অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
কথায় আছে ‘আর্লি বার্ড ক্যাচেস দ্য ফ্লাইট’।
কিন্তু, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে এই আসল ‘বার্ড’ বা পাখিদের বিমান ধরার কোনও তাড়া থাকে না। ভোরের আলস্য ঝেড়ে ফেলে তারা ডানা মেলে যত্রতত্র উড়ে বেড়ায় টার্মিনালের ভিতরে।
তাতে সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু যাঁদের উড়ান ধরার তাড়া থাকে, তাঁদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে আচমকাই ‘পিচিক’ করে উপর থেকে যদি কেউ প্রাতঃকৃত্য সারে তা হলে তো মাথাব্যথার কারণ হতেই পারে। এবং হয়েওছে তাই। গোটা কয়েক পায়রা, দু’তিনটে কাক, চড়াই, শালিক— সব মিলিয়ে ৮-১০ জন। কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের ভিতরে রীতিমতো এবং নিয়মিত নিশিযাপন শুরু করেছে মুক্ত বিহঙ্গের দল।
তবে টার্মিনালের ভিতরে পাখিদের এই বিচরণ বিচলিত করতে পারেনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিমানবন্দরের অধিকর্তা ভাগবতপ্রসাদ শর্মা সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। এশিয়ার বিমানবন্দরগুলির মধ্যে কলকাতা বিমানবন্দর তার গুণমানের জন্য যে পুরস্কার পেয়েছে, তা-ই আনতে গিয়েছিলেন তিনি। সেই বিমানবন্দরে দেখেছেন পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। অধিকর্তা বলেন, “পোষা পাখি। দেখে বেশ ভাল লাগল। টার্মিনালের একটি এলাকায় তারা ঘুরে বেড়ায়, উড়ে বেড়ায়। যাত্রীরা গিয়ে তাদের খাবারও দেন।” তাই, কলকাতার পাখিদের নিয়ে চিন্তিত নন ভাগবতপ্রসাদ। উল্টে, কলকাতাতেও এমন পাখি পোষার পরিকল্পনা চলছে বলে জানান তিনি।
কলকাতার নতুন টার্মিনালের ভিতরের দিকে কিছু কিছু জায়গায় ছোট ছোট জলাধার তৈরি করা হয়েছে। অধিকর্তার পরিকল্পনা অনুযায়ী জল ভালবাসে, এমন সব পাখিদের খোঁজ শুরু হয়েছে। তাদের এনে ওই জলাধারের কাছে ছেড়ে দিলে তারা ওই এলাকায় ঘোরাফেরা করবে। যাত্রীরা খুশি হবেন। কলকাতা বিমানবন্দরের টুপিতে যোগ হবে নতুন এক পালক।
আপাতত অবশ্য ঠিক হয়েছে, যে পাখিরা অনধিকার প্রবেশ করে বসে রয়েছে তাদের তাড়াতে হবে। রানওয়ের আশপাশে শেয়াল দেখা গেলে যাঁদের শরণাপন্ন হতে হয়, এ ক্ষেত্রে সেই বন দফতরেরই দ্বারস্থ হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বন দফতরের জনা পাঁচেক অফিসার এসে ঘুরে দেখে গিয়েছেন বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল। অনেক পর্যবেক্ষণের পরে চেক-ইন এলাকায় গোটা দুই পায়রা এবং নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে একটি ভিজে কাক দেখতে পাওয়া গিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারা সবাই ছিল হাতের নাগালের অনেক বাইরে।
এই পক্ষী-কুলের গতিবিধি নিয়ে ভিন্নমতও পাওয়া গিয়েছে। কেউ বলেছেন, প্রায় সাত-আট মাস ধরে এরা ঘুরে (উড়ে) বেড়াচ্ছে টার্মিনালের ভিতরে। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ছাদের কোনায় গিয়ে বসছে। আবার উড়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, সম্ভবত ছাদ আর কাচের দেওয়ালের ফাঁক দিয়ে এরা ঢুকে এসেছে টার্মিনালের ভিতরে। তারপর আর বেরোনোর জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের ফেলে রাখা খাবারের টুকরো থেকে আরামে দিনযাপন চলছে। অত বড় টার্মিনালে বেশির ভাগ সময়েই লুকিয়ে থাকছে। সব সময়ে তা চোখে পড়ছে না যাত্রী এবং কর্তৃপক্ষের অফিসারদের। অধিকর্তা বলেন, “টার্মিনালে ঢোকা-বেরনোর ২০টি গেট। আমার সন্দেহ, সেই গেট দিয়েই এরা ঢুকেছে।”
অন্য মত, এরা নিয়মিত বাইরে থেকে যাতায়াত করছে। নয়তো মঙ্গলবার নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কী করে ভিজে কাক দেখা গেল? সে নিশ্চয় বাইরে গিয়েছিল। বৃষ্টিতে ভেজার পরে ভিতরে এসেছে। পাখির দলের উপস্থিতির বেশ প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে চকচকে মেঝের উপরে। এক অফিসারের সরস মন্তব্য, “কখন আমাদের মাথার উপরে অথবা সুবেশী বিমানসেবিকার ঘাড়ে এসে পিচিক করে পড়ে, তার আশঙ্কায় রয়েছি। এখনও সে ভাবে কোনও যাত্রী অবশ্য অভিযোগ করেননি।”
তবে, চাইলেও তো তাড়ানো সম্ভব নয়। অত উঁচু ছাদ পর্যন্ত কী করে পৌঁছবে বনকর্মীদের হাত? নতুন ঝাঁ-চকচকে টার্মিনালের ভিতরে খাঁচা পেতে ধরাটাও তো কাজের কথা নয়। তাই, মঙ্গলবার খানিকটা মাথা চুলকে ফিরে গিয়েছেন বন দফতরের অফিসারেরা। বন দফতরের ডিএফও কুলানদাইভে অবশ্য জানাচ্ছেন, পাখি ধরতে গেলে খাঁচা পাতা ছাড়া আর উপায়ই বা কী! সে না হয় এক দিন খাঁচা পাততে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy