Advertisement
E-Paper

ছেলেকে ‘খুন’ করে আত্মহত্যার চেষ্টা মায়ের

ঘরের ভিতরে বঁটি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। কব্জি, গলা থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। পাশে খাটে পড়ে একরত্তি ছেলের দেহ। গলায় ওড়নার ফাঁস! রবিবার সকালে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন সার্ভে পার্ক থানার বৈকুণ্ঠ সাহা রোডের একটি বহুতলের বাসিন্দারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০২:০৭
সার্ভে পার্কের বাড়িটিতে তদন্তে পুলিশ। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

সার্ভে পার্কের বাড়িটিতে তদন্তে পুলিশ। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

ঘরের ভিতরে বঁটি হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক মহিলা। কব্জি, গলা থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। পাশে খাটে পড়ে একরত্তি ছেলের দেহ। গলায় ওড়নার ফাঁস!

রবিবার সকালে এই দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠেছিলেন সার্ভে পার্ক থানার বৈকুণ্ঠ সাহা রোডের একটি বহুতলের বাসিন্দারা। আঁতকে উঠেছিলেন ওই মহিলার দুই দাদাও।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার মাঝরাতে ছোট ছেলে দেবাঙ্গনকে (৫) নিজের কাছে শুতে নিয়ে গিয়েছিলেন দেবযানী চৌধুরী নামে ওই মহিলা। এ দিন ভোরে তিনি-ই ছোট ছেলেকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন বলে অভিযোগ। তার পরে গলার নলি ও হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন ওই মহিলা। ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি চিঠিও। তাতে দেবযানী ছেলেকে খুন করার কথা স্বীকার করেছেন বলেও পুলিশের দাবি। আপাতত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই মহিলা দক্ষিণ শহরতলির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি মানসিক রোগে ভুগছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন পরিজনেরা।

দেবযানীর বাড়ির লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, তাঁর স্বামী দেবাশিস চৌধুরী প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে চাকরি করেন। আপাতত তিনি দেহরাদূনে কর্মরত। দুই ছেলেকে নিয়ে দেবযানীও সেখানেই থাকতেন। গত ডিসেম্বরে তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তার পরেই চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি দুই ছেলেকে নিয়ে সার্ভে পার্কের বৈকুণ্ঠ সাহা রোডে বাপের বাড়িতে চলে আসেন তিনি। সেখানে তাঁর দুই দাদার দু’টি ফ্ল্যাট রয়েছে। দেবযানীর বড় ছেলে দেবার্ক তাঁর বড়মামা শুভময় রায়ের কাছে থাকে। কলকাতার একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সে। ছোট ছেলেকে নিয়ে ছোড়দা দীপঙ্কর রায়ের ফ্ল্যাটে থাকতেন দেবযানী। এ দিনের ঘটনার পর তাঁর স্বামীকে খবর দেওয়া হয়েছে।

দীপঙ্করবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর বোনের মানসিক চিকিৎসা চলছিল। প্রচুর ওষুধও খেতে হত তাঁকে। তাই রাতে ভাগ্নে দেবাঙ্গনকে নিয়ে ঘুমোতেন দীপঙ্করবাবু। শনিবার রাতেও তা-ই করেন। দীপঙ্করবাবু জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরেই দেবাঙ্গন জ্বরে ভুগছিল। শনিবার রাত তিনটে নাগাদ দেবযানী ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চান। দীপঙ্করবাবু বোনের ঘরে ভাগ্নেকে দিয়ে আসেন।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ বোনের ঘরের সামনে যেতেই সন্দেহ হয় দীপঙ্করবাবুর। কারণ, তাঁর বোন রাতে ঘুমোনোর সময়ে দরজা বন্ধ করতেন না। কিন্তু এ দিন দরজা বন্ধ ছিল। অনেক ডাকাডাকিতেও সাড়া না পেয়ে দাদা শুভময়বাবুকে খবর দেন দীপঙ্করবাবু। শুভময়বাবু ও আরও কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দার সাহায্যে দরজা ভাঙতেই রক্তাক্ত অবস্থায় বোনকে দেখতে পান তাঁরা। নজরে আসে ফাঁস লাগানো অবস্থায় ছোট ভাগ্নের দেহও। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

দেবযানীর ঘর থেকে একটি চিঠিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাতে লেখা রয়েছে, তিনি স্বামী এবং অন্য সকলের কাছে ক্ষমা চাইছেন। তিনি এ-ও লিখেছেন, তাঁর ছেলে খুব ছোট হওয়ায় তাকেও তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ও তাঁর সন্তানের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ওই সুইসাইড নোটের কাছ থেকে একটি সোনার বালা, নোয়া বাঁধানো এবং একটি সোনার আংটি পাওয়া গিয়েছে। যে বঁটি দিয়ে মহিলা আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন বলে পুলিশের দাবি, সেটি রান্নাঘরের সিলিন্ডারের পিছন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

নিজের হাতে ছেলেকে খুন করার ঘটনায় অবশ্য কোনও আক্রোশের ইঙ্গিত পাচ্ছেন না মনস্তত্ত্ববিদেরা। বরং দেবযানীর ঘটনাকে গভীর মানসিক অবসাদের ঘটনা হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে বাস্তববোধহীনতা জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ওই চিঠিতে নিজের ছোট ছেলের প্রতি স্নেহের দিকটাও ফুটে উঠেছে।

মনস্তত্ত্ববিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, ওই মহিলা গভীর অবসাদে ভুগছিলেন। নিজের পরিবারের সঙ্গে মানাতেও পারছিলেন না। তারই ফল হতে পারে এটা। “কিন্তু এ সবই প্রাথমিক মত। ঠিক কী কী কারণে এমন হল, তা জানতে ওই মহিলা ও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন,” বলছেন নীলাঞ্জনাদেবী।

survey park debjani chowdhury murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy