Advertisement
E-Paper

আত্ম-প্রতিশোধ নিতেই কি অঙ্গচ্ছেদের মতো নির্মমতা

চিত্রশিল্পী ভ্যান গখের কথাই মনে পড়ছিল শঙ্কর কর্মকারের দেহের ময়না-তদন্তকারী ডাক্তারদের। উনিশ শতকের ওলন্দাজ শিল্পী নিজের কান কেটে তাঁর বান্ধবী এক যৌনকর্মীকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। আর শঙ্কর দুই স্ত্রী, দুই সন্তানকে হত্যার পরে হাতের শিরা ও পুরুষাঙ্গ কেটে আত্মহত্যা করে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায়, নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে আত্মপীড়নের এই প্রবণতার নাম ‘ভ্যান গখ সিন্ড্রোম’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৪

চিত্রশিল্পী ভ্যান গখের কথাই মনে পড়ছিল শঙ্কর কর্মকারের দেহের ময়না-তদন্তকারী ডাক্তারদের। উনিশ শতকের ওলন্দাজ শিল্পী নিজের কান কেটে তাঁর বান্ধবী এক যৌনকর্মীকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। আর শঙ্কর দুই স্ত্রী, দুই সন্তানকে হত্যার পরে হাতের শিরা ও পুরুষাঙ্গ কেটে আত্মহত্যা করে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের পরিভাষায়, নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে আত্মপীড়নের এই প্রবণতার নাম ‘ভ্যান গখ সিন্ড্রোম’। মৃত্যুর এক বছর আগে ১৮৮৯ সালে কানে ব্যান্ডেজ, মুখে পাইপধারী অবস্থায় আত্মপ্রতিকৃতিও এঁকেছিলেন ভ্যান গখ। আর তাঁর জীবনের পরিণতিও আত্মহত্যা, পিস্তলের গুলিতে।

তবে কলকাতার চল্লিশ পেরোনো প্রোমোটারের নির্মমতার পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের কারও মত, শঙ্করের ক্ষেত্রে নিজের পুরুষাঙ্গ ছেদের মধ্যে প্রায় নষ্টের গোড়া ছেদের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। কেউ বা বলছেন, হতাশা-অবসাদের জেরে আবেগ বা উন্মাদনা চরম পর্যায়ে গেলে যন্ত্রণার বোধও কাজ করে না। কেউ আবার এর কোনও সরল ব্যাখ্যা সম্ভব নয় বলেই মনে করেন। সমাজতাত্ত্বিকদের মতে অবশ্য আদিম প্রবৃত্তি এবং সামাজিক রীতির টানাপড়েন এমন পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে শঙ্করকে।

হরিনাভি ও গরফায় দু’টি আলাদা ফ্ল্যাটে দুই স্ত্রীর আলাদা সংসার ছিল শঙ্করের। দু’টি সংসারেই ছোট দু’টি বাচ্চা। এর বাইরেও অসংযমী জীবনযাপন, বহু মহিলা সংসর্গ তার জীবনে জটিলতা ডেকে আনে বলে দাবি শঙ্করের আত্মীয়দের।

নিম্নবিত্ত দশা থেকে উঠে এসে পেশাগত ভাবে সফল হয়েও ফের দেনার দায়ে আর্থিক ভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছিল শঙ্কর। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জয়রঞ্জন রামের ব্যাখ্যা, “জীবনের এই পরিণতির জন্য প্রথম রিপুর তাড়নাই (কামস্পৃহা) দায়ী বলে হয়তো ধরে নিয়েছিল শঙ্কর। তাই মৃত্যুর আগে নিজের পুরুষাঙ্গটি ছিন্নভিন্ন করে এক ধরনের প্রতীকি প্রতিশোধ নিতে যায় সে।”

পেশাগত অভিজ্ঞতায় পুরুষাঙ্গচ্ছেদের আরও কয়েকটি ঘটনা দেখেছেন রাম। যেমন, ৬৫ বছরের এক পুরুষ একই ভাবে পুরুষাঙ্গচ্ছেদ করে, ব্লেড দিয়ে শিরা কাটতে গিয়েছিলেন। তাঁর মেয়ে এসে পড়ায় প্রাণে বেঁচে যান। রাম জানালেন, ওই প্রবীণ মানুষটি কমবয়সী মহিলাদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আকর্ষণের জন্য নিজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই এ কাজ ঘটিয়েছিলেন। তবে চিকিৎসা করিয়ে তিনি এখন সুস্থ।

কিন্তু নিজের শরীরে এতটা নির্মম ভাবে আঘাত করা বা যন্ত্রণা সহ্য করা এক জন মানুষের পক্ষে কী ভাবে সম্ভব? মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মত, আবেগ বা উন্মাদনার একটা চরম পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রেই যন্ত্রণার বোধশক্তি অসাড় হয়ে যায়। হতাশা ও অবসাদের চূড়ান্ত ধাক্কায় কেউ কেউ নিজের সঙ্গে সাংঘাতিক নৃশংস কিছু করতেও কসুর করে না। শঙ্করও দুই স্ত্রী, একরত্তি দুই সন্তানের প্রতিও মায়া করেনি।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখলেও আদিম প্রবৃত্তিই শঙ্করের পরিণতির জন্য দায়ী ভাবাটা যুক্তিসঙ্গত মনে করছেন অনেকে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, সঙ্কটের সঙ্গে শঙ্করের সামাজিক মূল্যবোধ বা সংস্কারও জড়িয়ে। “ব্যক্তিজীবনে বহুগামী হয়েও সামাজিক রীতি সে অস্বীকার করতে পারেনি। সামাজিক চাপও এই ঘটনার একটি কারণ। আদিম প্রবৃত্তির ফলে সামাজিক জীবন টালমাটাল হওয়ার ক্ষোভেও কেউ এমন করতে পারে।”

তবে নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমন মারাত্মক ভাবে জখম করার ঘটনা যে মোটেও সচরাচর ঘটে না, এটা মনে করাতে ভুলছেন না মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ দেব। কিন্তু যে মানসিক অবস্থায় এক জন এমনটা করতে পারে, তাতে নিজের পুরুষাঙ্গটিকে দুর্গতির প্রতীক হিসেবে দেখার মতো চিন্তাভাবনার শক্তি থাকাটা সম্ভব নয় বলেই যুক্তি দিয়েছেন তিনি। জটিল স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা দ্বৈত সত্তার শিকার কোনও কোনও রোগী অবলীলাক্রমে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলছেন, এমন ঘটনা অবশ্য অনিরুদ্ধবাবু আগে দেখেছেন।

তাঁর কথায়, “নিজেকে এ ভাবে যন্ত্রণা দেওয়া বিরল হলেও যাঁরা এটা করেন, তাঁদের মধ্যে পুরুষাঙ্গ বা ক্লিটোরিস ছিন্ন করার ঘটনা কিন্তু ঘটতে দেখা যায়।” কিন্তু এই ঘটনার কোনও নির্দিষ্ট সরল ব্যাখ্যা হতে পারে না বলেই তিনি মনে করছেন।

sankar karmakar rohini murder case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy