Advertisement
E-Paper

বিষ খেল হনু, ঘাসফুলের পতাকায় মুড়ে শেষকৃত্য

মাঝদুপুরে খেতের পাশে পড়ে থাকা কীটনাশকের বোতলটা গলায় ঢালতেই ছটফটানির শুরু।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৩৫
হনুমানের শেষযাত্রার প্রস্তুতি। বর্ধমানের ছোটবেলুন গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

হনুমানের শেষযাত্রার প্রস্তুতি। বর্ধমানের ছোটবেলুন গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

হনু তুমি কার— রামচন্দ্রের, তাঁর নামে নিত্য দিব্যি কাটা দলের, নাকি যাঁরা তোমার মরদেহে পরম মমতায় ঘাসফুল আঁকা পতাকা জড়ালেন, তাঁদের? বুধবারের ভোট-বাজারে বর্ধমান ২ ব্লকের ছোটবেলুন এলাকা তৃতীয় দলকেই দেখল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য পতাকা-সহ হনুমানের গঙ্গাযাত্রায় আপত্তির কিছু দেখেননি।

মাঝদুপুরে খেতের পাশে পড়ে থাকা কীটনাশকের বোতলটা গলায় ঢালতেই ছটফটানির শুরু। আস্তে আস্তে নির্জীব হয়ে পড়ে সাড়ে চার ফুট লম্বা পূর্ণবয়স্ক মদ্দা হনুমানটি। দেখতে পেয়ে তাকে তুলে এনে গ্রামের তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে শুইয়ে দেন এলাকাবাসী। জল দিয়ে, হাওয়া করে কিছুটা আরাম দেওয়ার চেষ্টা করেন। খাটিয়ায় চাপিয়ে হনুকে নিয়ে জনতা রওনা দেয় স্থানীয় পশু হাসপাতালের উদ্দেশে। তবে পথেই সে মারা যায়, সহৃদয়েরা তাঁকে ফেরত আনেন ফের ওই পার্টি অফিসের সামনে।

শুরু হয় সৎকারের প্রস্তুতি। এগিয়ে আসেন তৃণমূলকর্মীরা। নীল-সাদা রঙে রাঙানো গাছের পাশে ঠাঁই হয় হনুর খাটিয়ার। পারলৌকিক কাজ সারার জন্য কোমরে গামছা বেঁধে শুরু হয় সমব্যথীদের চাঁদা তোলা। জুটে যায় খোল-করতাল। শুরু হয় ‘রাম রাম হরে হরে’ কীর্তন। এর পরেই হনুর দেহ মুড়ে দেওয়া হয় তৃণমূলের দলীয় পতাকায়। উদ্যোক্তা, স্থানীয় কুড়মুন ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বলাই বাউড়ি। তিনি বললেন , ‘‘যথাযোগ্য মর্যাদায় সৎকার যাতে হয়, সেই জন্য হনুমানের গায়ে দলের পতাকা জড়িয়ে দিয়েছি।’’ বলাইবাবু জানাচ্ছেন, পরে নাম-সংকীর্তন করতে করতে কাটোয়া ঘাটে নিয়ে গিয়ে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় হনুমানটিকে। দলীয় পতাকাটিরও গঙ্গাযাত্রা হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এলাকায় হনুমানের ঘোরাফেরা, অপমৃত্যু বা কীর্তন গেয়ে হনু-দেহের সৎকার— কোনওটাই নতুন নয় জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। তবে তাঁদের অনেকের চোখে যেটা নতুন ঠেকেছে, সেটা এ কাজে রাজনৈতিক পতাকার ব্যবহার। রাজ্য রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এ রাজ্যে হনু-রাজনীতি অন্তত বছর দু’য়েক চলছে। ২০১৭ সালে রামনবমীর সশস্ত্র উদ্‌যাপন করে বিজেপি হইচই ফেলার পরে, তেড়েফুঁড়ে হনুমান পুজোয় নামেন শাসক দলের অনেক নেতা। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত
মণ্ডল প্রথম তাঁর জেলায় রামনবমীর দিনেই হনুমানের বন্দনার কথা বলেছিলেন। তার পরে তা এক রকম রেওয়াজের মতো দ্রুত ছ়ড়িয়ে পড়ে নানা জেলা এবং কলকাতাতেও। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, এমনি-এমনিই হনুমান পুজো বাড়ছে। কিন্তু বাম ও কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করেন, হিন্দুত্বের ধ্বজা উড়িয়ে সঙ্ঘ পরিবারের নানা সংগঠন পাছে সংখ্যাগুরু ভাবাবেগের ফায়দা পায়, তাই বজরংবলীর দ্বারস্থ হতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে!

বিজেপির বর্ধমান সদরের সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দী বলেন, ‘‘যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁদের সম্মান জানাচ্ছি। কিন্তু ভোট বড় বালাই। তাই হনুমানকে নিয়েও রাজনীতি করল তৃণমূল।’’ তৃণমূল আবার পাল্টা বলছে, রাজস্থানে বিধানসভা ভোটের প্রচারে হনুমানকে ‘দলিত’ বলে দাবি করেছিলেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ। তার পরে বিজেপির একাধিক নেতা হনুমানকে ‘আর্য’ এবং ‘জনজাতির লোক’ আখ্যা দিয়ে আরও শোরগোল করেন। সে সবই ছিল ‘ভোটের জন্য’। স্বপন দেবনাথ আর পূর্ব বর্ধমানের অন্তত তিনটি বিধানসভার দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত একই সুরে বলেছেন, ‘‘বজরংবলী কারও একার নয়। রামভক্ত হনুমান সবার।’’

হনুমান TMC Hanuman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy