বিরিয়ানির বাহার। —নিজস্ব চিত্র।
খ্রীষ্ট ও কৃষ্ণে ফারাক না-থাকতে পারে! বিরিয়ানিতে বিরিয়ানিতে বিরাট প্রভেদ।
কারিপাতাওলা হায়দরাবাদি বিরিয়ানি তাই বহু বাঙালির মুখে রোচে না। বিরিয়ানিতে আলু নিয়ে বাঙালির আদিখ্যেতারও সর্বত্র সুনাম নেই। কিংবা চাঁপ-স্টুয়ের ঝোল মেখে ডাল-ভাতের মতো বিরিয়ানি খাওয়া! তা-ও সক্কলে ভাল চোখে দেখবেন না।
কে সেরা? বিরিয়ানির জাত-কুল নিয়ে তর্ক নিরর্থক। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে ‘ঔধ ১৫৯০’ রেস্তোরাঁর নিবেদন খাঁটি আওয়াধি কি না, তা নিয়ে কারও অবিশ্বাস থাকতে পারে, কিন্তু বিরিয়ানির রাজকীয় মহিমা নিয়ে সংশয়ের জায়গা নেই।
কলকাতার খাঁটিতম বিরিয়ানি বলে আজও কলার তোলে চিত্পুরের সাবেক রয়্যাল হোটেল। ঘন হলুদ সে-বিরিয়ানি লখনউয়ি কেতায় আলুর ‘না-পাক স্পশর্’ এড়িয়ে চলেছে। ‘ঔধ’-এর শৈলী রয়্যালকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে। আবার নিজের স্বাদেও বিশিষ্ট। মাটন পায়ার নির্যাস মেশানো ভাত দমে পেকে খোলতাই। এই ঘি-সুরভিত শাহি পায়া বিরিয়ানি পাতে পড়লে, স্রেফ ‘হাপুস হুপুস শব্দ, চারিদিক নিস্তব্ধ’!
রেস্তোরাঁর কর্ণধার দু’ভাই শিলাদিত্য ও দেবাদিত্য চৌধুরীর মতে, খাঁটি আওয়াধি রান্নার আত্মা হল ঘি। ঘি-তে আপস চলবে না। ওয়াজিদ আলি শাহের বংশের মেয়ে রিপন স্ট্রিটবাসী মনজিরাত খান এই তত্ত্ব মানেন না। কাল, রবিবার দেশপ্রিয় পার্কেই তাম রেস্তরাঁয় একবেলার মহাভোজে তাঁর নিজের বাড়ির বিরিয়ানি পেশ করবেন তিনি। লখনউ থেকে মেটিয়াবুরুজ-যাত্রার পরে আওয়াধি বিরিয়ানির বিবর্তনের স্মারক সে-সৃষ্টি। মনজিরাত তাঁর মা মামলিকাত বদরের কথা বলছিলেন। “মায়ের আমল থেকেই আমরা সর্ষের তেলের বিরিয়ানিতে অভ্যস্ত। এবং আলু ছাড়া আমাদেরও রোচে না।”
ঔধ-এর বিরিয়ানি অবশ্য সাবেকপন্থী। সাদা আখনির মাটন বিরিয়ানি, মাহি পোলাও বা মাটন ভুনা খিচুড়িরও তাঁরা ব্যবস্থা রেখেছেন। এই আখনির বিরিয়ানি না কী বড়ঘরে বিয়ের দুপুরে সাঁটানোর রেওয়াজ! মাহি বা মেছো পোলাওটিও হাল্কা। ভুনা খিচুড়ি কিন্তু শুকনো, ঝরঝরে নয়। বরং খণ্ড-খণ্ড মাংস ভরপুর খিচুড়ির শরীরে লুকোন ঘিয়ের বহরে দেবভোগ্য। রসিক খাইয়েরা বছরভর ডায়েট করে, এমন স্বাদের জন্য পেটে জায়গা রাখবেন।
খিচুড়ি, পোলাও হল বিরিয়ানিরই জ্ঞাতিভাই। আর উপমহাদেশ জুড়ে বিরিয়ানির ভুবনে সত্যিই ‘যত মত তত পথ’। ঈশ্বর-আরাধনার সঙ্গে বিরিয়ানি-সাধনার মূল তত্ত্বটিতে আসলে ভেদ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy