Advertisement
E-Paper

জন্ম-দৃষ্টিহীন, তবুও বুথে তিন ভাই

আনন্দ বিশ্বাস, ভক্ত বিশ্বাস ও পতিরাম বিশ্বাস। তিন সহোদর, তিন জনই জন্ম-দৃষ্টিহীন। ছোটবেলা থেকে তীব্র তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১১
বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিয়তি তাঁদের তিন জনকে দৃষ্টি-বঞ্চিত করেছে। আর তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন বা কোনও দলের সরকারই তাঁদের সেই আঁধার জীবনের চলার পথ সুগম করার চেষ্টা করেনি।

তা বলে নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা হোগলবেড়িয়ায় বালিয়াশিশা গ্রামের দৃষ্টিহীন তিন সহোদর অবশ্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা হারাননি। কোনও এক দিন সব কিছু বদলাবে এবং তাঁদের মতো প্রান্তিক, প্রতিবন্ধী মানুষদের কথা নির্বাচিত সরকারের মনে পড়বে এই আশা নিয়ে প্রত্যেক বার তাঁরা ভোট দেন, এ বারও দেবেন।

আনন্দ বিশ্বাস, ভক্ত বিশ্বাস ও পতিরাম বিশ্বাস। তিন সহোদর, তিন জনই জন্ম-দৃষ্টিহীন। ছোটবেলা থেকে তীব্র তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই। ভোট আসে, ভোট যায়, কিন্তু তাঁদের জীবনের কোনও উন্নতি হয় না বলে অভিযোগ। তাঁরাই জানান, পঞ্চায়েত ভোট হোক বা লোকসভা— জিতে যাওয়ার পরে কারও তাঁদের কথা মনে পড়ে না। আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য তাঁদের জোটেনি বলেও জানিয়েছেন তিন জন। আর এক ভাই আছেন তাঁদের, তিনি চক্ষুষ্মান, তবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন।

বড় ভাই আনন্দ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের দিন-আনা দিন-খাওয়া পরিবার হলেও বিপিএল তালিকায় নাম ওঠেনি। অথচ শুনি যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তাঁদেরও নাম ওই তালিকায় উঠে গিয়েছে। এখন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের তাগিদে ভোট দিই।” আগে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ভোট দিইয়ে আনতেন। এখন ব্যালট হোক বা ইভিএম— কোনও আত্মীয়কে নিয়ে বুথে গিয়ে তাঁরা ভোট দিয়ে আসেন।
মেজো ভাই ভক্ত বিশ্বাসের কথায়, “ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারের কত প্রকল্পের নাম শুনেছি। কিন্তু কোনও সরকার আমাদের কথা ভাবে না। আমাদের পরিবারে একশো দিনের কাজে দু’টি জব কার্ড থাকলেও আমাদের কাজ দেয় না কেউ। অথচ এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কাজ না-করেও একশো দিনের কাজের টাকা পেয়ে যাচ্ছেন।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সামান্য কয়েক বিঘা জমিতে চাষ করে তাঁদের বাবা উপেন বিশ্বাস সংসার চালাতেন। কাঁটাতারের বেড়ার পাশে সড়ক তৈরির জন্য তাঁদের জমি সরকার অধিগ্রহণ করে। ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকা দিয়ে উপেন তিন ছেলের জন্য দু’টি পাকা ঘর বানিয়ে দেন। এখন দৃষ্টিহীন তিন ভাই বিঘা চারেক জমিতে চাষ করে কোনও রকমে সংসার চালান। এক জন পাট কাটেন, এক জন পাট শুকোন আর এক জন গরুর ঘাস কাটেন। দৃষ্টিহীন সেজো ভাই পতিরাম বিশ্বাস বিয়ে করেছেন। তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে সকলেই চক্ষুষ্মান। যদিও তিন দৃষ্টিহীনের সংসারে প্রাণপাত করতে হয় পাতিরামের স্ত্রী বিশাখাকে।

‘অচ্ছে দিন’ অধরা। তবু আঁধার ভেদ করে স্বপ্ন দেখা আর থামে না।

স্বপ্ন দেখতে চর্মচক্ষু লাগে না যে!

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা ভোট ২০১৯ Karimpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy