Advertisement
E-Paper

কড়ি ফেললেই কারাগার এখানে সব পেয়েছির দেশ

কলকাতায় নাকি টাকা দিলে বাঘের দুধও পাওয়া যায়। শহরের জেলগুলিই বা তার থেকে আলাদা হবে কেন! প্রেসিডেন্সি হোক বা আলিপুর জেল মানেই এখানে সব পেয়েছির দেশ। কুণাল-কাণ্ডের কয়েকটা ‘অ্যালপ্রাজোলাম’ আর কী এমন ব্যাপার! বিচারাধীন কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কোনও বন্দি জেলে এলে প্রথমে তাঁকে রাখা হয় আমদানি ওয়ার্ডে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৪ ০০:১৬

কলকাতায় নাকি টাকা দিলে বাঘের দুধও পাওয়া যায়। শহরের জেলগুলিই বা তার থেকে আলাদা হবে কেন! প্রেসিডেন্সি হোক বা আলিপুর জেল মানেই এখানে সব পেয়েছির দেশ। কুণাল-কাণ্ডের কয়েকটা ‘অ্যালপ্রাজোলাম’ আর কী এমন ব্যাপার!

বিচারাধীন কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কোনও বন্দি জেলে এলে প্রথমে তাঁকে রাখা হয় আমদানি ওয়ার্ডে। সেখান থেকেই জেনে নেওয়া হয় ওই বন্দির কী কী ‘বেআইনি’ জিনিস প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী, প্রথম রাতেই তাঁকে দামের তালিকা তৈরি করে দেওয়া হয়। যেমন, সিম কার্ড পেতে গেলে এক রকম ‘চার্জ’। মোবাইল ব্যবহার করলে আবার আলাদা। তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রতি মিনিটের হিসেবে আবার পৃথক ভাড়া। বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে যে রকম টাকা পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী ওই বন্দিও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখতে পারবেন বাইরের জগতের সঙ্গে।

মোবাইলের সিম কার্ডের পাশাপাশি ঢালাও ব্যবসা চলে মাদকেরও। বিড়ি-সিগারেট তো আছেই, জেলের মধ্যে অবাধ যাতায়াত গাঁজা, মদ, চরস থেকে শুরু করে নানা রকমের মাদকের। কারা দফতরের এক অফিসার বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই মাদকাসক্ত বন্দিরা জেলে দিনের পর দিন থাকছেন, অথচ তাঁদের কোনও সমস্যাই হচ্ছে না। কারণ, জেলের মধ্যে বসেই তিনি তাঁর প্রয়োজনের মাদক পেয়ে যাচ্ছেন।”

যেমন ধরা যাক শুক্রবার কুণাল-কাণ্ডের পরে আলোচনার শিরোনামে উঠে আসা প্রেসিডেন্সি জেলের কথাই। পুজোর ঠিক আগে ওই জেলেই আচমকা তল্লাশিতে উদ্ধার হয়েছিল বেশ কয়েকটি মদের বোতল। শুধু মদ নয়, গত এক বছরে দফায় দফায় কলকাতার তিনটি সেন্ট্রাল জেলে একাধিক বার উদ্ধার হয়েছে গাঁজা, চরস-সহ নানা ধরনের মাদক।

আর মোবাইলের ব্যবহার তো দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণ্ডিতে ঢুকে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর বছর কয়েক আগে জানতে পেরেছিল, কলকাতার আলিপুর জেলে বসে পাকিস্তানে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আফতাব আনসারি। কয়েক মাস আগে আলিপুর জেলে থাকা লস্কর জঙ্গি আব্দুল সুভান দিল্লি পুলিশের কাছে জেরায় জানিয়েছেন, জেলে বসে তিনি দেদার ‘আইএসডি কল’ও করেছেন। এমনকী, ছকও কষেছেন বিস্ফোরণের। জেলে বসেই আবার তৃণমূল নেতা শম্ভুনাথ কাও সটান ফোন করে রাজ্যেরই এক মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন তাঁর জামিনের ব্যবস্থা করতে। গত এক বছরে শুধু কলকাতার তিনটি সেন্ট্রাল জেল থেকে উদ্ধার হয়েছে পাঁচশোরও বেশি সিম কার্ড।

কিন্তু কী ভাবে এমন সব পেয়েছির দেশ হয়ে উঠেছে শহরের জেলগুলি?

কারা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এর পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এক শ্রেণির কারাকর্মীরা এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। দ্বিতীয়ত, পর্যাপ্ত পরিমাণে কারাকর্মী না থাকায় নজরদারি এড়িয়ে অপরাধ করা বন্দিদের ক্ষেত্রে অনেকটাই সহজ হয়ে যাচ্ছে। কারা দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তার কথায়, “জেলে বেআইনি জিনিস নিয়ে বন্দিরা সাধারণত ঢোকে আদালত থেকে ফেরার পথে। জেলে ঢোকার ক্ষেত্রে কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং তল্লাশিতে ঢিলেমি না থাকলে এমনটা সম্ভবই নয়।”

আবার মোবাইল সিম কার্ডের ক্ষেত্রেও জেলের কর্মীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বন্দিদের মোবাইলে কথা বলতে সাহায্য করেন। এক বিচারাধীন বন্দির দাবি, “আমি জেলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িতে একটি নম্বর পাঠিয়ে দিয়ে বলা হল, তাতে টপ-আপ ভরে দিতে। যেমন ধরুন, দু’শো টাকা টপ-আপ ভরলে কথা বলা যেত দশ মিনিট। তার মধ্যে মোবাইল আর সিম কার্ডের ভাড়াও রয়েছে।”

জেলে মোবাইলের অবাধ যাতায়াত রুখতে সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া প্রতিটি সিম কার্ড নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখিয়ে সিম কার্ড তোলা হয়েছে। ঠিক যে ভাবে সম্প্রতি খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে জানা গিয়েছে, বুরহান শেখ নাম নিয়ে নিজের ছবি লাগিয়ে প্যান কার্ড বাগিয়েছিল ওই ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত সাজিদ।

এই অবস্থায় এখন কলকাতার সব জেল আরও বেশি করে সিসিটিভি-র নজরদারিতে আনতে চাইছে কারা দফতর। যা থেকে এ বার বাদ যাবেন না কারারক্ষীরাও।

কিন্তু তাতে কি জেলের ভিতরে ‘সব কিছু’র আনাগোনা কমবে? এক কারাকর্তার জবাব, “যেখানে সর্ষের মধ্যে ভুত, সেখানে কোনও নিরাপত্তার বেষ্টনীই কিছু করতে পারে না। জেল থাকবে সেই সব পেয়েছির দেশেই।”

alipore central jail presidency jail phone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy