রাজ্যের মাছ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি অতুল দাস জানাচ্ছেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই অবস্থা চলবে। কারণ, কলকাতা-সহ আশপাশের পাইকারি বাজারগুলিতে প্রতিদিন ৪০-৫০ টন করে ইলিশ মাছ ঢুকছে। তার দামও যথেষ্ট কম। ফলে, মাছ ব্যবসায়ীরও অন্য মাছ কেনার ঝুঁকি তেমন নিচ্ছেন না। পরিস্থিতি এমনই যে, কলকাতা-সহ আশপাশের ভেড়িগুলিতেও এখন জাল ফেলা কার্যত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ, মাছ উঠলেও বাজারে তা কেনার লোক যথেষ্ট কম বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ বছর বর্ষার শুরুতে ইলিশের প্রবল আকাল ছিল। আষাঢ়-শ্রাবণ দু’মাস বাজারে কার্যত ইলিশের দেখাই মেলেনি। হা-হুতাশ করে বাঙালি বাজারে থলি হাতে ঘুরেছে ইলিশের জন্য। আক্ষেপ করে অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছিল, এ বছর বোধহয় আর ইলিশ খাওয়াই হবে না।
ভাদ্রের শুরুতেই সেই ছবি আমূল বদলে গিয়েছে। দিঘা, কাকদ্বীপ, নামখানা, রায়দিঘি, ডায়মন্ড হারবার-সহ প্রতিটি জায়গায় এত ইলিশ ধরা পড়েছে যে, টন টন মাছ আসছে প্রতিটি বাজারে। মাছ আসছে ওড়িশার পারাদীপ থেকেও। ১৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে টাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দিন কুড়ি ধরে। ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ৩৫০-৪০০ টাকা কেজিতে প্রায় সব বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ফলে, ঘরে ঘরে এখন ইলিশের নানা পদ ছাড়া অন্য কোনও মাছের ঠাঁই নেই। বাধ্য হয়েই অনেক মাছ বিক্রেতা অন্য মাছ বিক্রি করা ছেড়ে ইলিশ নিয়ে বসছেন, নয়তো দোকান বন্ধ রাখছেন।
একই দাবি হাওড়ার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ আনোয়ার মকসুদের। শুধু হাওড়ার পাইকারি বাজারেই রোজ ১৫ টন করে ইলিশ আসছে। মকসুদ জানান, ইলিশের চাহিদাই সব থেকে বেশি। ফলে রুই, কাতলা, পাবদা, ট্যাংরা, পার্শের মতো মাছের জোগান কমেছে। খুচরো মাছ ব্যবসায়ীরাও পাইকারি বাজারে এসে ইলিশই কিনছেন। চাহিদা কমে যাওয়ায় অন্য মাছের দামও কেজিতে ৫০-১০০ টাকা কমে গিয়েছে বলে তাঁর দাবি।
মানিকতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রভাত দাসের কথায়, ‘‘ইলিশ পেলে বাঙালি আর কী চায় বলুন তো! খরা কাটিয়ে বন্যার জলের মতো রোজ ইলিশ ঢুকছে। খদ্দেরও খুশি। সস্তায় ইলিশ বেচে ব্যবসায়ীরাও পয়সার মুখ দেখছেন। বাঙালি না হয় ক’টা দিন রুই-কাতলা ভুলে ইলিশেই মজে থাক।’’