Advertisement
E-Paper

কৌশলে প্রত্যাখ্যান করছে নীল-সাদারাও

দৃশ্য ১: রাত সাড়ে ন’টা। হাজরা মোড়। ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একটি নো-রিফিউজাল ট্যাক্সি। ছাই রঙের ট্রাউজার্স-সাদা জামা পরা এক যুবক ট্যাক্সিতে হেলান দিয়ে মোবাইলে কথা বলছেন। উইন্ডস্ক্রিনের বাঁ-দিকে সাঁটা ছোট বোর্ড। তাতে লাল কালিতে ইংরেজিতে লেখা ‘গ্যারাজ’। যুবক ফোন ছাড়তেই এক যাত্রী তাঁকে বললেন, কসবা যেতে চান। যুবকের জবাব, ‘আমি চালক নই’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩৭
বোর্ডে কখনও লেখা ‘গ্যারাজ’, কখনও বা ‘লাঞ্চ’। ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির নানা অজুহাত।  —নিজস্ব চিত্র।

বোর্ডে কখনও লেখা ‘গ্যারাজ’, কখনও বা ‘লাঞ্চ’। ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির নানা অজুহাত। —নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: রাত সাড়ে ন’টা। হাজরা মোড়। ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একটি নো-রিফিউজাল ট্যাক্সি। ছাই রঙের ট্রাউজার্স-সাদা জামা পরা এক যুবক ট্যাক্সিতে হেলান দিয়ে মোবাইলে কথা বলছেন। উইন্ডস্ক্রিনের বাঁ-দিকে সাঁটা ছোট বোর্ড। তাতে লাল কালিতে ইংরেজিতে লেখা ‘গ্যারাজ’। যুবক ফোন ছাড়তেই এক যাত্রী তাঁকে বললেন, কসবা যেতে চান। যুবকের জবাব, ‘আমি চালক নই’।

কিছুক্ষণ পরে অন্য এক যাত্রী এসে ওই যুবককে নিচু স্বরে কিছু বললেন। ওই যাত্রীকে ট্যাক্সিতে উঠিয়ে নিয়ে বাঁ দিক থেকে বোর্ডটি নামিয়ে রাখলেন সেই যুবক। তার পরে সেই যাত্রীকে নিয়ে ভবানীপুরের দিকে রওনা হলেন।

উল্টো দিকের ফুটপাথের এক পান দোকানি জানালেন, এটাই ওই অঞ্চলে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের কায়দা।

দৃশ্য ২: বেলা ১২টা। ই এম বাইপাসের রুবি মোড়। ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নীল-সাদা ‘নো-রিফিউজাল’ ট্যাক্সি। উইন্ডস্ক্রিনের বাঁ দিকে ঝোলানো রয়েছে ‘লাঞ্চ’ লেখা বোর্ড। চালকের আসনে কেউ নেই। কিছু দূরে এক জন ছাই রঙের ট্রাউজার্স ও কালো শার্ট পরে ঘোরাফেরা করছেন। মাঝে মধ্যে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। ওই স্ট্যান্ডে হলুদ রঙের বেশ কয়েকটি ট্যাক্সিও দাঁড়িয়ে। কিন্তু তাঁরাও যাত্রীদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। এক যাত্রী এসে জানালেন, তিনি বানতলা যেতে চান। কোনও চালকই রাজি হলেন না। বানতলার ওই যাত্রীকে ইশারায় ডেকে নিলেন ছাইরঙা প্যান্ট ও কালো জামা পরা যুবকটি। তাঁর সঙ্গে নিচু স্বরে কিছু আলোচনা করলেন। এর পরে ‘লাঞ্চ’ লেখা বোর্ডটি খুলে নিয়ে সেই যাত্রীকে নিয়ে রওনা হলেন।

দৃশ্য ৩: উল্টোডাঙা মোড়। কয়েকটি হলুদ ট্যাক্সির মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে নো-রিফিউজাল একটি ট্যাক্সি। এক মহিলা সব ট্যাক্সি ছেড়ে নো-রিফিউজাল ট্যাক্সিটির দিকে এগিয়ে গেলেন। তাঁর হাতে দু’টি বড় ব্যাগ। ট্যাক্সির ভিতরে বসে রয়েছেন চালক। ওই মহিলা প্রায় দরজা খুলে উঠেই পড়ছিলেন। তাঁকে বাধা দিয়ে চালক জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ মহিলা জানালেন, ‘গড়িয়া।’ শুনে ট্যাক্সিচালকের জবাব, ‘বুকিং রয়েছে। যাত্রী নিয়ে এসেছি। তাঁকে নিয়েই ফেরত যাব।’ এর পরে পাশের হলুদ ট্যাক্সিচালকদের কাছে গেলেন ওই মহিলা। গড়িয়া যেতে তাঁরা বাড়তি ২০ টাকা দাবি করলেন। অগত্যা তাতেই রাজি হতে হল মহিলাকে।

এ ভাবেই কখনও ‘লাঞ্চ’ বা ‘গ্যারাজ’ বোর্ড ঝুলিয়ে, কখনও নানা কায়দায় যাত্রী প্রত্যাখ্যান করছেন নীল-সাদা রঙের ‘নো-রিফিউজাল’ ট্যাক্সিচালকদের একাংশ। এ ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির ফারাক ক্রমশ কমছে বলেই যাত্রীদের অভিযোগ। এ ব্যাপারে কী বলছেন ওই ট্যাক্সির চালকেরা?

নীল-সাদা নো-রিফিউজাল লেখা এক ট্যাক্সিচালকের বক্তব্য, “সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। ফেরার পথে যাত্রী না পেলে লোকসান সইতে হবে। হলুদ ট্যাক্সি ও নো-রিফিউজাল একই ভাড়া। একই দামে ডিজেল কিনতে হয়। গাড়ির ট্যাক্সও এক। কোথাও কোনও ছাড়া নেই। তা হলে আমাদের পোষাবে কী করে?”

কী বলছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা? রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “পরিবহণ দফতর ও পুলিশকে পরিস্থিতির উপরে নজরদারি চালাতে নির্দেশ দিয়েছি। এমনটা হওয়া উচিত নয়। ধরতে পারলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

no refusal taxi kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy