দেব আসতেই প্রাণ এল কর্মিসভায়

গতবার রোড শো দিয়ে শুরু করেছিলেন প্রচার। তবে এ বার পুরোদস্তুর কর্মিসভা। আর সেখানেই ধরা দিলেন এক অন্য দেব।

আগে যিনি শুধু বলতেন, ‘‘আমাকে ভোট দেবেন।’’ বলতেন, ‘‘আমি আপনাদের পাশে থাকব। আমাকে আশীর্বাদ করুন।’’ সেই দেবকে বুধবার ঘাটাল শহরের অরবিন্দ স্টেডিয়ামের কর্মিসভায় বলতে শোনা গেল, “গত সাত বছরে রাজ্যে যা উন্নয়ন হয়েছে সত্তর বছরেও হয়নি। ভারতের সেরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।” যা দেখে শুনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ বলছেন, এ তো অভিনেতা দেবের নেতা হয়ে ওঠার ইঙ্গিত।

ঘাটাল লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী দীপক অধিকারী (দেব) কর্মিসভায় সাকুল্যে বলেছেন, মিনিট দশেক। বক্তব্যের অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক। কখনও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান থেকে কন্যাশ্রী,সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল,রাস্তা সহ তৃণমূল সরকারের নানা উন্নয়নের কথা বলেছেন। সামলেছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নও। বিজেপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তো মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপার তথা সোনা মামলায় অভিযুক্ত ভারতী ঘোষের নাম শোনা যাচ্ছে। কী বলবেন? দেবের জবাব, ‘‘ভারতীদি দিকে আমি চিনি। আমার সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখাও হয়েছে ভারতীদির। আমার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে নিশ্চয়ই শুভেচ্ছা জানাব। ভোট তো মানুষ দেবেন।”

প্রতিপক্ষের প্রতি সৌজন্য দেবের ‘ট্রেডমার্ক’। গতবার বিপক্ষ বাম প্রার্থীর বাড়ি চলে যাওয়া কিংবা এ বার সিপিআই প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানানো সবই তাঁর সেই ট্রেডমার্কের পরিপূরক। কিন্তু যা অতিরিক্ত তা হল দলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়ার বার্তা। সভায় দেবকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি চাই মানসদা আমার চেয়ে বেশি ভোটে জিতুক।” মানসকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি মেদিনীপুর থেকে ঘাটালে চলে আসব। প্রতি মুহূর্তের খোঁজ খবর রাখব।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এ দিনের সভার শুরুটা ছিল জৌলুসহীন। দুটোর সময় সভা শুরুর কথা ছিল। সময়ে সভা শুরু হলেও তেমন উৎসাহ চোখে পড়েনি কর্মীদের মধ্যে। দেব আসতেই সভা প্রাণ পায়। দেবকে ঘিরে উৎসাহী জনতা মঞ্চের সামনে ভিড়ও করে যথারীতি। বুধবার কর্মিসভা শেষে দলের এক কর্মসূচিতে অংশ নেন দেব। সেখানেই ঠিক হয় দেবের যাবতীয় প্রচারসূচি। এ বারও ঘাটাল শহরে বাড়ি ভাড়া নিবেন তারকা প্রার্থী। প্রতি পাড়ায় পাড়ায় ঘুরবেন। রোড শো,পাড়া বৈঠক সহ ছোট-বড় সব সভাতেই দেব উপস্থিত থাকবেন।

গ্ল্যামার তো আছে। সঙ্গে জনসংযোগও নিবিড় করতে চাইছেন দেব। কর্মিসভায় তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “গত পাঁচ বছরে সংসদে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।এবার তা বেশি করে কাজ লাগাব।” দেবের ভরসা যে দিদিই তা বলতেও ভোলেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘দিদি এবারও আমাকে প্রার্থী করেছেন।আমার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল।” আশাবাদী জেলা নেতৃত্বও। জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দেব এবার সাড়ে তিন লক্ষ ভোটে জিতবে।” যদিও বিজেপি বিঁধতে ছাড়েনি। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বললেন, “মুখ দেখিয়ে ভোটে জেতা যায় না। গত পাঁচ বছরে এলাকায় ক’বার এসেছেন। এলাকাবাসীর সমস্যা নিয়ে সংসদে আদৌও মুখ খুলেছেন?”