ব্যক্তিগত কাজে বীরভূমে এসেছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে নানুরের উঁচকরণ গ্রামে থেমেছিলেন। আর সেই গ্রামেরই কিছু বাসিন্দা ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে খুন করেছিল বর্ধমানের ওই যুবককে। ওই ঘটনায় চোদ্দো মাসের মাথায় মঙ্গলবার চার জনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। আজ, বুধবার দোষীদের সাজা ঘোষণা করবেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী।
সরকারি আইনজীবী তপনকুমার দাস বলেন, ‘‘২০১৫ সালের ২২ জুন দুপুরে নানুর থানার উঁচকরণ গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার ইচ্ছা বটগ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব দাসকে (৩০) গ্রামবাসীদের একাংশ মারধর করেন। গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ারদের বারণ সত্ত্বেও বাসুদেবকে রড ও লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। ওই দিন রাতেই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বাসুদেবের মাথা, বুক ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রড, লাঠির আঘাতের চিহ্ন মিলেছিল।’’
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, ঘটনার পরের দিনই গ্রামের চার বাসিন্দা সদাই বাগদি, মহাদেব বাগদি, মলয় বাগদি এবং মানিক বাগদির বিরুদ্ধে নানুর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তথা উঁচকরণ গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ার প্রলয় ভট্টাচার্য। অভিযুক্ত চার জনের বিরুদ্ধে বারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় (অনিচ্ছাকৃত খুন) মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, ঘটনার সময় উঁচকরণ গ্রামের দুই সিভিক ভলান্টিয়ার প্রলয় ভট্টাচার্য এবং বিদ্যুৎ বাগদি স্থানীয় হাইস্কুলের কাছে একটি দোকানে মিষ্টি খাচ্ছিলেন। হঠাৎ-ই তাঁরা দেখতে পান, গ্রামের ওই চার বাসিন্দা লাঠি ও রড নিয়ে এক যুবককে মারতে মারতে নিয়ে আসছেন। তাঁদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ওই মারঝর চলে। তখন দুই সিভিক ভলান্টিয়ার থানায় খবর দেন। তদন্তে উঠে এসেছে, এলাকায় অচেনা মুখ বাসুদেকে গ্রামে দেখে প্রথমে আটক করেন গ্রামবাসী। একসঙ্গে বহু লোকের জেরার চোটে হকচকিয়ে যান ওই যুবক। তখনই তাঁকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর শুরু করা হয়। ওই দুই সিভিক ভলান্টিয়ারের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়, ততক্ষণে আধমরা অবস্থা বাসুদেবের। তাঁকে উদ্ধার করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই মারা যান বাসুদেব।
পুলিশ বাসুদেবের পরিচয় জেনে বাড়িতে খবর দেয়। মর্গে এসে ছেলেকে শনাক্ত করেন বাসুদেবের বাবা গণপতি দাস। ঘটনার পরের দিনই সিভিল ভলান্টিয়ারদের কাছে লিখিত অভিযোগ পেয়ে চার অভিযুক্তের অন্যতম সদাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৭ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন বাকি তিন অভিযুক্ত। তপনবাবু এ দিন জানান, চার অভিযুক্ত এত দিনে জামিনে ছাড়া ছিল। গত ১৯ জুলাই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন হয়। ২৬ জুলাই থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত চলে সাক্ষ্যগ্রহণ। পুলিশ আগেই সদাই বাগদির বাড়ি থেকে মারধরে ব্যবহৃত লাঠি উদ্ধার করেছিল। মামলায় অভিযোগকারী সিভিক ভলান্টিয়ার, ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক, তদন্তকারী অফিসার-সহ মোট ন’জনের সাক্ষ্য নেয়।
তপনবাবু বলেন, ‘‘চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধেই সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণিত হওয়ায় এ দিন তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত।” আজ, কী সাজা ঘোষণা হয়, সে দিকেই তাকিয়ে মঙ্গলকোটের ইচ্ছা বটগ্রাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy