পুরভোটের ওয়ার্ম-আপ। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারকে এ ভাবেই দেখছেন কলকাতা পুরসভার শাসক ও বিরোধী দলের বেশির ভাগ কাউন্সিলর। তাঁদের বক্তব্য, ১০-১১ মাস পরেই কলকাতার পুরভোট। তার আগে গা ঘামানোর সুযোগ মিলেছে এই ভোটে। জনসংযোগের নিরিখে যা বাড়তি লাভ বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারও কারও অবশ্য মত, সারা বছর যারা পড়াশোনা করে, পরীক্ষার আগে তাদের বেশি খাটতে হয় না।
কলকাতা পুরসভায় এখন ১৪৪টি ওয়ার্ড। ১৪১টি-তে রয়েছেন নির্বাচিত কাউন্সিলর। জোকা-১ এবং জোকা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত যুক্ত হওয়ায় তিনটি ওয়ার্ড এ বারই বেড়েছে পুরসভায়।
লোকসভার তিনটি কেন্দ্র ঘিরে রয়েছে ১৪৪টি ওয়ার্ড। কেন্দ্রগুলি হল কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ ও যাদবপুর। ১-৫৯ এবং ৬২ ওয়ার্ড কলকাতা উত্তরে। ৬০, ৬১, ৬৩-৯৩, ১০৭, ১০৮ এবং ১১৫-১৪৪ ওয়ার্ড কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে। আর ৯৪-১০৬ এবং ১০৯-১১৪ যাদবপুর কেন্দ্রে।
৮১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর জুঁই বিশ্বাস চষে বেড়াচ্ছেন নিজের এলাকা। বললেন, “ওয়ার্ম-আপ করছি। সামনের বছর তো পুরভোট।” তাঁর কথায়, “দুর্ভোগের কথা ভেবে কারণে-অকারণে মিছিলে নিষেধ আছে দলের। প্রচারে অবশ্য তাতে ছাড় রয়েছে। ওয়ার্ডে মিছিল করে জনমত যাচাই করতে পারছি।”
পুরসভার বিরোধী দল সিপিএমের মুখ্য সচেতক অমল মিত্রও মনে করেন, পুরভোটের ওয়ার্ম-আপ চলছে। ১১৪ নম্বরের কাউন্সিলর অমলবাবুর কথায়, “চার বছর পরে ওয়ার্ডে দলের দখল বাড়াতে খাটতে হবেই। এই ভোটের ফল দেখেই মেটাতে হবে ঘাটতি।”
নিজের ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী সোমেন মিত্রকে জেতাতে জোরকদমে নেমেছেন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায়। বললেন, “ভোটের আগে এলাকাবাসী নানা অভাব-অভিযোগের কথা শোনান। যা পূরণের চেষ্টা করলে লোকসভা ভোটের সঙ্গে আগামী পুরভোটেও এগিয়ে থাকা যাবে।” ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর মৌসুমী ঘোষ সিপিআই নেতা প্রয়াত চঞ্চল ঘোষের মেয়ে। উত্তর কলকাতার বাম প্রার্থী রূপা বাগচীর সমর্থনে ঘুরছেন এলাকায়। তাঁর কথায়, “নিয়ম করে রোজ সকালে অফিসে এলাকার অভাব-অভিযোগ শুনি। এখন তো ভোট চাইতে এলাকার বাড়ি-বাড়ি যাচ্ছি। জনসংযোগ বাড়ছে। যা পুরভোটে কাজে তো লাগবেই।” ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত বলেন, “এ বার মোদী-হাওয়া প্রবল। এখানে প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। লড়াইয়ে বিরোধীদের টেক্কা দেওয়াটা কাজে লাগবে পুরভোটেও।” ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর সুমন সিংহও এ ভাবে পুরভোটের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন বলে জানান।
পুরসভার মেয়র পারিষদ ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবাশিস কুমার প্রচার চালাচ্ছেন কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সীর সমর্থনে। বললেন, “দুটো নির্বাচনের প্রেক্ষিত আলাদা। তাই এই ভোটকে পুরভোটের ওয়ার্ম-আপ বলে মনে করি না। শহরের জল, জঞ্জালের সমস্যা মেটানোর ভার পুরসভার। সেখানে প্রচারে ওই সব প্রসঙ্গ ওঠে। এটা তো দেশ গড়ার ভোট।” যদিও সংগঠনের সক্রিয়তা যাচাইয়ে দুই ভোটের সম্পর্ক অবশ্যই আছে বলে মনে করেন তিনি। যা মূলত, ভোট প্রস্তুতিতে সহায়তা করে।
মেয়র পারিষদ সুশান্তকুমার ঘোষ এই ভোটকে পুরভোটের ওয়ার্ম আপ মনে করেন না। ১০৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তর কথায়, “সারা বছর ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। এলাকায় গিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনি।” পুরভোটের প্রস্তুতির জন্য লোকসভা ভোটের সময়টাকে বাছার কারণ দেখছেন না তিনি। তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা সারা বছর পড়েন, পরীক্ষার সময়ে তাঁদের বেশি পড়তে হয় না।”