E-Paper

ঘরে ফেরার হাহাকার পাহাড় থেকে ডুয়ার্সে

জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধূপগুড়ির হোগলাপাতা এলাকা। অন্তত ২৫টি পরিবার গত রবিবার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বেতগাড়ায় দু’টি রেললাইনের মাঝে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:১৪
বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঘর-বাড়ি। রেললাইনের মাঝে আশ্রয় নিয়েছেন ধূপগুড়ির বগড়িবাড়ির বহু পরিবার।

বন্যা কেড়ে নিয়েছে ঘর-বাড়ি। রেললাইনের মাঝে আশ্রয় নিয়েছেন ধূপগুড়ির বগড়িবাড়ির বহু পরিবার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

ট্রেনের বাঁশি শুনলেই জনা কয়েক ছুটে যান রেললাইনের পাশে। কেউ উঠে আসেনি তো লাইনে! কেউ ঘুমিয়ে পড়েনি তো লাইনের পাশে! খুদের দল খেলতে খেলতে চলে আসেনি তো লাইনে!

দিন ছয়েক এমনই উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে ধূপগুড়িতে দুই রেললাইনের মাঝে আশ্রয় নেওয়া বন্যায় ঘরহারাদের। ডুয়ার্স থেকে পাহাড়, ত্রিপলে, উঁচু বাঁধে দিন কাটছে বহু মানুষের। সকলেরই প্রশ্ন, ‘‘আবার কবে ছাদ কবে পাব?’’

দুর্যোগে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গে নতুন করে দেহও মিলছে। নাগরাকাটার বামনডাঙার টন্ডু এলাকা থেকে শুক্রবার সকালে নিখোঁজ একটি পচা-গলা দেহ মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দেহটি তামিশা খাতুন ওরফে আমিশা (৬৫)-র। গত রবিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই বৃদ্ধা। সরকারি ভাবে এখন বামনডাঙায় নিখোঁজ রইল শুধু এক শিশু।

জলঢাকা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ধূপগুড়ির হোগলাপাতা এলাকা। অন্তত ২৫টি পরিবার গত রবিবার থেকে আশ্রয় নিয়েছে বেতগাড়ায় দু’টি রেললাইনের মাঝে। দু’টি লাইনের মাঝে ৮০ ফুট মতো দূরত্ব। একটি লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য লাইনেও ধীর গতিতে যাচ্ছে রাজধানী থেকে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস। ঘরহারা ফুলমালা ভৌমিক বললেন, “খাবারের অভাব নেই। তবে মাথা গোঁজার জায়গা প্রশাসন দেখুক। রেললাইনের পাশে কত দিন থাকব!’’ সঙ্কটে পড়ুয়ারাও। নতুন বই পেয়েছে, কিন্তু পড়ার ঘর নেই, টেবিল নেই। এ দিকে, কালীপুজোর পরে স্কুল খুলবে, তার মাসখানেক পরেই বার্ষিক পরীক্ষা। গধেয়ারকুঠি হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র কল্যাণ রায় বলে, “যতটা পারছি, পড়ছি। তবে পাশ দিয়ে ট্রেন গেলে ভয় করে।“

বামনডাঙারই টন্ডু বস্তির আসিলা ওঁরাও চা বাগানের অস্থায়ী কর্মী। তিনি বলেন, “দিনে ত্রিপলের তলায় থাকি। মেয়েমানুষ। রাতটা তাই আশেপাশে যাদের বাড়ি ততটা ভাঙেনি, সেখানে কাটাই।” কারও দিন কাটছে হাসপাতালে। যেমন, আশ্রিয়া তাঁতি জলের তোড়ে ভেসে আহত হয়ে হাসপাতাল এসেছেন। আর যেতে চাইছেন না। আশ্রিয়া বলছেন, “বাড়িঘর নেই। হাসপাতালেই ভাল আছি।” বামনডাঙা চা বাগানের এই হাসপাতালে কর্মী বাড়ানো হয়েছে, নানা চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছে। বিএমওএইচ, নাগরাকাটা মোল্লা ইরফান হোসেন বলেন, “দিনে-রাতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতালে থাকছেন।“

পাহাড়ের দুর্গতরা আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। পুলবাজার থানালাইন, মিরিক, সুখিয়াপোখরির রাস্তা এখনও পরিষ্কার করা যায়নি। এ দিন পুলবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পরিদর্শন করেন প্রশাসনের আধিকারিকেরা। বাসিন্দারা দ্রুত সংযোগকারী রাস্তা গড়ার দাবি জানান। বহু এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা ফাঁকা কলে মুখ লাগিয়ে, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ফোন করার ঢঙে ‘রিল’ পোস্ট করেছেন। মিরিক, বিজনবাড়ি, সুখিয়াপোখরির ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই নেওয়া শতাধিক দুর্গত এখন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়।

দুর্গতদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ ও বিলির কাজও চলছে। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাহাড়-ডুয়ার্সে ত্রাণ বিলি করছেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী দুর্গতদের ঘর করে দিতে, নথিপত্র বানিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।” এ দিন মিরিকের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, দলের রাজ্য কমিটির সদস্য গৌতম ঘোষ।ত্রাণ শিবিরেও যান তাঁরা।

এ দিন কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ে ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার-সহ বিজেপি নেতৃত্ব। সুকান্তের প্রশ্ন, “মানুষ বলছেন ত্রাণ পাননি। ত্রাণটা যাচ্ছে কোথায়? গত পাঁচ অর্থবর্ষে এসডিআরএফের জন্য কেন্দ্র যে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়েছিল, তা-ই বা কোথায় খরচ হল!”তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা, “বিজেপি, ত্রাণ সংগ্রহের নাটক কেন? কেন্দ্র বাংলার প্রাপ্য টাকাটা দিয়ে দিলেই হয়।” ত্রাণ নিয়ে রাজ্যকে নিশানা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, “পুরসভা এবং পঞ্চায়েতের যে ভূমিকা দরকার ছিল, তা দেখা যাচ্ছে না।” উত্তরবঙ্গের পরিবেশ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবিতুলেছেন সেলিম।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Darjeeling Disaster

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy