ভোটার দেওয়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন জনক। —নিজস্ব চিত্র।
আলিপুরদুয়ারে চা-বাগানের বস্তির বাড়ি থেকে বিচ টি গার্ডেন প্রাইমারি স্কুলের ভোটকেন্দ্র খুব দূরে নয়। সকালেই ভোট দিতে গিয়েছিলাম। ২০১০ সালে ভোটার কার্ড হাতে পাওয়ার পরে এই নিয়ে ষষ্ঠ বার বুথমুখী হলাম। তবু এ বার ভোট দেওয়ার সময় অভিষেকের উত্তেজনা অনুভব করছিলাম। কারণ, এ বারেই প্রথম অন্যের মুখাপেক্ষী না-হয়ে ব্রেল পদ্ধতির সাহায্যে নিজের ভোট যাতে নিজে দিতে পারি, তার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটকেন্দ্রে পৌঁছনোর পরে এক পুলিশকর্মী হাত ধরে ভোটকেন্দ্রের ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমাকে এক জন স্যর (ভোটকর্মী) বললেন, ‘কাকে সঙ্গে নিয়ে ভোট দিবি? তোর সঙ্গে কে এসেছে?’ ‘তুই’ সম্বোধন করেই বললেন কথাগুলো। আমি বললাম (হাসির অভিব্যক্তি স্পষ্ট), কাউকে সঙ্গে আনিনি। আমি ব্রেল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছি। নিজের ভোট নিজে দেবো। আমার কথা শুনে এক জন স্যর হাত ধরে ভোটদানের জায়গায় নিয়ে গেলেন। কোন নম্বরে কোন দলের প্রার্থী রয়েছেন, তা জেনে নিয়েছিলাম। এ বার আঙুল ইভিএমের উপরে বুলিয়ে নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে নিজেই ভোট দিলাম। গত পাঁচটা ভোটে অধিকার প্রয়োগের পরে আঙুলে কালি পড়েছিল। ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রতীক। তবে সেই ছাপে নিজস্বতা ছিল না। প্রতি বার দাদা রাজকুমার ওরাওঁ সঙ্গে যেত। আমি যেখানে বলতাম, দাদা সেই প্রার্থীর নামেই ভোট দিয়েছেন। কিন্তু আমি আমার আঙুলের তো ব্যবহার করিনি। তাই এ বার ভোটদানের পরে যে-কালির ছাপ পড়ল, তার সবটা জুড়ে আমি ছিলাম। এ যে কী অনুভূতি!
আলিপুরদুয়ার সুবোধ সেন স্মৃতি দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলাম। তার পরে মাদারিহাটে বিরসা বিদ্যাভবন হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই। কিন্তু প্রথমে যক্ষ্মা, পরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আড়াই বছর বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলাম। আর মাধ্যমিক দেওয়া হয়নি। বলছিলাম না, মা-ই আমাদের অভিভাবক। টানাটানির সংসারে মা এতোয়ারি ওরাওঁ আর পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারল না। দু’বেলার খাবার জোটানোই মুশকিল হয়ে গেল। স্কুলে যাতায়াতের খরচ কোথা থেকে দেব? তাই স্কুলছুট হলাম। তবে কী অদ্ভুত! এইট পাশ বিদ্যাই শেষ পর্যন্ত দেশের সরকার গঠনের কাজে এল!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আমরা যারা চা-বাগানের বস্তিতে থাকি, তাদের দাবিদাওয়া প্রচুর। সেই সব দাবি পূরণের আশায় আমরা নির্বাচনী বুথে যাই। বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম ভোট দিয়েছিলাম। পরিবর্তনের বছর ছিল। ভোটাধিকারে প্রথম শব্দটা ছ’বছর পরে যখন আবার যোগ হল, তখনও একটা পরিবর্তন। নির্বাচন কমিশন সেই পরিবর্তনের সুযোগ করে দিল।
ইস! পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও যদি এই ভাবে নিজের ভোটটা নিজে দিতে পারতাম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy