Advertisement
E-Paper

খন্দ পেরিয়ে দিলীপের চৌকাঠেও দিদির উন্নয়ন

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের মধ্যেই পড়ে কুলিয়ানা গ্রাম। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাপ-ঠাকুরদার ভিটে এই গ্রামেই। এখন বাড়িতে থাকেন দিলীপের মা পুষ্পলতা ঘোষ আর ছোট ভাই হীরক ঘোষের পরিবার।

দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৩
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়ি। কুলিয়ানা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাড়ি। কুলিয়ানা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

ঠোক্কর সামলে এগোনো হাঁ করা মাটির রাস্তাটায় মোরামের প্রলেপটুকুও নেই। তবে চৌকাঠ পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, দু’টাকার চাল।

জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ‘উন্নয়ন’ পৌঁছেছে রাজ্যে বিরোধী শিবিরের ‘সেনাপতি’র দোরগোড়াতেও। বিজেপির যে রাজ্য সভাপতি সর্বক্ষণ তৃণমূলের দলবাজি আর বিরোধীদের বঞ্চনার অভিযোগে সরব, সেই দিলীপ ঘোষের গ্রামের বাড়িও রাজ্যের উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত নয়। দিলীপ অবশ্য এ ক্ষেত্রে পুরনো রাজনীতির অভিযোগই করছেন। বলছেন, ‘‘উন্নয়নের সব প্রকল্পই তো আসলে মোদীর।’’

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকের মধ্যেই পড়ে কুলিয়ানা গ্রাম। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাপ-ঠাকুরদার ভিটে এই গ্রামেই। এখন বাড়িতে থাকেন দিলীপের মা পুষ্পলতা ঘোষ আর ছোট ভাই হীরক ঘোষের পরিবার। ফল-ফুলের গাছগাছালি ঘেরা সাবেক আমলের সেই দোতলা বাড়িতেই আসে দু’টাকা কেজির চাল। হীরকের মেয়ে স্থানীয় রান্টুয়া হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী অন্বেষা পেয়েছে কন্যাশ্রী, অন্বেষা ও তার দাদা এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অরিন্দমের নামে সবুজসাথীর সাইকেলও বরাদ্দ হয়েছে। হীরক বলছেন, ‘‘আমি তো চাকরিবাকরি করি না। যেটুকু জমিজমা রয়েছে, তার চাষের কাজ আমাকেই দেখতে হয়। তাই দু’টাকা কেজি চাল পাই।’’ তবে বিপিএল তালিকাভুক্ত না-হওয়ায় পুষ্পলতা বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতা পান না।

আপনার চৌকাঠও তো তা হলে পেরিয়েছে দিদির উন্নয়ন? দু’টাকার চাল, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী?

প্রচারে ব্যস্ত দিলীপ ফোনে প্রশ্ন শুনে সপাটেই জবাব দিলেন। বললেন, ‘‘দু’টাকার চাল তো দিচ্ছেন মোদী। দিদি শুধু পৌঁছে দিচ্ছেন। আর ভাইপো-ভাইঝিরা সাইকেল নিয়ে কী করবে? গ্রামের রাস্তার যা হাল, তাতে সাইকেল চালাবে কোথায়?’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

নয়াগ্রাম থেকে জামবনি, লালগড় থেকে বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়ে মাখনের মতো রাস্তা। তবে দিলীপের গ্রাম কুলিয়ানায় এসে সত্যিই হোঁচট খেতে হয়। এক কিলোমিটারেরও বেশি এবড়োখেবড়ো মাটির রাস্তা ভেঙে পৌঁছতে হয় ‘ভোলানাথ ভবন’- এ। দিলীপ ঘোষের বাবার নামাঙ্কিত আটপৌরে গেরস্ত বাড়িটায়। দিলীপই জানালেন, তাঁর বাবা ভোলানাথ ঘোষ সিপিএমের একতরফা দাপটের আমলেও নির্দল হিসেবে পঞ্চায়েতে জিতেছিলেন। এক বার নয়, দু’-দু’বার। রাজ্যে পালাবদলের পরে কুলিয়ানা পঞ্চায়েত যায় তৃণমূলের দখলে। গত বছর অবশ্য কুলিয়ানা সংসদ ও কুলিয়ানা গ্রাম পঞ্চায়েত দু’টোতেই পদ্ম ফুটেছে। ১০ আসনের পঞ্চায়েতে ৮টিতেই জিতেছে বিজেপি। তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ১টি আর নির্দল জিতেছে ১টি আসনে।

তবে কি শুধু দিলীপ ঘোষের বাড়ির রাস্তা বলেই এত দিন পাকা হয়নি কুলিয়ানার মেঠোপথ? অভিযোগ ওড়ালেন তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সমীর পাত্র। বললেন, ‘‘কিছু কাজ তো বাকি থেকেই যায়। আর বিরোধী বলে দেগে দিলে দিলীপবাবুর ভাইয়ের পরিবার তো অন্য প্রকল্পের সুবিধেও পেতেন না।’’

রাজনীতির এই সব হিসেব নিকেশে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই পুষ্পলতার। বৈশাখের তপ্ত দুপুরে নিস্তেজ

শোনায় তাঁর গলা, ধরা পড়ে আক্ষেপ। পরনে সাদা থান, গলায় তুলসীর মালা, কপালে- হাতে যত্নে আঁকা রসকলি, বেঁটেখাটো চেহারার বৃদ্ধা বলে ওঠেন, ‘‘আমার সে দিলীপ আর নেই।’’

ছেলে আপনার বদলে গিয়েছে?

ঘাড় নাড়েন পুষ্পলতা, ‘‘হুঁ, অনেক বদলে গিয়েছে। ছেলেবেলায় বড় ঠান্ডা ছিল। বেশি কথা বলত না। ওর বাবার সামনে তো মুখই খুলত না।’’ শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে চোখাচোখা কথায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার জন্যই যে মানুষটার ‘নামডাক’, এই ভোট মরসুমেও বেফাঁস বলে যিনি নির্বাচন কমিশনের শো-কজের মুখে পড়েছেন, তাঁর মায়ের মুখে এমন কথা সত্যিই অচেনা ঠেকে। ছেলেকে অচেনা লাগে পুষ্পলতারও। তিনি বলেন, ‘‘টিভিতে যখন দেখি দিলীপ মাথা গরম করে কিছু বলছে, ভাবি ছেলেটা কেন আবার এ সব বলল।’’

আপনার চাঁচাছোলা কথায় মা কিন্তু কষ্ট পান? জানেন কি? দিলীপের জবাব, ‘‘মা জানে না এখন রাজনীতি করছি, তাই ও সব বলতে হয়। আর আগে তো দিলীপকে কেউ গালাগাল দিত না, মারত না। কিন্তু এখন গালাগাল করে, দলের কর্মীদের ধরে মারে, তাই পাল্টা বলতেই হয়।’’

মায়ের মন রাজনীতির এই অঙ্ক বোঝে না। পুষ্পলতার গলায় তাই ঘুরেফিরে আসে আক্ষেপ, ‘‘আমার সে দিলীপ আর নেই।’’

পিছনের দেওয়ালে চোখ টানে বাঁধানো ফ্রেমে মা-ছেলে। উপরে লেখা ‘মায়ের আশীর্বাদ’।

Politics Mamata Banerjee TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy