Advertisement
E-Paper

এক মিনিটে দু’টো ইন্টারভিউ, সচিবের নোটে স্থগিত নিয়োগ

প্রথমে স্বল্প প্রচারিত কাগজে কর্মখালির বি়জ্ঞাপন। তার পর মিনিটে দু’জন করে প্রার্থীর ইন্টারভিউ। শেষে সফল প্রার্থীদের প্যানেলও তৈরি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:৩৬

প্রথমে স্বল্প প্রচারিত কাগজে কর্মখালির বি়জ্ঞাপন। তার পর মিনিটে দু’জন করে প্রার্থীর ইন্টারভিউ। শেষে সফল প্রার্থীদের প্যানেলও তৈরি।

কিন্তু শ্রম দফতরের সচিবই পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে আপত্তি তোলায় থমকে গেল ইএসআই হাসপাতালে ৮৬৯ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে যা নিয়ে এখন জল্পনা তুঙ্গে। ঘটনাচক্রে ওই শ্রমসচিবকে ইতিমধ্যেই অন্য দফতরে বদলি করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্নের কর্তাদের একাংশের দাবি, নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলার কারণেই তুলনায় গুরুত্বহীন পরিকল্পনা দফতরে পাঠানো হল তাঁকে। যদিও শ্রমমন্ত্রীর দাবি, এই বদলির সঙ্গে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

ঠিক কী ঘটেছে ইএসআই হাসপাতালে কর্মী নিয়োগ নিয়ে?

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, ৮৬৯ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের জন্য কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল গত বছর নভেম্বরে। বিজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রাথমিক ভাবে চুক্তির ভিত্তিতে এই নিয়োগ হবে সরাসরি ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে। সে জন্য চাকরিপ্রার্থীদের ১১ দিনের মধ্যে কলকাতায় শ্রম দফতরে এসে হাতে লেখা আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। পরে অবশ্য আবেদন করার মেয়াদ তিন দিন বাড়ানো হয়।

শ্রম দফতরের এক কর্তা জানান, প্রায় ১৬ হাজার দরখাস্ত জমা পড়ে। নানা কারণে চার হাজার আবেদন বাতিল হয়। তার পরে চলতি বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার প্রার্থীর ইন্টারভিউ নিয়ে মার্চ মাস নাগাদ প্যানেল তৈরি করে শ্রম দফতর।

জানুয়ারির মাঝামাঝিই শ্রম দফতরের সচিব পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন অনুপ অগ্রবাল। মার্চে সফল প্রার্থীদের প্যানেল তাঁর কাছে পেশ করা হতেই তিনি একগুচ্ছ প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম হল লিখিত পরীক্ষা নেওয়া। কেন্দ্রীয় সরকার যেখানে অধিকাংশ নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা নিচ্ছে, রাজ্যে সেখানে শুধু ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে নিয়োগ হবে কেন? তা ছাড়া, যে দু’টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল, দৈনিক সাকুল্যে কয়েক হাজার কপি ছাপা হয় তাদের। ফলে অনেকে নিয়োগের কথা জানতেই পারেনি। আবেদনের জন্য মাত্র ১৪ দিন সময়ও যথেষ্ট নয়। সর্বোপরি, ৩০ দিনে ১২ হাজার প্রার্থীর ইন্টারভিউ নেওয়া সম্ভব হল কী করে (সম্প্রতি ঠিক এই প্রশ্ন তুলেই রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ বাতিল করেছে হাইকোর্ট)? শ্রমসচিব ফাইলে নোট দেন, ‘এ ভাবে নিয়োগ বেআইনি। এ ভাবে নিয়োগপত্র দেওয়া অনুমোদন করা সম্ভব নয়।’

এর পরে ফাইলটি অর্থ দফতরে পাঠিয়ে অনুপবাবু জানতে চান, নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ কি না। নবান্নের খবর, অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও জানিয়ে দেন, এ ভাবে নিয়োগ আইনসম্মত নয়। পাকা চাকরি হোক বা চুক্তিভিত্তিক, যে কোনও নিয়োগের ক্ষেত্রেই লিখিত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক।

সরকারি সূত্রের খবর, নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত বাতিল হয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের প্রথম দফার শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক তাঁর সচিবের উপর রুষ্ট হন। কিন্তু ততক্ষণে ভোট এসে পড়ায় বিষয়টি নিয়ে আর নাড়াচাড়া হয়নি। তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসার পরে শ্রম দফতরের পাশাপাশি আইন দফতরেরও মন্ত্রী হন মলয়বাবু। তিনি এ বার নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইলটি পাঠান আইন দফতরে, তাদের মতামত চেয়ে। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘আইন দফতর জানিয়েছে, নিয়োগ সঠিক পদ্ধতিতেই হচ্ছে। ফাইল ফের অর্থ দফতরে পাঠানো হয়েছে।’’ অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ফাইলটি আবার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান মলয়বাবু। তার পরে বদলি হয়েছেন অনুপবাবু। যদিও শ্রমমন্ত্রীর দাবি, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সচিবের বদলির সম্পর্কই নেই। মুখ্যমন্ত্রী কাকে কোন দফতরের ভার দেবেন, তা একান্তই তাঁর ব্যাপার। শ্রমসচিবের বিরুদ্ধে দফতরের অন্য অফিসাররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন বলে জেনেছি।’’ বারবার চেষ্টা করেও অনুপবাবুর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসের জবাব দেননি।

শ্রম দফতর সূত্রের খবর, নিয়োগের যে প্যানেল হয়েছে, তাতে অধিকাংশ নামই শ্রমমন্ত্রীর জেলা বর্ধমান-আসানসোলের ছেলেমেয়েদের। শ্রম দফতরের উদ্যোগে আসানসোলে সরকারি নার্সিং কলেজ তৈরি নিয়েও অনুপবাবুর সঙ্গে মন্ত্রীর মতপার্থক্য হয়। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়া কলেজ তৈরিতে আপত্তি করেছিলেন অনুপবাবু। মলয়বাবু অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে সচিবের দারুণ সম্পর্ক।’’

Labor Department secretary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy