হাইকোর্টের নির্দেশ ছিলই। এ বার এসপ্ল্যানেড এবং বাবুঘাট থেকে দূরপাল্লার এবং স্থানীয় রুটের বাসস্ট্যান্ড সরাতে উদ্যোগী হল রাজ্য সরকার। রাজ্য পরিবহণ দফতর কলকাতা শহরের তিন প্রান্তে বেশ কয়েকটি এলাকা বাস টার্মিনাসের জন্য নির্দিষ্ট করেছে। এর মধ্যে রাজ্য সরকারের নতুন সদর দফতর নবান্ন-র পাশের বাসস্ট্যান্ড যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে পশ্চিম কলকাতা ও পূর্ব কলকাতায় বেশ কয়েকটি এলাকা। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে কলকাতা শহরের তিন প্রান্তে প্রায় ১০টি বাসস্ট্যান্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সেগুলি তৈরি করতে সরকারের প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে।
কী ছিল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ?
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং শহরের পরিবেশ বাঁচাতে ২০০৭ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এসপ্ল্যানেড এবং বাবুঘাট থেকে বাস টার্মিনাস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-র রিপোর্টের ভিত্তিতে ওই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ওই বছরই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় তদানীন্তন রাজ্য সরকার। কিন্তু সেখানেও হাইকোর্টের নির্দেশই বহাল রাখে শীর্ষ আদালত। যদিও শীর্ষ আদালত বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও সময়সীমা ধার্য করেনি। পরে একটি আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে দ্রুত বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এর পরেই ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়ে দেয়, এসপ্ল্যানেড এবং বাবুঘাট থেকে বাস টার্মিনাস সরানো হবে। কিন্তু তার পর থেকে বিভিন্ন টানাপড়েন চললেও বাসস্ট্যান্ড সরানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার।
পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, এর পিছনে প্রধান কারণ এসপ্ল্যানেড এবং বাবুঘাটের মতো শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক মহলের দ্বিমত। পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “সাধারণত আধুনিক শহরের প্রান্তেই বাস টার্মিনাস থাকে। বাবুঘাট এবং এসপ্ল্যানেড এক সময়ে শহরের প্রান্তই ছিল। কিন্তু যত শহর ছড়িয়েছে, ওই দু’টি বাস টার্মিনাস কেন্দ্রস্থলে চলে এসেছে। ” ওই কর্তা জানান, নতুন পরিকল্পনায় ফের শহরের প্রান্তেই বাস টার্মিনাস সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। কলকাতার তিন প্রান্তে এ রকম প্রায় ১০টি এলাকা চিহ্নিত করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর।
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে রাজ্যের নতুন সদর দফতর নবান্ন। সেখানে বর্তমানে একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। ওই সংলগ্ন এলাকাতেই প্রায় ছ’একর জায়গা জুড়ে নতুন বাস টার্মিনাস তৈরি হচ্ছে। সাঁতরাগাছি স্টেশনের কাছে হিডকোর প্রায় তিন একর জমিও হাতে আসার কথা পরিবহণ দফতরের। সেখানেও তৈরি হবে বাস টার্মিনাস। একই ভাবে তারাতলার হাইড রোডে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের প্রায় সাড়ে চার একর জমিতে এবং খিদিরপুর ট্রাম ডিপোর পাশে প্রায় দু’একর জমিতে দু’টি বাস টার্মিনাস তৈরি হবে।
এর পাশাপাশি রয়েছে সল্টলেক, নিউ টাউন-রাজারহাটে প্রায় সাতটি বাস টার্মিনাস তৈরির পরিকল্পনা। এর মধ্যে রাজারহাটে হিডকোর সঙ্গে সহযোগিতায় ১০ একর জমির উপরে দূরপাল্লার বাসের টার্মিনাস-সহ রয়েছে সেক্টর ফাইভ, নবদিগন্ত, বলাকা এবং প্রাইড হোটেল সংলগ্ন এলাকায় বাস টার্মিনাস তৈরির পরিকল্পনা। এ ছাড়া, রাজারহাটে পরিবহণ নগর তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।
যদিও সরকারের এই ভাবনা ‘সঠিক নয়’ বলেই দাবি করছেন বেসরকারি বাস মালিকেরা। বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট্সের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তার উপরে রাজ্য সরকার বললে আমাদের সরে যেতেই হবে। কিন্তু শহরের কেন্দ্রস্থলে কোনও বাসস্ট্যান্ড না থাকলে সাধারণ মানুষ বিশেষত, জেলার মানুষ খুবই অসুবিধায় পড়বেন।” তাঁর বক্তব্য, “দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের মতো সব বড় শহরেই কিন্তু কেন্দ্রস্থলে বাসস্ট্যান্ড আছে। কলকাতায় তেমনটাই হওয়া উচিত ছিল।” তপনবাবুর দাবি, “এসপ্ল্যানেড বা বাবুঘাট শহরের কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় নিত্যযাত্রীদের এবং জেলার যাত্রীদের সুবিধে হত। নতুন পরিকল্পনায় বাস ধরতে জেলার মানুষকে বেহালা, খিদিরপুর, নবান্ন বা রাজারহাটে যেতে হবে।”
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, “রাজ্য সরকার বিষয়টি বাস্তবায়িত না করা পর্যন্ত এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “ঘোষণা করে বা পরিকল্পনা করে লাভ নেই। সরকারকে দ্রুত তা বাস্তবায়িত করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy