E-Paper

তৃণমূল ভবনে সরব সাজনুর, ‘সাজানো’ বলছে বিজেপি

দু’দিন আগে এক্স হ্যান্ড্‌লে দিল্লিতে একটি বাঙালি পরিবারের উপরে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৫ ১০:১৭
তৃণমূল ভবনে দিল্লিতে হেনস্থার শিকার সাজনুর (মাঝে)।

তৃণমূল ভবনে দিল্লিতে হেনস্থার শিকার সাজনুর (মাঝে)। কলকাতায়। নিজস্ব চিত্র।

বাঙালি হেনস্থা ও নাগরিকত্ব নিয়ে চাপানউতোরে চড়া রাজনৈতিক রং লাগল।

দিল্লিতে বাংলাভাষীদের উপরে নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে চাঁচলের পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকে ঘিরে টানাপড়েন চলছিলই। এ বার তাঁদের কলকাতায় হাজির করে, তাঁদের সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য দিকে, এই অভিযোগকে তৃণমূলের তৈরি ‘দুর্বল চিত্রনাট্য’ বলে পাল্টা দাবি করেছে বিজেপি। দলীয় দফতরে অভিযোগকারীদের পাশে বসিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ করেছেন, বিজেপি বাংলা ও বাঙালির বিরোধী হওয়ার কারণেই বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচার চলছে। বিজেপির দাবি, অভিযোগকারীর পরিবারের সদস্যেরা তৃণমূলের সমর্থক। সেই কারণেই তাঁদের দিয়ে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ করানো হচ্ছে।

দু’দিন আগে এক্স হ্যান্ড্‌লে দিল্লিতে একটি বাঙালি পরিবারের উপরে পুলিশি অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং অভিযোগের সমর্থনে একটি ভিডিয়োও পোস্ট করেছিলেন তিনি। সেই ভিডিয়োতে ( আনন্দবাজার তা যাচাই করেনি) মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা মুক্তার খানের পরিবারের তরফে পুলিশি অত্যাচারের কথা বলা হয়েছিল। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ওই পরিবারের শিশু ও মহিলারাও নিগ্রহ থেকে রেহাই পাননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ সামনে আসার পরে গোটা অভিযোগ খণ্ডন করেছিল দিল্লি পুলিশ। পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। মুখ্যমন্ত্রীর নামে দিল্লি পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেন কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী।

কলকাতায় এসে এ দিন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পাশে বসে দিল্লির ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক বৈঠক করেন অভিযোগকারী মুক্তার খানের স্ত্রী সাজনুর বিবি। দিল্লিতে নিগ্রহের বিবরণ দিতে গিয়ে সাজনুর বলেন, ‘‘মহিলা-সহ চার জন সাদা পোশাকে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। তাঁরা আধার কার্ড দেখতে চান। ওঁরা বলেন, আমরা বাংলাদেশি।’’ সাজনুরের অভিযোগ, ‘‘আমাকে চড় মারেন। ছেলেকে ধরে টানাটানি করলে ছেলে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, পুলিশকর্মীরা ‘জয় শ্রীরাম’ বলতেও চাপ দেন। সাজনুর বলেন, তাঁরা মুসলিম, ‘তাই জয় শ্রীরাম’ বলতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন। শেষে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন মহিলা।

সাজনুরের অভিযোগ অবশ্য ‘সাজানো’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সাজনুরের সাংবাদিক বৈঠকের পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এ সব নাটক না-করে যে ৪০ লক্ষ মানুষ বাংলার বাইরে কাজ করেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনুন না। যে মহিলা বলছেন, তিনি একা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, একা বাড়িতে ফিরেছেন, দিল্লি পুলিশ সেই ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে। ওই মহিলার স্বামীর ফোন কলের রেকর্ডিং আছে। যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন, সেই বাড়িওয়ালার বয়ান নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের মালদহের এক নেতা, তিনি তাঁদের আত্মীয়দের ব্যবহার করে এই ভিডিয়ো বানিয়েছেন। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকা উচিত! কাউকে দিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে যা খুশি বলিয়ে নেওয়া যায়!’’ খানাকুলে ‘কন্যা সুরক্ষা যাত্রা’ করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে দেখছি রবীন্দ্রনাথের ছবি নিয়ে ঘুরে বলছেন, এখানে কোনও পরিযায়ী শ্রমিকের উপরে আক্রমণ হয়নি। আমি বলছি, দেশের কোথাও তা হয়নি।’’ সাংবাদিক সম্মেলনের দৃশ্য ব্যবহার করে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়েরও অভিযোগ, মালদহের ওই পরিবারকে ‘শিখিয়ে পড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছে।

দিল্লি থেকে এ দিনই কলকাতায় ফিরেছে অভিযোগকারী পরিবারটি। তবে মালদহে না-গিয়ে তৃণমূল সাংসদ মৌসম নূরের সঙ্গে তাঁরা আসেন তৃণমূল ভবনে। সেখানেই তাঁকে পাশে বসিয়ে ফিরহাদ ও কুণালও বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙালি নির্যাতনের অভিযোগ করেন। দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন মুক্তার- সাজনুরেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Malda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy