বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘হেনস্থা’, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বাঙালিদের নিয়ে ‘বিতর্কিত মন্তব্যে’র অভিযোগকে সামনে রেখে সুর চড়েছে বাংলার রাজনীতিতে। তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ‘ভাষা আন্দোলন’ শুরুর ডাক দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাঙালি হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে এ বার সরব হয়েছেন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, একই বিষয়কে সামনে রেখে বুধবার শহরে পথে নামল ৯টি বাম দল। বামেরা নিশানা করেছে তৃণমূল সরকারের ভূমিকাকেও। বিজেপি অবশ্য পাল্টা অনুপ্রবেশের তত্ত্বেই শাণ দিয়েছে।
সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক-সহ ৯টি বাম দলের ডাকে এ দিন ধর্মতলার লেনিন মূর্তি থেকে রামলীলা পার্ক পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করেছেন নেতা-কর্মীরা। যোগ দিয়েছিলেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, রামচন্দ্র ডোম, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, সুজন চক্রবর্তী, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, গৌতম রায়, লিবারেশনের কার্তিক পাল, বাসুদেব বসু, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যেরা। মিছিল থেকে বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ তুলে হিমন্তকে তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানান বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলেছেন, “সংবিধান অনুযায়ী দেশের নাগরিকেরা যে কোনও রাজ্যে যেতে পারেন। অন্য রাজ্যে আমাদের রাজ্যের মানুষ আক্রান্ত হলে বিজেপিকে এখানে শান্তিতে থাকতে দেব না! ঐক্য তৈরির কাজ বামপন্থীরা করবে।” এর সঙ্গেই তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সেলিম বলেছেন, “যে রাজ্যে আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানকার মুখ্যসচিবকে কেন চিঠি দিচ্ছে না বাংলার সরকার? মমতা রাজনীতি করছেন। আসলে মমতা ও আরএসএস এক।”
বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী শ্রমিকদের হেনস্থার প্রতিবাদে বাম দলগুলির মিছিল। কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল ইতিমধ্যেই বাঙালি হেনস্থার বিষয়টিকে সামনে রেখে বিজেপিকে ‘বাংলা-বাঙালি বিরোধী’ বলে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে স্পিকার বিমান বলেছেন, “বিজেপি ছাড়া সব বিরোধী দলের নেতারা এবং মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টির প্রতিবাদ করেছেন। বাইরে থাকা বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচারের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। অন্য রাজ্য থেকে বাংলায় আসা পরিযায়ী শ্রমিকেরা সম্মানের সঙ্গে এখানে কাজ করছেন। বাংলার মানুষ সহনশীল, সবাইকে নিয়ে চলতে পারেন।”
বিজেপি অবশ্য অনুপ্রবেশের তত্ত্বেই ফের জোর দিয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “মুর্শিদাবাদের আসলাম শেখের মুখের গ্রাস বাংলাদেশের কোনও মণিরুল ইসলাম কেড়ে নিক, এটা বিজেপি চায় না। আমাদের রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গারা। তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ চলবে। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হবে না।”
এর সঙ্গেই বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) বিষয়টিকে সামনে রেখে বাংলাতেও ভোটার তালিকা থেকে নাম কাটার আশঙ্কায় সরব হয়েছে তৃণমূল, বাম, কংগ্রেস। এই আবহে বিজেপির রাজ্য সভাপতির পাল্টা প্রশ্ন, “মৃত ভোটার, রোহিঙ্গা, এক ব্যক্তির তিন জায়গায় নাম ভোটার তালিকায় রেখে দিতে হবে? আর কমিশনকে সেটা মেনে নিতে হবে? কমিশন সাংবিধানিক ও স্বশাসিত সংস্থা।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)