Advertisement
০৮ অক্টোবর ২০২৪
Duttapukur Blast

এমন ধ্বংসলীলা! অবাক স্থানীয়েরা

পুলিশ অবশ্য খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। নামানো হয় র‌্যাফ। তার পরেও উৎসুক জনতাকে আটকানো যায়নি।

বেআইনি এই বাজি কারখানাটি ছিল জনবহুল এলাকায়।

বেআইনি এই বাজি কারখানাটি ছিল জনবহুল এলাকায়। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১৭
Share: Save:

একতলা বাড়ির কিছুই অবশিষ্ট নেই। কার্যত একই অবস্থা পাশের দোতলা বাড়ির একাংশেরও। বিস্ফোরণের তীব্রতায় দুই বাড়ির ছাদের একাংশ উড়ে গিয়ে রাস্তা পেরিয়ে পড়েছে প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূরে পাশের বাড়ির উপর। ইতিউতি লেগে রয়েছে রক্তের দাগ। পড়ে রয়েছে দেহাংশ। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচশো মিটারের মধ্যে একাধিক বাড়ির কাচের জানালা ভেঙে পড়ে রয়েছে রাস্তায়।

বাজি কারখানার বিস্ফোরণের অভিঘাত যে এতটা হতে পারে, ধংসাস্তূপ না দেখলে বিশ্বাসই হত না।

বেআইনি এই বাজি কারখানাটি ছিল জনবহুল এলাকায়। দত্তপুকুর থানার সেই মোচপোলের লোকজনই শুধু নন, আশপাশের কয়েকটি গ্রামের উপচে পড়া ভিড় ঘিরে রেখেছিল ঘটনাস্থলকে। ছোট-বড় সকলের বিস্মিত দৃষ্টি এবং সঙ্গে প্রশ্ন, বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে এতটা ধ্বংসলীলা হতে পারে? তা হলে কত বাজির মশলা মজুত ছিল এখানে?

সকলের এই দৃষ্টির মধ্যেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে কারখানার কর্মীদের দেহাংশ এবং দেহ উদ্ধার করা চলছিল। দেহাংশ এবং ঝলসানো দেহ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিলেন স্থানীয়েরা। পাশের গ্রাম কৈপুকুর থেকে ঘটনাস্থলে চলে এসেছিলেন আমিনা বিবি। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘সকালে বিরাট আওয়াজ হল। পরে শুনলাম বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে যা দেখছি, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। এ দৃশ্য চোখে দেখা যায় না।’’

পুলিশ অবশ্য খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে এসে গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। নামানো হয় র‌্যাফ। তার পরেও উৎসুক জনতাকে আটকানো যায়নি। সকাল, দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়িয়েছে, এলাকা থেকে ভিড় সরানো যায়নি। বরং বেলা যত বেড়েছে, ততই ভিড় বেড়েছে। লাঠি উঁচিয়ে ভিড়ের চাপ সামলাতে সামলাতেই এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘সকাল থেকে লোকজন ঠায় দাঁড়িয়ে। কেউ সরছেই না। কতক্ষণ বলব!’’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গুদাম সংলগ্ন বাড়িটির প্রায় গোটা অংশ ভেঙে পড়ে রয়েছে। পাশের দোতলা বাড়ির একাংশ আস্ত নেই। খেলনার বাড়ির মতো লন্ডভন্ড অবস্থায় পড়ে রয়েছে কংক্রিটের জঙ্গল। ভিতরে ধ্বংসাস্তূপের মধ্যেই চাপা পড়ে রয়েছে বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে অন্যান্য জিনিস। কংক্রিটের বড় বড় পিলার ভেঙে গিয়েছে। রক্তের দাগ দেওয়ালে দেওয়ালে। পাশের বাড়ির টালির চাল ভেঙে উপরে দেহ ঝুলছে এক জনের। তাঁকে কোনও মতে নামানোর চেষ্টা করছেন দমকলের কর্মীরা। বিস্ফোরণের তীব্রতায় ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকশো মিটার দূরের বাড়িতেও দেহাংশ উড়ে গিয়ে পড়ে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। এমনকি, কয়েকশো মিটার দূরের বাড়িতে জানালার কাচও ভেঙে চুরচুর হয়ে গিয়েছে বিস্ফোরণের অভিঘাতে। কাচ সরাতে সরাতেই স্থানীয় বাসিন্দারা বললেন, ‘‘এই এলাকায় কারও বাড়ির কাচ আর আস্ত নেই। সবই ভেঙে গিয়েছে।’’

ঘটনার পরেই দু’টি পে-লোডার এনে ধ্বংসাস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করে পুলিশ। উদ্ধারকাজ চলাকালীনও মৃদু বিস্ফোরণ হতে দেখা যায়। অবস্থা গতিকে ফের দমকলের গাড়ি এনে ধ্বংসস্তূপে জল দেওয়া হয়। তার পরে নতুন করে স্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। এই কাজে ব্যস্ত এক কর্মী বললেন, ‘‘এত দিন শুনতাম। নিজেকে যে প্রাণ হাতে নিয়ে এ সব করতে হবে, ভাবিনি। এ যাত্রায় রক্ষা পেলে হয়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Blast Death Duttapukur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE