Advertisement
E-Paper

নিশীথের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সামলাতে তৎপর বিজেপি, ওয়াই ক্যাটেগরির মোড়কে কোচবিহারে ঢুকছেন প্রার্থী

আজ ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তার মোড়কে দিল্লি থেকে কোচবিহারে ফিরছেন নিশীথ। জেলা সভানেত্রীর সঙ্গে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে পার্টি অফিসে জেলা কার্যকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৯ ১৩:২৩
নিশীথ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

নিশীথ প্রামাণিক। নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে নিয়ে রাতারাতি বয়ান বদলে ফেললেন জেলা সভানেত্রী!

বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লি থেকে নিশীথের নাম ঘোষণা হতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহার। প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরাই। ভাঙচুর চালানো হয় পার্টি অফিসে, হেনস্থার মুখে পড়তে হয় কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়কেও। বিজেপির কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিককে প্রার্থী করার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেন জেলা সভানেত্রীও। শুক্রবার সকালে সেই জেলা সভানেত্রীই জানালেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। নিশীথের হয়েই ময়দানে নামতে প্রস্তুত দলও। এমনকি নিশীথের সঙ্গে পুজো দেবেন বলেও ঘোষণা করলেন তিনি।

আজ ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তার মোড়কে দিল্লি থেকে কোচবিহারে ফিরছেন নিশীথ। জেলা সভানেত্রীর সঙ্গে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিয়ে পার্টি অফিসে জেলা কার্যকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন তিনি, সেখানে কী পরিস্থিতির সম্মুখীন তাঁকে হতে হয় সে দিকে নজর রাজনৈতিক মহলের। কারণ বিজেপি নেতৃত্ব যতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে আশ্বাস দিক, বিজেপির অন্দরে কিন্তু তাঁকে ঘিরে অসন্তোষ রয়ে গিয়েছে বলেই দাবি স্থানীয় সূত্রে। তা আঁচ করেই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরাই।

আরও পড়ুন: প্রথম তালিকায় ২৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই ক্ষোভ-বিতর্ক শুরু রাজ্য বিজেপির অন্দরে

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের ২৮টি লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিজেপি। অন্যান্য কেন্দ্রের প্রার্থী নিয়ে কোনও গোলমাল না থাকলেও, কোচবিহারের প্রার্থী নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিশীথ প্রামাণিককে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে কেউই মানবেন না দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। ‘দিনহাটার স্মাগলার নিশীথ প্রামাণিক বিজেপির প্রার্থী হলে একটিও ভোট নয়’, ফেস্টুনে লিখে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ভাঙচুর চালানো হয় দলীয় কার্যালয়ে। কোচবিহার জেলা সভানেত্রীকেও হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি এমনই হয়ে ওঠে যে, মালতীও মন্তব্য করেন, তিনি নিশীথকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাননি। বরং দীপক বর্মনকে চেয়েছিলেন। তবে কর্মী-সমর্থকদের কোনও বিক্ষোভের মুখেই যে পিছু হঠা যাবে না তা ওই রাতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। শুক্রবার সকালে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘নিশীথ প্রামাণিক অন্য দল থেকে এসেছেন তাই মানতে অসুবিধা হচ্ছে, দল তো আগে এত বড় ছিল না, দল ধীরে ধীরে বেড়েছে। বিভিন্ন দল থেকে লোকজন এসেছেন। যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরাও অন্য দল থেকে এসেছেন, তাই শৃঙ্খলা শিখে উঠতে পারেননি।’’ কোনওরকম বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না, দলের কর্মী-সমর্থকদের প্রতি স্পষ্ট বার্তাও দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: গাঁধীনগর থেকে আডবাণীকে সরিয়ে প্রার্থী অমিত, ‘মার্গদর্শক’ বিদায়ে কটাক্ষ কংগ্রেসের

শুক্রবার সকাল থেকেই অবশ্য কোচবিহারের পরিস্থিতি নিয়ে বয়ান বদলে ফেলেন জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা রায়। তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা নেই, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত, সবাই সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় প্রার্থীর হয়ে কাজে নামতে প্রস্তুত।’’ আজ দুপুরে দিল্লি থেকে কোচবিহার ফেরার কথা নিশীথের। তিনি আরও জানান, নিশীথকে তিনি নিজেও স্বাগত জানাবেন। তার পর তাঁকে নিয়ে মদনমোহন মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন। সেখান থেকে পার্টি অফিসে নিয়ে এসে স্থানীয় কার্যকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবেন নিশীথকে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

যদি সব কিছু ঠিকঠাকই থাকে, তাহলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি কেন এত উত্তপ্ত হল? কেন তাঁকেও হেনস্থার মুখে পড়তে হল?

তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা কেউ আমাদের দলের নন। তৃণমূলের প্ররোচনায় কিছু লোক এখানে এসে গোলমাল পাকিয়েছিলেন। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব যাঁকে প্রার্থী হিসেবে বেছে দিয়েছেন, দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে তাঁর পাশেই রয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নিশীথ প্রামাণিক এক সময়ে তৃণমূল করতেন, সে কথা ঠিক। কিন্তু তিনি তো পদ্মফুল হাতে নিয়ে কোচবিহারে ফিরছেন। তিনি তো দিল্লিতে গিয়ে পদ্মফুলের ঝাণ্ডাটা আগেই হাতে তুলে নিয়েছেন। তা হলে তাঁকে মেনে না নেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে!’’ আর তিনি যে নিজেও নিশীথের পরিবর্তে দীপক বর্মনকে প্রার্থী হিসেবে চান বলে মন্তব্য করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গ উঠলে মালতীর ইঙ্গিত, গতকাল যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তা সামলানো মুশকিল ছিল। সে কারণেই কোনও মন্তব্য বেরিয়ে আসতে পারে। ওই সময়ে বলা কোনও কথাতে গুরুত্ব না দিতেও অনুরোধ করেন তিনি।

তবে নিশীথ প্রামাণিকের প্রতি কোচবিহার জুড়ে এই অসন্তোষের কারণ কী?

নিশীথবাবু যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর তাঁকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। তাঁর বিরুদ্ধে তখন তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ ছিল। কিন্তু এক সময়ে কোচবিহারে খুবই ক্ষমতাশালী নেতা হয়ে উঠেছিলেন নিশীথ। তখন গোটা কোচবিহার জুড়েই বিজেপি কর্মীরা তাঁর অনুগামীদের হাতে মার খেয়েছেন বলে বিজেপির অভিযোগ। সেই নিয়ে তাঁর প্রতি বিজেপি কর্মীদের অসন্তোষ রয়েছে। তার উপরে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও তাঁর উপরে ক্ষুব্ধ বলে জানা যাচ্ছে। কারণ, স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের যুব সংগঠনের এক উচ্চস্তরের নেতার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন নিশীথ। সেই নেতার সাহায্যেই তিনি খুবই ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিলেন। সে নিয়ে দলে থাকাকালীনই তৃণমূলের মধ্যে তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। ফলে তৃণমূলের মধ্যেও তাঁর অনেক শত্রু তৈরি হয়ে গিয়েছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। দলে থাকায় এবং ক্ষমতাশালী হওয়ায় তখন তাঁর প্রতি তেমন অসন্তোষ হয়তো অনেকেই দেখাতে পারেননি তৃণমূলের নেতারা। নিশীথ বর্তমানে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় তাঁরাও প্রকাশ্যে তাঁর বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন। পাশাপাশি তাঁর অনুগামীদের হাতে মার খাওয়া বিজেপির সেই সমস্ত কর্মী-সমর্থকেরাও তাঁকে আর কোনওভাবেই মানতে পারছেন না।

এই মুহূর্তে নিশীথের জন্য কোচবিহারের পরিস্থিতি খুব একটা অনুকূল নয়। সে জন্যই ওয়াই ক্যাটেগরি নিরাপত্তা নিয়ে তাঁকে কোচবিহারে ঢুকতে হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিজেপি কর্মীরা।

Nishith Pramanik Lok Sabha Election 2019 TMC BJP Cooch Behar কোচবিহার নিশীথ প্রামাণিক লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ বিজেপি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy