কথায়, ‘‘কোথাও অসঙ্গতি রয়েছে কি না, প্রতিদিন সেই রিপোর্ট দেখা হয়।’’

তবে যে মাংস দেওয়া হয়, তা অনেক সময়েই পুরোটা খায় না বাঘ-সিংহেরা। তখন তা উচ্ছিষ্ট মাংস ফেলার নির্দিষ্ট বিনে ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে এক জন ওই উচ্ছিষ্ট নিয়ে গিয়ে তা ধাপায় ফেলে দেন। ধাপা থেকে সেই মাংস বেরিয়ে বিভিন্ন রেস্তরাঁয় পৌঁছে যাচ্ছে বলে বিতর্ক ছড়িয়েছিল কিছু দিন আগে। আশিসবাবু অবশ্য জানাচ্ছেন, ওই মাংস পশুদের মলমূত্রের সঙ্গে মিশে এতটাই অপরিষ্কার থাকে, তা কোনও ভাবেই খাওয়ার যোগ্য নয়। তবুও ফেলার আগে আর সামান্য সংশয় রাখতে চাইছেন না তাঁরা। সাবধানের মার নেই। এ বার তাই ভরসা ব্লিচিং-ফিনাইল!

Alipore Zoo Phenyl Bleaching Powder Meat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy