Advertisement
E-Paper

মাঝরাতে অভিযান, বিপুল অস্ত্র মিলল দার্জিলিং-কালিম্পঙে

এক সময়ে তিন দিক থেকে ঘিরেও ফেলা হয়েছিল তাঁকে। শেষে অল্পের জন্য পুলিশের হাত ফস্কে পালিয়ে গেলেন বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু তাঁর দলের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে প্রাণ হারালেন সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক (২৬)।

প্রতিভা গিরি ও বিশ্বরূপ বসাক

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:০৫
দার্জিলিঙে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

দার্জিলিঙে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার সবে অডিও বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, ৩০ অক্টোবরে প্রকাশ্যে আসবেন তিনি। সেই রাতেই সিকিম সীমানা ঘেঁষা লেপচাবস্তিতে তাঁর গোপন ডেরায় হানা দিল পুলিশ। এক সময়ে তিন দিক থেকে ঘিরেও ফেলা হয়েছিল তাঁকে। শেষে অল্পের জন্য পুলিশের হাত ফস্কে পালিয়ে গেলেন বিমল গুরুঙ্গ। কিন্তু তাঁর দলের সঙ্গে গুলিযুদ্ধে প্রাণ হারালেন সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক (২৬)। অন্য দিকে, গুরুঙ্গের এক সঙ্গীকে ধরতে পেরেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে বহু একে ৪৭ রাইফেল, কার্তুজ-সহ বিরাট অস্ত্র ভাণ্ডার।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, মাওবাদী ও উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যোগ রয়েছে গুরুঙ্গ এবং তাঁর সঙ্গীদের। নবান্নে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা বলেন, ‘‘ওদের কাছ থেকে গুরুঙ্গ অস্ত্র পাচ্ছেন।’’ গুরুঙ্গের যে সঙ্গীকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে তার নাম প্রকাশ করতে চাননি অনুজ বা দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী। সূত্রের খবর, ধৃতকে জেরা করে ও গুরুঙ্গপন্থীদের উপর চাপ বাড়িয়ে কালিম্পঙের পেডংয়ে আরও একটি অস্ত্র ভাণ্ডারের খোঁজ মেলে। পুলিশের উপরে হামলার ছক এবং নাকশতা চালাতেই প্রচুর পরিমাণে পাওয়ারজেল বিস্ফোরক ও ডিটোনেটর মজুত করা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। যে দুই মোর্চা নেতার বাড়ি থেকে এই অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাঁরা পলাতক। অনুজ বলেন, ‘‘পাহাড়কে আবার অশান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা হতে দেব না।’’

একই সঙ্গে গুরুঙ্গদের আর্থিক সাহায্য বন্ধ করতেও তৎপর প্রশাসন। এ দিনই চার ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি। যার মধ্যে দার্জিলিঙের দু’জন, কালিম্পং ও সিকিমের এক জন করে ব্যবসায়ী। গুরুঙ্গ ও রোশন গিরির একাধিক অ্যাকাউন্ট অবশ্য আগেই ফ্রিজ করা হয়েছিল।

গুরুঙ্গ যে কিছু দিন ধরে সিকিম লাগোয়া লেপচা বস্তির ধারে ছোট রঙ্গিত নদীখাতের শুকনো অংশে শিবির করে থাকছিলেন, সম্প্রতি সেই খবর আসে গোয়েন্দাদের কাছে। গোয়েন্দাদের আরও দাবি, গভীর জঙ্গলের ভিতরে জঙ্গি ক্যাম্পের মতো করে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই ছিলেন গুরুঙ্গ। মাসখানেক আগে তৈরি হওয়া এই ক্যাম্পে নিরাপত্তার কারণেই টানা থাকতেন না গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আসা অডিও বার্তাটির সূত্র ধরেই পুলিশ নিশ্চিত হয়, এ দিন ওই ক্যাম্পে রয়েছেন মোর্চা প্রধান।

ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার মাঝরাতের অভিযানে?

মাঝরাতে লিম্বু বস্তি এবং লেপচা বস্তি এলাকায় পুলিশের একটি দল অভিযান শুরু করে। পুলিশ দেখেই গুরুঙ্গের সঙ্গে থাকা দুষ্কৃতীরা গুলি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশও। খবর পৌঁছয় দার্জিলিং পুলিশের কন্ট্রোল রুমে। আধ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাম্পটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। তার আগেই এসআই অমিতাভ মালিক ও তাঁর গাড়ির চালক গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে জঙ্গলপথে এগোতে থাকে পুলিশের দল। এই পরিস্থিতি আন্দাজ করে গুরুঙ্গ পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কয়েক কিলোমিটার দৌড়ে গুরুঙ্গ রাজ্যের বাইরে চলে যান।

পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলি উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কাছ থেকেই পেয়েছেন গুরুঙ্গ এবং প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই ঘিরে রেখেছিল তাঁকে। তাদের সাহায্যেই দার্জিলিঙে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না।

(সহ প্রতিবেদন: অনির্বাণ রায়)

Darjeeling Kalimpong দার্জিলিং
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy