Advertisement
E-Paper

দায়িত্বে রত্না, ভোটের কাজ থেকে অপসারিত শোভন মুখ ঢেকেছেন ঔদাসীন্যে

অর্থাৎ নেতৃত্বের মনোভাব স্পষ্ট, শোভনকে ছাড়াই ভোটের যাবতীয় কাজকর্ম চালাবে তৃণমূল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯ ১৫:৫৫
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

দলের তরফে বুঝিয়ে দেওয়া হল, নির্বাচনের কোনও কাজে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আর দরকার নেই। তিনি যে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সেখানে তৃণমূলের নির্বাচনী কাজ দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হল রত্না চট্টোপাধ্যায়কে। সেই রত্না চট্টোপাধ্যায়, যাঁর সঙ্গে তাঁর এখন বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে। তৃণমূলের তরফে শোভনকে কী বার্তা দেওয়া হল, তা বুঝতে আর বাকি নেই রাজনৈতিক শিবিরের। তবু শোভন মুখ খুললেন না। শুধু বোঝাতে চাইলেন— তাঁর কিছু যায় আসে না। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন, দল যে ব্যবহারই করুক, প্রত্যাঘাতের অবস্থায় শোভন নেই। তাই নিস্পৃহ ভাব দেখাচ্ছেন।

ইঙ্গিতটা ছিলই। সোমবার তাতে সিলমোহর পড়ল। বেহালা পূর্ব এবং পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য আলাদা কর্মী সম্মেলন করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সীরা জানিয়ে দিলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের দায়িত্ব সামলাবেন রত্না চট্টোপাধ্যায় এবংওয়ার্ড সভাপতি খোকন গায়েন। সভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসেরপাশ থেকে সরে গেলেবাজারে গেলেও কেউ জিজ্ঞাসা করবেন না, কেমন আছেন? কেউ চিনবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘১৩১ নম্বর ওয়ার্ডেও একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ওখানে যিনি দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি অনেক দিন ধরে আসছেন না। তাঁকে আমরা ডাকছি, কিন্তু তিনি আসছেন না। রাগ-অভিমান করে আছেন। আমরা কতদিন আর অপেক্ষা করব। ওখানে যিনি সভাপতি রয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমি কথা বলব, ওখানে রত্না কাজ করবে।’’

সুব্রত বক্সী অবশ্য শোভনের নাম করেননি। তিনি বলেন, ‘‘অভিমান করে দূরে সরে থাকলে, ভোটের ফল প্রকাশের পরে পস্তাতে হবে। রাগ-অভিমানের কোনও জায়গা নেই।’’ ইঙ্গিতটা যে শোভনের দিকেই ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক শিবিরের।

অর্থাৎ নেতৃত্বের মনোভাব স্পষ্ট, শোভনকে ছাড়াই ভোটের যাবতীয় কাজকর্ম চালাবে তৃণমূল। শোভন যদি দূরে থাকেন, দলও তাঁকে আরও দূরে ঠেলে দেবে। কিন্তু কর্মীরা? সভায় শোভনের ওয়ার্ডে রত্নাকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘোষণার সময় অনেক কর্মীই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান। ফলে নেতৃত্বের পাশাপাশি দলের নিচু তলার কর্মীরাও যে শোভনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন, তা স্পষ্ট।

আরও পড়ুন: আডবাণী এখনও নীরবই, টিকিট না পাওয়ার ক্ষোভ কিন্তু গোপন রাখলেন না জোশী

সোমবারের কর্মী সম্মেলনে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের আসন ছিল মঞ্চে। অথচ তিনি কাউন্সিলর বা বিধায়ক নন। এটাও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জন্য দলের তরফে বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। কী সেই বার্তা? অনেকেই মনে করছেন, দল যে শুধু শোভনকে উপেক্ষার পন্থা নিয়েছে তাই নয়, শোভন যাঁদের শত্রু ভাবছেন, তাঁদের বরং দল আরও বেশি গুরুত্ব দেবে। যাতে বার্তাটা আরও স্পষ্ট হয়।

শোভন অবশ্য দেখানোর চেষ্টা করছেন, এতে তাঁর কিছু যায় আসে না। তবে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি। আমন্ত্রণের বিষয়ে মঙ্গলবার শুধু বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করেও ডাকা হয়নি, কার্ডও পাঠানো হয়নি।’’ তবে ঔদাসীন্য দেখানোর চেষ্টা করে শোভন আরও বলেন, ‘‘আমার আবাহনও নেই, বিসর্জনও নেই।’’ অর্থাৎ দল তাঁকে নিয়ে কী ভাবছে, না ভাবছে তা নিয়ে তিনি নিস্পৃহ— এমনটাই এ দিন সকালে বোঝানোর চেষ্টা করেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।

আরও পড়ুন: কেমন কাজ করল মোদী সরকার? সমীক্ষা বলল, প্রায় সব ক্ষেত্রে মাঝারিরও নীচে নম্বর দিচ্ছেন মানুষ

কিন্তু দলের নেতা-কর্মীরা কী ভাবছেন শোভনকে নিয়ে? তাঁরা কি মনে করছেন যে, শোভন সত্যিই নিস্পৃহ? দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্যে স্পষ্ট যে, শোভনকে নিস্পৃহ বা উদাসীন বলে মনে করছে না দল। ওই নেতার কথায়, ‘‘রায়চকে গিয়ে উনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, তাতেই বুঝে গিয়েছেন, দলের কর্মীরা তাঁর সঙ্গে নেই। এই মুহূর্তে দল ছেড়ে অন্য দলে গিয়েও কিছু করতে পারবেন না। সেই জন্যই মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া ওঁর আর কোনও উপায় নেই।’’

শোভনের সঙ্গে তৃণমূলের বা উল্টো দিক থেকে দেখলে তৃণমূলের সঙ্গে শোভনের এই দূরত্বের পথটা এবশ্য এক দিনে তৈরি হয়নি। বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছিল তাঁকে। এর পরে তাঁর নিরাপত্তা কমিয়ে দেওয়া হয়। সংঘাত এমন পর্যায়ে যায় যে, তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন। পরে মেয়র পদ ছাড়তে বলা হয়। এর পর থেকে শোভন বিস্তর দূরত্ব বজায় রাখছিলেন দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে। বেহালার কর্মিসভা থেকে দল তাঁকে বুঝিয়ে দিল, নিস্পৃহতাও বরদাস্ত করা হবে না। মাথা নত করে নিজে থেকেই দলের কাজে অংশ না নিলে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শোভন নিস্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু নেতা-কর্মী এবং কাউন্সিলর ভিতরে ভিতরে যোগাযোগ রাখছিলেন তাঁর সঙ্গে। কিন্তু সোমবারের কর্মিসভা থেকে সেই কাউন্সিলর বা নেতা-কর্মীদেরও পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সুব্রত বক্সীরা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, শোভনকে বাদ দিয়েই বেহালা নিয়ে ভাবতে হবে।

Lok Sabha Election 2019 Sovan Chatterjee TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy