Advertisement
E-Paper

মুনমুনের ‘সুনামের’ ঠেলায় বাঁকুড়ায় টিকিট পাওয়া কঠিন হচ্ছে লকেটের পক্ষে

বিজেপি সূত্রের খবর, লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্যই প্রার্থী হচ্ছেন। বীরভূম আসনে শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে লড়ানো হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৯ ১৬:৫৩
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিদায়ী সাংসদকে নিয়ে এতই ‘সন্তুষ্ট’ এলাকার লোকজন যে, তাঁকে ওই কেন্দ্রে আর টিকিটই দিতে পারেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে সরিয়ে মুনমুন সেনকে পাঠিয়ে দিতে হয়েছে আসানসোলে। তৃণমূলের সেলিব্রিটি সাংসদের এই ‘সুনাম’ প্রতিপক্ষ বিজেপির সুবিধা করে দেবে বলে অনেকে মনে করেছিলেন। কিন্তু বিড়ম্বনা বেড়েছে প্রতিপক্ষের। রাজ্য বিজেপির একটি অংশের দাবি, লকেট চট্টোপাধ্যায় উৎসাহী ছিলেন বাঁকুড়া আসনটি নিয়ে। কিন্তু মুনমুনের কার্যকলাপই লকেটের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে।

২০১৪ সালেই আচমকা সক্রিয় রাজনীতিতে পা রেখেছিলেন মুনমুন সেন। ২০০৯ সালে রাজ্যজুড়ে বামবিরোধী হাওয়া থাকা সত্ত্বেও যে বাঁকুড়ায় জিততে পারেননি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো দুঁদে নেতা, ২০১৪ সালে সেই বাঁকুড়াতেই মুনমুন জিতে যান। কয়েক দশক ধরে বাঁকুড়ার দখল ধরে রাখা সিপিএম নেতা বাসুদেব আচারিয়াকে তিনি হারিয়ে দেওয়ায় মুনমুনকে ঘিরে প্রাথমিক ভাবে উচ্ছ্বাস ছিল তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই বদলেছে পরিস্থিতি।

পাঁচ বছরের মেয়াদে শ্রীমতী দেববর্মা ওরফে মুনমুন সেনকে কত বার দেখা গিয়েছে তাঁর নির্বাচনী ক্ষেত্রে? হিসেব করতে গিয়ে একটু অসুবিধায় পড়েন বাঁকুড়ার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। বাঁকুড়াবাসী ঠিক কোন কোন সমস্যায় মুনমুনকে পাশে পেয়েছেন? সাধারণ ভোটদাতাদের কথা দূরে থাক, বাঁকুড়ার তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে মুনমুন সেনের সরাসরি যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল কি? দলের হয়ে ক’টা রাজনৈতিক কর্মসূচির আয়োজন মুনমুন করেছেন? ক’টা কর্মসূচিতে তাঁকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছে? নিজের লোকসভা কেন্দ্রে কার বিপদে-আপদে মুনমুন সেনকে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছে? এই প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করেছিল তৃণমূলের অন্দরেই। সেই কারণেই যে দ্বিতীয় বার মুনমুনকে বাঁকুড়ায় প্রার্থী করার পথে হাঁটেনি দল, সে কথা স্পষ্ট করে বলা না হলেও রাজনৈতিক শিবিরের বুঝতে অসুবিধা হয়নি।

আরও পড়ুন: গৌতম দেবরা পথে নামলেও প্রার্থী খুঁজতে হিমশিম ঘিসিংরা আজ বৈঠকে

কিন্তু বিদায়ী তৃণমূল সাংসদ মুনমুন সেনের এই ‘সুনাম’ কী ভাবে সমস্যা তৈরি করছে বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সামনে? রাজ্য স্তরের এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘লকেট চট্টোপাধ্যায় এখন দলের সামনের সারির নেত্রী। ফলে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়েও নানা স্তরে চর্চা হয়েছে। সে সব চর্চায় এটুকু বোঝা গিয়েছিল যে, যদি লড়তেই হয়, তা হলে বাঁকুড়া আসন থেকে লড়তেই বেশি আগ্রহী উনি। কিন্তু তৃণমূলের একজন সেলিব্রিটি গত পাঁচ বছর বাঁকুড়ার সাংসদ হিসেবে যে কাজ দেখিয়েছেন, তাতে এ বছর আর কোনও সেলিব্রিটিকে বাঁকুড়ায় ভোট লড়তে পাঠানোর ঝুঁকি বিজেপি-ও নিতে চায় না। কারণ সেলিব্রিটি জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে বাঁকুড়ার মানুষের অভিজ্ঞতাটা এখন অত্যন্ত তিক্ত।’’

বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় নিজে কী বলছেন এ প্রসঙ্গে? বাঁকুড়া থেকে ভোটে লড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার কথা তিনি অস্বীকার করছেন। লকেট বলছেন, ‘‘দল আমাকে শিখিয়েছে, আগ বাড়িয়ে নিজের ইচ্ছা প্রকাশ না করতে। দল যখন যে দায়িত্ব দেবে, তখন সেটাই পালন করার জন্য প্রস্তুত থাকতে শিখিয়েছে। সুতরাং ভোটে দাঁড়াব, কি দাঁড়াব না, সেটাও দলই ঠিক করবে। এখনও আমি জানিই না যে, আমাকে ভোটে দাঁড়াতে হবে কি না। সুতরাং বাঁকুড়ায় দাঁড়াব বা অন্য কোথাও দাঁড়াব না, এ রকম বলার প্রশ্নই ওঠে না।’’

আরও পড়ুন: ‘শিল্পীরা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হলে তাঁদের বেশি ট্রোলড হতে হচ্ছে’

বিজেপি সূত্রের খবর, লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্যই প্রার্থী হচ্ছেন। বীরভূম আসনে শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে লড়ানো হতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে। যে হেতু ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার ময়ূরেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন লকেট এবং পরবর্তী কালেও যে হেতু বীরভূমের দলীয় সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থেকেছে তাঁর, সে হেতু এ বার বীরভূমেই তাঁকে প্রার্থী করা হতে পারে। খবর সে রকমই।

কিন্তু মহিলা মোর্চার অনেকেই বলছেন যে, লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুধু বীরভূমের যোগাযোগ বেশি, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য মহিলা মোর্চার শীর্ষপদ সামলাচ্ছেন লকেট এবং এই সময়টায় রাজ্যের সব প্রান্তেই তিনি সমান ভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন বলে তাঁদের দাবি। তবে লকেট চট্টোপাধ্যায় কোনও আসন নিয়েই নিজের পছন্দ-অপছন্দ জানাননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্ত দাবি করছে। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় এলাকায় যে হেতু লকেটের পৈতৃক ভিটে, সে হেতু বাঁকুড়ায় লকেটের প্রার্থী হওয়া নিয়ে একটা জল্পনা তৈরি হয়ে থাকতে বলে তাঁদের মত।

আরও পড়ুন: পরীক্ষা করে জানান সব ভিভিপ্যাট ঠিক আছে কিনা, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

শেষ পর্যন্ত কোথায় প্রার্থী হবেন মহিলা মোর্চার সবানেত্রী, সে উত্তর আর কয়েক দিনেই মিলবে। কিন্তু তার আগে লকেট বলছেন, ‘‘প্রার্থী হলাম বা প্রার্থী হলাম না— এটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমি যে শুধু সেলিব্রিটি পরিচয় নিয়ে রাজনীতি করছি না, আমি যে শুধু টিকিট নিতেই দলে ঢুকিনি, সেটা নিশ্চয়ই সবাই জানেন। দলের হয়ে আমি কী করতে পেরেছি, কী পারিনি, সেটা দলের নেতৃত্ব এবং কর্মীরা খুব ভাল ভাবেই জানেন বলে আমার মনে হয়। তাই আমার মূল্যায়ন নিয়ে দলের প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।’’

লকেট যে শুধু সেলিব্রিটি পরিচয় নিয়ে রাজনীতি করছেন না, গত চার-পাঁচ বছরে বেশ পরিশ্রমী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি যে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছেন, সে কথা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব তো মানেই। মানে অ-বিজেপি দলগুলোও। তাই মহিলা বিজেপি কর্মীদেরই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন— মুনমুন সেনের সঙ্গে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে গুলিয়ে ফেলা কি আদৌ ঠিক হবে?

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ BJP Congress Moon moon Sen Locket Chatterjee Bankura
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy