প্রতীকী ছবি।
যথেচ্ছ ব্যবহারে অকেজো হয়ে পড়েছে ম্যালেরিয়ার মোক্ষম দাওয়াই। এই সে দিনও ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া হলে অব্যর্থ ওষুধ ছিল ক্লোরোকুইন। কলকাতা শহরে সেই ওষুধ কৌলিন্য হারিয়েছে। কলকাতা পুরসভার এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, মহানগরে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ায় (ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া) আক্রান্তদের ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রেই এখন আর ক্লোরোকুইন কাজ করে না। সে কারণে রক্ত পরীক্ষায় প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ধরা পড়লে সেই রোগীকে আর ক্লোরোকুইন দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুরসভা।
ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী জানাচ্ছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি থেকে এই ক্লোরোকুইন বিপত্তির শুরু। এখন তা এ দেশেও বিপদ ডেকে আনছে। ক্লোরোকুইন ব্যবহার না করে অন্য শক্তিশালী ওষুধ যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার করার ফলে এবং ক্লোরোকুইনের নির্দিষ্ট ডোজ শেষ না করার ফলেই এই বিপদ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন পরজীবী বিজ্ঞানীরা। তবে ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ক্লোরোকুইনই এখনও ‘চোখ বুজে ভরসা করা যায়,’ দাবি অমিতাভবাবুর।
তা হলে কারও রক্তে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার জীবাণু তথা এককোষী পরজীবী প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম মিললে কী ভাবে চিকিৎসা হবে?
কলকাতা পুরসভা নিজেদের করা সমীক্ষার রিপোর্টের কথা জানিয়ে এ ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কাছে। সেই সূত্রেই স্বাস্থ্য মন্ত্রক নতুন দাওয়াই সুপারিশ করেছে। সেই মতো আর্টিমিসিনিন-ভিত্তিক নতুন ওষুধ এসিটি (আর্টিমিসিনিন-বেসড কম্বিনেশন থেরাপি) দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এসিটি-ই এখন গোটা বিশ্বে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়ার সব থেকে নির্ভরযোগ্য ওষুধ বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)।
কিন্তু কোনও প্রচলিত ওষুধ যে ম্যালেরিয়ায় কাজ করছে না, তা বোঝা যাবে কী করে?
পরজীবী বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যদি ওষুধের ডোজ শেষ হওয়ার পরেও রোগীর রক্তের নমুনায় জীবাণুর সংখ্যা দ্রুত না কমে, তা হলে বুঝতে হবে ওষুধটি আর কাজ করতে পারছে না। তাই ওষুধ শুরু হওয়ার পরে বার বার রক্তের নমুনা পরীক্ষার উপরে জোর দেন চিকিৎসকেরা।
পরজীবী বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধু ক্লোরোকুইন-ই নয়, মেফলোকুইনের মতো শক্তিশালী ওষুধও এখন আর ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে কাজ করছে না। তাঁরা বলছেন, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়েই রোগী নিয়ম মেনে ওষুধ খান না। আর এর ফলেই নির্ভরযোগ্য ওষুধও আর পরবর্তী কালে কাজ করে না।
কারণ, যিনি নিয়ম মেনে ওষুধ খাননি তাঁর শরীরে ম্যালেরিয়ার কিছু জীবাণু মরলেও, বাকিদের মধ্যে ওই ওষুধ হজম করার ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। সেই জীবাণু যখন মশার মাধ্যমে অন্য কারও রক্তে সংক্রামিত হয়, সেই নয়া রোগীর ক্ষেত্রে আর পুরনো ওষুধ কাজ করে না। ওই জীবাণুর পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ওই ওষুধ প্রতিরোধী ধর্মটি বাহিত হয়। অনেক সময় নিম্ন মানের ওষুধও একই ভাবে বিপদ বাড়ায় বলে জানাচ্ছেন পরজীবী বিজ্ঞানীরা।
তবে অমিতাভবাবুর মতো অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের আশঙ্কা, যে ভাবে অনেক চিকিৎসক এখন ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও এসিটি প্রয়োগ করছেন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও ক্লোরোকুইন নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy