Advertisement
E-Paper

জামিনে কাঁটা সরাতে জেলে ফেরার ভাবনা

বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল। এ বার খোদ হাইকোর্টও ‘রহস্য’টা জানতে চেয়েছে। যার জেরে বন্দিদশার ঠিকানা বদলানোর কথা ভাবছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। হাসপাতাল ছেড়ে তিনি ফের জেলে ফিরতে পারেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০৪:১১

বিভিন্ন মহল থেকে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছিল। এ বার খোদ হাইকোর্টও ‘রহস্য’টা জানতে চেয়েছে। যার জেরে বন্দিদশার ঠিকানা বদলানোর কথা ভাবছেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। হাসপাতাল ছেড়ে তিনি ফের জেলে ফিরতে পারেন।

সারদা-কেলেঙ্কারিতে ধৃত পরিবহণমন্ত্রী এত দিন ধরে কেন হাসপাতালে রয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন-মামলার শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে সেটা জানতে চেয়েছিলেন। দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা জাঁদরেল আইনজীবী কপিল সিব্বল সে দিন মদনের হয়ে সওয়াল করলেও বিচারপতি মাত্রে ও বিচারপতি আশা অরোরার ডিভিশন বেঞ্চে জামিন-আর্জি খারিজ হয়ে যায়। আর তার পরেই আইনজীবীদের পরামর্শ মেনে মন্ত্রী জেলে ফেরার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন বলে হাসপাতাল-সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি ও শরীরের গতিক ঠিকঠাক থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি এসএসকেএমের রোগশয্যা ছেড়ে জেলে ফিরে যেতে পারেন।

মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের তরফে কেউ অবশ্য এ প্রসঙ্গে পরিষ্কার কিছু বলতে রাজি হননি। ‘‘দাদা এখনও অসুস্থ। এখনই তাই ওঁর জেলে ফেরার প্রশ্ন নেই।’’— মন্তব্য মদনের ঘনিষ্ঠ এক তৃণমূল নেতার। তবে এখনই না-হলেও অদূর ভবিষ্যতে যে তেমন একটা সম্ভাবনা রয়েছে, সে ইঙ্গিত তিনিও দিচ্ছেন। বলছেন, ‘‘শরীর ভাল থাকলে উনি ক’দিন বাদে জেলে ফিরলেও ফিরতে পারেন।’’

সারদা-কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মদন সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন গত বছরের ১২ ডিসেম্বর। কয়েক দিন পুলিশ হেফাজতে রেখে তাঁকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর জন্য আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের ‘মন্দির ওয়ার্ড’ নির্দিষ্ট হয়। মন্ত্রীর সুবিধার কথা মাথায় রেখে সেখানে তাঁর শোওয়ার জায়গা পর্দায় ঘেরা হয়, শৌচাগারে বসে কমোড। দিন পনেরো জেলে কাটিয়ে মদনবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই দফায় সপ্তাহ দুয়েক হাসপাতালে কাটিয়ে মদনবাবু জেলে ফিরে আসেন।

তবে বেশি দিন থাকেননি। আবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে মদনকে ফের এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল। সেই ইস্তক টানা প্রায় ছ’মাস রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি সরকারি হাসপাতালটির ‘অভিজাত’ উডবার্ন ওয়ার্ডই হল বন্দি মন্ত্রীর ঠিকানা। মাঝে শুধু এক বার কেবিন নম্বর বদলেছে। প্রথম চার মাস মদন ছিলেন উডবার্নের ২০ নম্বর কেবিনে। গত মাসখানেক যাবৎ তাঁকে রাখা হয়েছে সাড়ে ১২ নম্বরে। চিকিৎসার যাবতীয় বন্দোবস্ত তো বটেই, কয়েদি মন্ত্রীর যথোপযুক্ত ‘খাতিরদারি’তেও হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ ত্রুটি রাখেননি। যা নিয়ে বারবার অভিযোগও উঠেছে।

তবে হাসপাতালবাসের এই ধারাবাহিকতায় মদন নিজেই এখন দাঁড়ি টানতে চাইছেন। ঘনিষ্ঠ মহলের খবর: মন্ত্রীর আইনজীবীরাই তাঁকে এই মর্মে পরামর্শ দিয়েছেন। কেন?

আইনজীবীরা মদনবাবুকে বলেছেন, মূলত দু’টো কারণে আদালতে তাঁর জামিন আটকে যাচ্ছে। একটা কারণ, সারদা-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার পরেও মদন মিত্র এখনও রাজ্যের মন্ত্রী। যার সুবাদে সিবিআই সহজেই তাঁর গায়ে ‘প্রভাবশালী’র তকমা লাগিয়ে দিতে পারছে। অন্য কারণটি অবশ্যই মাসের পর মাস হাসপাতালে থাকা।

বস্তুত এই বিষয়টি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার খোদ হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মদনপক্ষকে। সে দিন মন্ত্রীর জামিন-মামলার সওয়াল-জবাবের মাঝখানে বিচারপতি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘ছ’মাস ধরে উনি (মদন মিত্র) হাসপাতালে রয়েছেন! সাধারণত কঠিন কোনও রোগ হলে এত দিন কেউ হাসপাতালে থাকেন! ওঁর কী হয়েছে?’’ মদনের তরফে উত্তর না-এলেও সিবিআইয়ের কৌঁসুলি কে রাঘবচারুলু মন্তব্য করেন, ‘‘কেউ জানে না। রহস্যজনক রোগে আক্রান্ত!’’

এমতাবস্থায় এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ ৪ অগস্ট মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট দিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চের সামনে সেটি পেশ করেছিলেন মদনের কৌঁসুলি সিব্বল। কিন্তু আইনজীবী মহলের অভিমত, তাতে মন্ত্রীর মাসের পর মাস হাসপাতালবাসের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ‘‘বরং আদালত মনে করেছে, মদন মিত্র প্রভাব খাটিয়েই জেল এড়িয়ে হাসপাতালে থানা গেড়েছেন।’’— মন্তব্য মদন-ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবীর। ওঁদের পর্যবেক্ষণ: মদন এ বার জেলে ফেরত গেলে তাঁর সম্পর্কে বিচারপতিদের ধারণা খানিকটা হয়তো পাল্টাবে। তাতে জামিনপ্রাপ্তির রাস্তা কিছুটা সুগম হওয়ার আশা।

অতএব, তেমনই চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ দিকে এসএসকেএমের অন্দরের খবর: মদনবাবু শনিবার রাত থেকে জ্বরে কাবু হয়ে পড়েছেন। রবিবার সকালেও তাঁর ১০৩ ডিগ্রি জ্বর ছিল, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। এই অবস্থায় ডাক্তারেরা ওঁকে তড়িঘড়ি জেলে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তবে মন্ত্রী সুস্থ হলেই তার তোড়জোড় শুরু হতে পারে বলে হাসপাতাল-সূত্রে আভাস মিলেছে। জেল-কর্তারা কী বলছেন?

মন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কে কারা দফতরের কেউমুখ খোলেননি। এক কারা-কর্তা শুধু বলেন, ‘‘হাসপাতাল যদি জানিয়ে দেয় মদন মিত্র সুস্থ, আমরা ওঁকে জেলে আনার ব্যবস্থা করব।’’ কর্তাটির দাবি, জেল-হাসপাতালে কোনও বন্দির সুচিকিৎসা সম্ভব না-হলেই তাঁকে বাইরের হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরিবহণমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।

এবং জেলে ফিরলে আলিপুরের সেই ‘মন্দির ওয়ার্ড’ই হবে মদন মিত্রের পরবর্তী ঠিকানা। অন্তত প্রাথমিক ভাবে তেমনই স্থির রয়েছে।

madan mitra jail madan mitra alipur jail madan mitra bail madan mitra desperate madan imprisonment abpnewsletters MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy