ঠিক মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটত না, ডিএসপিতে তিন কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এ কথা মেনে নিলেন সেল কর্তৃপক্ষ। সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপাল চৌধুরীকে সম্প্রতি লেখা এক চিঠিতে সেলের চেয়ারম্যান সিএস ভার্মা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। এ ব্যাপারে ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১১ মে দুপুরে কারখানায় গলিত ধাতু ছিটকে গুরুতর জখম হন তিন জন। ‘বেসিক অক্সিজেন ফার্নেস’ থেকে গলিত ধাতু নিয়ে নির্দিষ্ট ল্যাডল ‘কন্টিনিউয়াস কাস্টিং প্ল্যান্ট’-এ যায়। সেখানে ওভারহেড ক্রেনের সাহায্যে ল্যাডেল টারেট-এ বসানো হয়। ওই দিন ল্যাডেল টারেটে বসানোর সময় কোনও ভাবে গলিত ধাতু ছিটকে জখম হন আধিকারিক রোহিত কুমার, কর্মী রঞ্জিৎ ঘোষ এবং শিক্ষানবিশ দীপক দলুই। বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিন জনেরই মৃত্যু হয়।
এই ঘটনা নিয়ে কারখানায় শিক্ষানবিশ কর্মীরা ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের পাশে দাঁড়ায় নানা শ্রমিক সংগঠন। সেই সময় দিল্লি থেকে ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) এসএস মহান্তিকে নিয়ে দুর্গাপুর আসেন সেলের চেয়ারম্যান। হাসপাতালেও যান তিনি। শ্রমিক সংগঠনগুলি দাবি তোলে, ডিএসপি-র গড়া তদন্ত কমিটি বাতিল করে অন্য ইস্পাত কারখানার আধিকারিদের দিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়তে হবে। তা মেনে নিয়ে সেলের চেয়ারম্যান ডিএসপি-র দুই সদস্যের কমিটি ভেঙে চার সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়েন। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ছাড়পত্র না মেলা পর্যন্ত সাসপেন্ড করা হয় ডিএসপি-র জেনারেল ম্যানেজার (সেফটি অ্যান্ড ফায়ার সার্ভিসেস) অমিত বিশ্বাস এবং ডিজিএম (ইনচার্জ, সিসিপি) পি কুমারকে।
সম্প্রতি উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণেই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে সেলের চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠান সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবু। তদন্ত কমিটি যাতে সব দিক খতিয়ে দেখে সে আর্জিও জানান তিনি। জবাবি চিঠিতে চেয়ারম্যান জানান, নিরাপত্তা বিধির প্রশ্নে বংশগোপালবাবুর সঙ্গে তিনি একমত। তদন্ত কমিটি শুধু দোষীদের খুঁজে বের করবে না, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায় সে ব্যাপারেও আলোকপাত করবে। দুর্ঘটনার প্রেক্ষিত, দুর্ঘটনার কারণ, তা রোধে কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সে ব্যাপারে বিশদ বিশ্লেষণ থাকবে কমিটির রিপোর্টে। চিঠিতে তিনি আরও জানিয়েছেন, তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হবে। কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। গভীরে গিয়ে দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে যাতে এমন আর না ঘটে তা খতিয়ে দেখবে কমিটি। তাঁর আরও আশ্বাস, ডিএসপি-র সব বিভাগে উপযুক্ত নিরাপত্তা বিধি লাগু করা এবং কর্মীদের সেই বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে ধারাবাহিক পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে।
সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবু দাবি করেন, ‘‘মূলত নিরাপত্তা বিধি ঠিক না থাকার কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে ডিএসপিতে। প্রাণহানিও এড়ানো যাচ্ছে না। সেল চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’’ ডিএসপি-র আইএনটিইউসি নেতা দেবাশিস চৌধুরীরও বক্তব্য, ‘‘পরপর দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ, ডিএসপি কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। সেল কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছেন। দেখা যাক, পরিস্থিতি বদলায় কি না!’’ ডিএসপি-র জনসংযোগ বিভাগের এক আধিকারিক জানান, সেলের চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy