Advertisement
E-Paper

মাথার উপরে উড়ে গেল গাছ

বুলবুলের দাপটে সংসার তছনছ হয়ে গিয়েছে এমন অনেকের। তাঁদের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে দশ বছর আগের আয়লার তাণ্ডব।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫৫
জীবনতলায় গাছ পড়ে ভাঙল বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

জীবনতলায় গাছ পড়ে ভাঙল বাড়ি।—নিজস্ব চিত্র।

ছপ ছপ শব্দটা যেখানে গিয়ে থামল, সেটা একটা বাড়ির উঠোন। কিন্তু বাড়িটা নেই।

গৃহকর্ত্রী সাজিদা বিবি রবিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে হেঁটে চলে এসেছেন বাড়ির অবস্থা দেখতে। জলভরা উঠোনে দাঁড়িয়ে তাঁর হাহাকার, ‘‘এর পরে কী করব জানি না। ঝড়টা সব কেড়ে নিল।’’

উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের শেষ সীমানা শমশেরনগর। ও- পারে বাংলাদেশ। সাজিদা বিবি শমশেরনগরেরই বাসিন্দা। তাঁর বাড়ির কাছেই বিএসএফ ক্যাম্প। সকালে সেখান থেকে কিছুটা দুধ আর পাউরুটি মিলেছে। বছর চারেকের ছেলের মুখে সেই খাবারটুকুই তুলে দিয়েছেন তিনি। স্বামী কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে রয়েছেন। বুলবুলের হাত থেকে বাঁচতে ছেলেকে নিয়ে সাজিদা শনিবারই আশ্রয় নিয়েছিলেন আশ্রয় কেন্দ্রে। ছেলেকে নিয়ে তিনি নিজে বেঁচেছেন। কিন্তু ঘর বাঁচাতে পারেননি।

শুধু কি সাজিদা? বুলবুলের দাপটে সংসার তছনছ হয়ে গিয়েছে এমন অনেকের। তাঁদের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে দশ বছর আগের আয়লার তাণ্ডব। শমশেরনগরের পাশের গ্রাম মণিপুরের বাসিন্দা রমেন মণ্ডলের বাড়ির চাল উড়ে গিয়েছে। আয়লাতেও তাই হয়েছিল। রমেন বলেন, ‘‘সে বার (আয়লায়) আগে থেকে তেমন কিছু জানতেই পারিনি। বাড়ি ভেঙেছিল। এ বার প্রশাসন সতর্ক করেছিল। সাইক্লোন সেন্টারে গিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেই বা কি! এমন ঝড়ের সামনে আমরা আসলে বড় অসহায়। প্রাণে বাঁচতে পারব। কিন্তু ঘরবাড়ি, গাছপালা নিয়ে কোথায় যাব?’’

আয়লার ক্ষত হিঙ্গলগঞ্জ-সন্দেশখালির আনাচে-কানাচে এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। তবে, সে বার ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ ভেঙে এলাকা ভাসিয়েছিল নদীর জল। এ বার

বাঁধ ভাঙেনি। কিন্তু রবিবার সকালের ছবি বলছে, আপাত ভাবে সে বারের সঙ্গে এ দিনের তফাত বিশেষ নেই। ঝড়ের তাণ্ডবে রাস্তা থেকে শুরু করে সর্বত্র গাছ উপড়ে পড়েছে। ভেঙেছে কাঁচাবাড়ি। উড়েছে বাড়ির চাল। সকাল থেকে প্রশাসন অবশ্য কাজে নেমে পড়েছে। রাত পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি তারা। বুলবুলের দাপটে বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ এবং হাসনাবাদ জুড়ে এখন শুধু হা-হুতাশ।

শমশেরনগরের ফকির আলি বলেন, ‘‘শুক্রবার থেকেই শুনছিলাম ঝড় আসছে। সে দিন থেকেই আকাশের মুখ ভার ছিল। দুপুর থেকে বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়া শুরু হতেই মনটা কু ডেকেছিল। শনিবার সকাল থেকেই বুঝেছিলাম এ ঝড় সব কিছু ছিনিয়ে না নিয়ে যাবে না।’’

বাঁধ যে ভাঙবে না, তেমন নিশ্চয়তা ছিল না। গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দা আশ্রয় কেন্দ্রে গেলেও হাসনাবাদের এক দল যুবক বাঁধ রক্ষার জন্য রাত জেগেছিলেন। কিন্তু শনিবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝড়ের দাপট বাড়তে আর বাঁধের পাশে থাকার সাহস পাননি কেউ। স্থানীয় ক্লাবঘরে গিয়ে আশ্রয় নেন তাঁরা। ওই দলের সদস্য কমল সাহা বলেন, ‘‘সাড়ে সাতটা নাগাদ ঝড়ের দাপটে দেখলাম গাছ উপড়ে মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। তার পরে আর ঝুঁকি নিতে পারিনি। ক্লাবঘরে বসেই দেখলাম বিদ্যুতের খুঁটি, বাড়ির চাল, বড় গাছ উড়ে গেল।’’

Calamity Cyclone Bulbul Ayla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy