অভিষেক প্রসঙ্গে নাম করেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে তোপ দাগলেন কুণাল ঘোষ। ফাইল চিত্র।
ব্যবধান ঠিক দেড় ঘণ্টার। তার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের টুইটের লক্ষ্য কে ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টে নাগাদ একটি টুইট করে কুণাল লিখেছিলেন, “সরাসরি রাজনীতিতে আসুন।” কারও নাম না করায় তিনি কার উদ্দেশে এই মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিল। তবে বোঝাও গিয়েছিলে তাঁর লক্ষ্য কে? তার ঠিক দেড় ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে চারটেয় সাংবাদিক বৈঠক করে সরাসরি নাম নিলেন কুণাল। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আবার বললেন, “চেয়ার ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে আসুন।”
ঘটনাপ্রবাহের সূত্রপাত কুণালের টুইটের ঠিক দেড় ঘণ্টা আগে। দুপুর দেড়টা নাগাদ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ ছিল দুর্নীতিতে ধৃত ও বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় প্রয়োজনে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করতে পারবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এরপরই টুইটে আক্রমণ করার পর সাংবাদিক বৈঠকেও বিচারপতির উদ্দেশে তোপ দাগেন কুণাল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলেন তিনি। কুণালের অভিযোগ, রাজনৈতিক নায়ক হওয়ার জন্য এক্তিয়ার-বহির্ভূত কাজ করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কুণালের আরও অভিযোগ, ‘‘বিরোধী দল কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপির মদতে ঠান্ডা মাথায় অভিষেকের চরিত্রহনন করছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।’’
তদন্তকে প্রভাবিত করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুণাল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বলেন, “এক জন অভিযুক্ত বক্তব্য রেখেছেন। এক জন নেতাও বক্তব্য রেখেছেন। আপনি একটা সুযোগ পেয়ে গেলেন। আপনি কি তদন্তের দায়িত্বে? আপনি তো তদন্তকে সমানে প্রভাবিত করছেন, পক্ষপাতদুষ্ট করছেন।” সেই সঙ্গে বলেন, “ক্ষমতা থাকলে বাম জমানার দুর্নীতিগুলোও তদন্তে যুক্ত করুন।” তাঁর অভিযোগ, ব্যক্তিগত প্রচারের জন্য আইনের বাইরে কাজ করছেন বিচারপতি। প্রকাশ্যে মুখ খোলার জন্য বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে যা খুশি করতে পারেন বলেও জানান কুণাল। সঙ্গে জানান, প্রয়োজনে তিনি জেলে যেতেও রাজি। তবে এই বক্তব্যের জন্য বিচারবিভাগ যাতে তাঁকে ভুল না বোঝে, সেই আর্জিও জানান কুণাল। তাঁর কথায়, “গোটা বিচারবিভাগ আমাকে ভুল বুঝবেন না আশা রাখি।” অন্য অনেক বিচারক, বিচারপতি ন্যায়ের পক্ষে বলেও মতপ্রকাশ করেন তিনি। আর ব্যতিক্রমী বলে খোঁচা দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে।
বিভিন্ন নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল এখন জেলবন্দি। গত ২৯ মার্চ শহিদ মিনারের সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছিলেন, সারদা মামলায় হেফাজতে থাকার সময় মদন মিত্র এবং কুণাল ঘোষকে তাঁর নাম নিতে বলেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনাচক্রে, কুন্তলও তার পরে একই অভিযোগ করেন। হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, একটি সভায় অভিষেক বলেছিলেন তাঁর নাম বলার জন্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে চাপ দেওয়া হয়েছিল। অভিষেকের মন্তব্যের সঙ্গে কুন্তলের চিঠির কোথায় সাযুজ্য রয়েছে, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন। এর পরেই কুণাল টুইটে লেখেন, ‘‘যে ভাবে কোনও ক্ষেত্রে বিচারপতির আসনের অপব্যবহার করে রাজনীতি করা হচ্ছে, বিরোধীদের অক্সিজেন দিতে নিজের উইশ লিস্ট বলা হচ্ছে, নিজেকে ব্যক্তি প্রচারে হিরো সাজানোর চেষ্টা চলছে, তাতে বিচারব্যবস্থার সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ওই চেয়ারটা ছেড়ে সরাসরি রাজনীতিতে আসুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy