খুশিমনে। আলিপুর জেলের বাইরে়। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
তাঁকে জামিন দিতে গিয়ে শুক্রবার নিম্ন আদালত বলেছে, ‘এখন পরিস্থিতি বদলেছে। অভিযুক্ত (মদন মিত্র) আর মন্ত্রী বা বিধায়ক নন। উনি এখন সাধারণ মানুষ।’
আর তার পরেই সিবিআই প্রশ্ন তুলেছে, মদন মিত্র সাধারণ মানুষ হলে তাঁর জামিনের খবর পেয়ে শাসক দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন আদালতে গেলেন? কেন সেখানে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘মদনের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হয়েছে যে, ও প্রচারে (বিধানসভার ভোটে কামারহাটির প্রার্থী হিসাবে) যেতে পারেনি। তা সত্ত্বেও আমাদের দলনেত্রীর পাশে ছিল মদন। আর্ত মানুষের পাশে ছিল।’’ শনিবার মিউনিখ থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে তৃণমূলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা তথা কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কেন বললেন, ‘‘মদন মিত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে? অযথা কুড়ি মাস ধরে যে ভাবে ওঁকে (মদনকে) আটকে রাখা হয়েছিল, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছাড়া আর কিছু নয়।’’
সিবিআইয়ের বক্তব্য, শুক্রবার বিকেলের পর থেকে এই ঘটনা পরম্পরাই বলে দিচ্ছে, ক্ষমতাসীন মহলে এখনও কতটা প্রভাব রয়েছে সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন মিত্রের। ফলে তিনি জামিনে মুক্ত থাকলে তদন্তপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। আগামিকাল, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ইদের ছুটি। মঙ্গলবারও সেই উপলক্ষে আংশিক ছুটি থাকবে আদালত। সিবিআই সূত্রে বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে প্রথম সুযোগেই মদনের জামিন খারিজের আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হবে। সেখানে সওয়ালে পার্থবাবু ও শোভনবাবুর মন্তব্য তুলে ধরবেন সংস্থার আইনজীবী কে রাঘবচারিলু। এ দিন হায়দরাবাদ থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘ওই দুই মন্ত্রীর বক্তব্য, এক জনের আদালতে হাজির হওয়াই প্রমাণ করে মদন মিত্র শুধু এক জন ব্যক্তি নয়, প্রতিষ্ঠানেরও নাম।’’
‘প্রভাবশালী’ তত্ত্ব সামনে রেখে সিবিআই যে ফের আদালতের দ্বারস্থ হবে, তা বিলক্ষণ জানেন মদন এবং তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই শুক্রবার নিম্ন আদালত জামিন মঞ্জুর করার পর থেকেই তাঁরা সাবধানী। সে দিন সন্ধ্যায় উল্লাসরত মদন-অনুগামীদের সতর্ক করে পার্থবাবু বলেছেন, ‘‘অতি উৎসাহে ওঁর (মদনের) বিপদ ডেকে আনবেন না।’’ কিন্তু এ বার তাঁরাই কি প্রকারান্তরে মদনের ‘বিপদের কারণ’ হতে চলেছেন? তাঁর মন্তব্য মদনকে প্রভাবশালী বলে প্রমাণ করছে, সিবিআইয়ের এই যুক্তি শুনে পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রথমত আমি আদালতে মন্ত্রী হিসেবে যাইনি। দলের এক জন কর্মী হিসেবে গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়ত, আমি বা আমরা যার পাশে গিয়ে দাঁড়াব, সে-ই যদি প্রভাবশালী হয়ে যায়, তা হলে বলতে হবে সিবিআই ভুল ভাবছে। কারণ, আমরা সিঙ্গুরের চাষিদের পাশে গিয়েও দাঁড়িয়েছি। সিবিআই কি বলবে, ওই চাষিরা প্রভাবশালী?’’ আর শোভনবাবুর কথায়, ‘‘আমি কাউকে প্রভাবশালী বানানোর কে? মন্ত্রী, বিধায়ক, তৃণমূলের কর্মী ছাড়াও মদন মিত্র এ শহরের নাগরিক। আমি সেই শহরের মেয়র। তাই বলেছি।’’ মদন মিত্রের আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘মদন মিত্র এক জন পেশাদার রাজনীতিবিদ। একটি দলের সদস্য। সেই দলের কোনও নেতা বা কর্মী হিসেবে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কিছু বলতেই পারেন। তাতেই প্রমাণ হয় না, মদন মিত্র প্রভাবশালী।’’
মদনকে জামিন দিতে গিয়ে নিম্ন আদালত আরও বলেছে যে, গত দশ মাসে সিবিআইয়ের তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। গত বছর ২৮ ডিসেম্বরের পর থেকে প্রক্তন মন্ত্রীকে আর জেরাই করেনি তদন্তকারী সংস্থা। আদালতের এই পর্যবেক্ষণ মানতে নারাজ সিবিআইয়ের আইনজীবী। তাঁর বক্তব্য, যে কেস ডায়েরি দেখে বিচারকের মনে হয়েছে তদন্তে অগ্রগতি হয়নি, সেখানেই বলা আছে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পরে চার জন সাক্ষী সিবিআইয়ের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। বলা আছে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দেওয়ার কথা। রাঘবচারিলুর অভিযোগ, ২০১৫ সালের নভেম্বরে মদন মিত্রের জামিন বাতিল করে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, শুক্রবার রায় ঘোষণার আগে আলিপুরের নিম্ন আদালত তা ভাল করে পড়ে দেখেনি। মদনের আইনজীবীর আবার পাল্টা বক্তব্য, সিবিআইয়ের দাবিমতো তদন্তে অগ্রগতি হলে তা বিচারকের চোখ এড়িয়ে গেল কী করে?
যাঁকে নিয়ে এই টানাপড়েন, সেই মদন অবশ্য এ দিন আদালতের রায়, সিবিআইয়ের দাবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে’ তাঁর সতর্ক মন্তব্য, ‘‘যা বলার, বলবেন আমার আইনজীবী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy