Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
CPIM

হারের লজ্জা ভুলে ফের জনদরবারেই সবুজেরা

গত বছর আমপান-এর পরে গাছের ডাল কাটতে, বিদ্যুতের কাটা তার সরাতে সবুজকে দেখেছিলেন এলাকাবাসী। লকডাউনেও ছিলেন বিপন্নদের পাশে। এখনও ফের সেই ভূমিকায়।

পিপিই পরে সবুজ দাস।

পিপিই পরে সবুজ দাস।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২১ ০৬:০৬
Share: Save:

ষত দিন ভোট ছিল, গলায় লাল উত্তরীয় চাপিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছিলেন। ভোট মিটে গিয়েছে। এখন পিপিই পরে করোনা আক্রান্তকে নিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ছুটতে দেখছে লোকে। কখনও দৌড়চ্ছেন অক্সিজেন, ওষুধ জোগাড়ে।

ভোটের ফল বলছে, কল্যাণী বিধানসভা কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে শেষ করেছেন সবুজ দাস। এ বার বিধানসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে কেন বামেরা ধূলিসাৎ, তার নানা ব্যাখ্যা তৈরি করছেন পর্যবেক্ষকেরা। বামপন্থী নেতারাও ইতিউতি মুখ খুলে মতামত জানাচ্ছেন। ভোটের ময়দানে সিপিএম এ বার যে এক ঝাঁক তরুণ মুখকে নামিয়েছিল, তাঁরা কিন্তু বিপর্যয়ের ধাক্কা সয়ে এবং হারের লজ্জা ভুলে নেমে গিয়েছেন ময়দানেই। দলবল নিয়ে কোভিড মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তাঁরা। কল্যাণীর সবুজ তাঁদেরই এক জন। এবং তিনি একা নন।

গত বছর আমপান-এর পরে গাছের ডাল কাটতে, বিদ্যুতের কাটা তার সরাতে সবুজকে দেখেছিলেন এলাকাবাসী। লকডাউনেও ছিলেন বিপন্নদের পাশে। এখনও ফের সেই ভূমিকায়। ভোটের ফল দেখে কী মনে হয়েছিল? সবুজ বলছেন, ‘‘মন খারাপ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু রাজনীতি করতে এসেছি লোকের জন্য কাজ করব বলেই। কিছু মানুষ তো আমাদের সমর্থন করেছেন। কোন মানুষ ভোট দিয়েছেন, কোন মানুষ আমাদের দেননি, কী করে জানব? আর এখন সে সব না জেনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোরই আদর্শ সময়।’’ হাসপাতালে রোগী পৌঁছে দেওয়া, অক্সিজেন বা ওষুধের জোগাড় করার পাশাপাশি রক্তের আয়োজনে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন সবুজ। তাঁর সাফ কথা, ‘‘কিছু মানুষ আস্থা রেখেছেন। ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ যাতে আস্থা রাখেন, তার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাব।’’

বর্ধমানের চণ্ডীচরন লেট এবং পৃথা তা-র কাহিনিও একই। ভোটে তাঁরা সুবিধা করতে পারেননি। কিন্তু বিপর্যয়ের পরে অতিমারি মোকাবিলায় ফের নিয়োজিত হয়ে যাওয়া তাতে আটকায়নি। বালিগঞ্জে সিপিএমের চিকিৎসক-প্রার্থী ফুয়াদ হালিম শুধু হেরেছেন বললে কম বলা হয়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছেন। কেউ কেউ মজা করে বলেছেন, তিনি যত মানুষের ডায়ালিসিস করিয়ে দিয়েছেন, তার চেয়ে কম ভোট পেয়েছেন! কিন্তু ফলপ্রকাশের পর দিন থেকেই আবার বিপন্নকে পরিষেবা দেওয়াতেই মন দিয়েছেন। ফুয়াদের কথায়, ‘‘যাঁরা আমাকে সমর্থন করেছেন, তাঁদের অজস্র ধন্যবাদ। কিন্তু যে কাজ করার কথা, ভোটেই সেটা আটকে থাকে না। আমার কাজ করছি।’’

কামারহাটিতে সিপিএমের পরাজিত প্রার্থী, যুব নেতা সায়নদীপ মিত্রের ফোন এখন ব্যস্ত থাকছে ‘রেড ভলান্টিয়ার্স’দের সঙ্গে মানুষের সংযোগ ঘটিয়ে দিতে, কোথায় কোন হাসপাতালে বেড পাওয়া যাবে, তার খোঁজ দিতে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ফল কেন খারাপ হয়েছে, তার পর্যালোচনা দল করবে। মানুষ আমাদের কাছে এখন যে সহায়তা প্রত্যাশা করছেন, সেটাই করার চেষ্টা করছি। ব্যক্তিগত এবং সংগঠনগত, দু’রকম ভাবেই।’’ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আসা দুই প্রার্থী দীপ্সিতা ধর ও ঐশী ঘোষের মনোভাবও আলাদা নয়। কোথায় স্যানিটাইজ়়েশন করাতে হবে, কোথায় রেড ভলান্টিয়ার্স দরকার— এ সব দেখভালের পাশাপাশিই রাজ্যের হাতে কেন্দ্র যাতে বিনামূল্যে সকলকে দেওয়ার জন্য ভ্যাকসিন তুলে দেয়, সেই দাবিতে তাঁরা সরব। দীপ্সিতারা জানাচ্ছেন, কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজ তাঁরা করছেন না। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ সঙ্গে নিয়েই মানুষের কাজ করছেন। ছাত্র-নেতা সৃজন ভট্টাচার্যেরা আয়োজন করে ফেলেছেন রক্তদানের।

‘গ্রেটার ইভিল’কে রুখতে তৃতীয় শক্তির দিকে দৃকপাত না করে মানুষ ‘লেসার ইভিল’কেও প্রয়োজনে বেছে নিয়েছেন, এই তত্ত্ব ঘুরছে বামপন্থী মহলে। সবুজ, সায়ন, দীপ্সিতাদের কাছে ‘ইভিল’ আপাতত একটাই। অতিমারি! যার মোকাবিলায় ময়দানেই আছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM West Bengal Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE